এম.মনছুর আলম, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়ায় শিউলী রাণী শীল নামের এক নারীর বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে পিতা-মাতা ও সহোদরের বিরুদ্ধে প্রবাসী স্বামীর এক কোটি ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগে ভুক্তভোগী তার স্ত্রী ও শ্বশুরদের বিরুদ্ধে থানায় ৬ জনকে আসামী করে একটি অভিযোগ দায়ের করছেন। শনিবার প্রবাসী সজল কান্তি শর্মা বাদী হয়ে অভিযোগ করে। তিনি উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মগছড়া জুম নাথ পাড়া এলাকার মৃত শ্রীধাম রায় শর্মা’র ছেলে।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, ,বিগত ২০১১ সালে ২১ নভেম্বর তারিখ উপজেলার উপকূলীয় বদরখালী ইউনিয়নের শহরিয়া পাড়ার (শীল পাড়া) এলাকার বাবুল চন্দ্র শীলের কন্যা শিউলী রাণী শীলের সাথে একই উপজেলার ডুলাহাজারাস্থ মগছড়া জুম নাথ পাড়া এলাকার মৃত শ্রীধাম রায় শর্মা’র ছেলে সজল কান্তি শর্মা’র সহিত সনাতন ধর্মের বিধান মোতাবেক সামাজিক ভাবে তাদের বিবাহ হয়। বিবাহের পর থেকে শিউলীর স্বামী সজল কান্তি শর্মা পরিবারের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করার তাগিদে সৌদি আরব চলে যান। বর্তমানে তাদের সংসারে ৭ বছরের মিথিলা শর্মা পূজা নামের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার পর থেকে প্রবাসী সজল তাদের সুখের সংসারের জন্য সৌদি আরবের আয়ের সম্পূর্ণ টাকা প্রতি মাসে তার স্ত্রী শিউলী নিকট প্রেরণ করতো।
শিউলীর প্রবাসী স্বামী সজলের টাকার প্রতি লোভে আসক্ত হয়ে স্ত্রীর বাবা-মা ও সহোদর স্বচ্ছল করার অজুহাতে বিশ্বাস জন্মায়। এমনকি তার পাঠানো টাকা দিয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে প্রবাসী সজলের নামে শ্বশুর বাড়ির এলাকায় তার নামে জায়গা-জমি, বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির সভ্যপদ ক্রয় করে দেয়া, সভ্যপদ নিয়া দোকান, জমি তার নামে করে দেবে বলেও বিশ্বাস জন্মানো হয়। শ্বশুর বাড়ির লোকজন ও স্ত্রীর কথায় সরল মনে বিশ্বাস স্থাপন করে সজলের নামে বদরখালী শহরিয়া পাড়া এলাকায় ৯লাখ টাকা মূল্যের ২০শতক জমি, বদরখালী বাজারে ৭লাখ টাকা মূল্যের ২টি দোকান ও বাজারে ৫লাখ টাকা মূল্যের সেলুনের দোকান ব্যবসা উপযোগী করেছে বলে জানায়। এমনকি তার স্ত্রী শিউলীর নামে চকরিয়া এন.সি.সি ব্যাংকে ১৫লক্ষ টাকার একটি ডিপিএস করেছে বলেও দাবী করেন। এছাড়াও তার শ্বশুরের নামে ১৬লক্ষ টাকা খরচ করে বদরখালী সমিতির সভ্যপদ ক্রয় ও বদরখালী ফুলতলা ষ্টেশনে ১৬লক্ষ টাকা মূল্যের ২০শতক জমি প্রবাসী সজলের নামে খরিদ এবং তার শ্বাশুড়ির নামে মগছড়া জুম এলাকায় ২লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ১০শতক জমি, বাড়ির বিভিন্ন খরচ ও ভরণ-পোষণ, চিকিৎসা বাবদে ২০লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে বলে স্বামী সজলকে দাবী করেছেন স্ত্রী শিউলী রাণী শীল।
প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী প্রবাসী সজল কান্তি শর্মা বলেন, আমার স্ত্রী শিউলী ও তার পিতা-মাতার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে তিনি ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরব থেকে দফায় দফায় ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রেরণ করেছি। গত চার মাস পূর্বে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে স্ত্রী শিউলীর কাছে নিজের পাঠানো টাকার হিসাব চাইলে, গচ্ছিত টাকা ফেরত ও হিসাব দেয়ার ক্ষেত্রে সে টালবাহানা শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে পারিবারিকভাবে একাধিকবার আলোচনা হলেও নানা অজুহাতে সে সময় ক্ষেপণ করেন। সর্বশেষ স্ত্রী শিউলী তার পিতা-মাতা ও সহোদরের যোগসাজস করে উল্টো গত ২১ আগস্ট তারিখে কক্সবাজার নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে স্ত্রী কর্তৃক আমাকে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষনা পত্র এফিডেভিট করে আমাকে রেজি: যোগে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষনা পত্র সম্পাদন করেন। যাহা সনাতন ধর্মের বিধি বিধান বর্হিভূত।
তিনি আরও বলেন, তার প্রবাস জিবনের কষ্টার্জিত টাকা ফেরত দিতে স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে কয়েকবার তাগাদা দিলে তারা অস্বীকার করেন। তাছাড়া আমার টাকা দিয়ে বিপুল সম্পদ ক্রয় করা ফেরত দিতে দাবী করলে উল্টো আমার বিরুদ্ধেও যৌতুক ও নারী নির্যাতনসহ একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানী করার হুমকি দেয়। এ নিয়ে ভুক্তভোগী সজল প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.হাবিবুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন প্রবাসী স্বামীর সাথে প্রতারণার বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তেরর জন্য থানার একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পেলে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
পাঠকের মতামত: