ঢাকা,মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় প্যারাবন উজাড় করে চিংড়িঘের, ঘটনাস্থল পরিদর্শন এসিল্যান্ডের

বদরখালীতে ২৮ মৎস্যজীবীর ৪২ একর জমি দখলের চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় বিলুপ্ত সুন্দরবন এলাকায় প্যারাবন নিধন করে চিংড়িঘের তৈরির কাজ অব্যাহত রেখেছে ভূমিদস্যুচক্র। বর্তমানে কোন ধরণের বাধা ছাড়াই প্যারাবন উজাড়ের পর এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ঘের তৈরি করা হলেও প্রশাসনিক কোন তৎপরতা নেই। এই অবস্থায় ভূমিদস্যুরা অনেকটা নির্বিঘ্নেই তাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে এখনো।
অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান না চালানোর কারণে বীরদর্পে চকরিয়া উপকূলজুড়ে প্যারাবন নিধন করে চিংড়িঘের তৈরির এ মহোৎসব চলছে। অরক্ষিত উপকূলে জবর-দখল রোধ ছাড়াও নানা ধরণের অপরাধ প্রবণতা রুখতে যোগাযোগ ব্যবস্থা অন্যতম। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুকতার সুযোগ নিয়ে স্থানীয় একাধিক সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যু চক্র চকরিয়ার বদরখালী উপকূলের সাগর চ্যানেল এলাকাটি বর্তমানে দখলে নিয়েছে। সেখানে তারা নির্বিচারে প্যারাবনের লাখ লাখ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে জায়গার আয়তন বাড়ানোর পাশাপাশি এস্কেভেটর দিয়ে মাটি উত্তোলন করে অবৈধভাবে চিংড়িঘের তৈরি করছে। সমপ্রতি একটি চক্র ওই এলাকার ৪০ বছরের দখলীয় ২৮ মৎস্যজীবী পরিবারের একটি চিংড়িঘের দখলের পাঁয়তারাও শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী ২৮ মৎস্যজীবী পরিবার সদস্যদের দাবি, বর্তমানে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র প্যারাবন নিধনে নতুন ঘের তৈরির পাশাপাশি তাদের (২৮ পরিবারের) নামে সরকার থেকে লিজ প্রাপ্ত ৪২ একর চিংড়িঘেরও দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ভুক্তভোগী মৎস্যজীবী পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আছেন বদরখালী ইউনিয়নের আবু আহমদের ছেলে নাছির উদ্দিন, সোলতান আহমদের ছেলে সোহেল উদ্দিন, মৃত নুরুল হুদার ছেলে মো. শাহজাহান, ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের আহমদ হোছনের ছেলে মনির উদ্দিন, উপজেলা সদর চিরিঙ্গার গোলাম ছোবহানের ছেলে মফিজুর রহমান, গোলাম রহমানের ছেলে এনামুল হক, বদরখালীর দিল সামাদের ছেলে ফোরকান, ইলিশিয়ার মো. সাইফুল্লাহর ছেলে আরমান উল্লাহ ও আব্দুল মজিদের ছেলে আবদুল হকসহ মোট ২৮ পরিবার।
ভুক্তভোগীরা দাবি করেন, ২৮ মৎস্যজীবী পরিবারের নামে সরকার থেকে ৪২ একর চিংড়িঘের জমির বিপরীতে লিজ রয়েছে। ওই জমিতে ৪০ বছর যাবত ভোগদখলে থেকে চিংড়ি চাষ করে আসছে তারা। কিন্তু স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র উপকূলের বিস্তীর্ণ প্যারাবন নিধনের পর নতুন ঘের তৈরির পাশাপাশি তাদের জমি দখলের চেষ্টা করছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য নাছির উদ্দিন চকরিয়া নিউজকে জানিয়েছেন, উপকূলে নির্বিচারে প্যারাবন নিধন ও তাদের চিংড়িঘের দখল চেষ্টার ঘটনায় ইতোমধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে।
অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৭ মার্চ চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাতের নেতৃত্বে ভূমি কর্মকর্তারা সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ বিষয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। প্যারাবন নিধন ও চিংড়িঘের তৈরির ঘটনায় যারা জড়িত রয়েছে তাদের ব্যাপারেও তথ্য নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: