ঢাকা,শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

পরিবেশ বিধ্বংশী তামাকের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে চকরিয়ায়

জহিরুল ইসলাম, চকরিয়া :: চকরিয়ায় চলতি মৌসুমে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছর অধিক পরিমাণ জমিতে তামাকের আবাদ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনসহ সামাজিক বনায়ন।

পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদী ও বিভিন্ন পাহাড়ী ছড়া বিধৌত চকরিয়া উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে চলতি বছর প্রায় ২হাজার হেক্টর এলাকায় তামাকের আবাদ হয়েছে। প্রতিবছর বন্যার সময় পাহাড় থেকে নেমে আসা পলি পড়ার কারনে এ উপজেলার জমি উন্নতমানের তামাক চাষের উপযোগী। ফলে এখানকার কৃষকদের টার্গেট করে তামাক কোম্পানীগুলো অগ্রিম ঋণসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা দিয়ে তামাক চাষে আগ্রহী করে তুলছে। যার কারনে বছরের পর বছর চকরিয়ায় তামাক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে চকরিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন যথাক্রমে বমু বিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, ফাঁসিয়াখালী ও লক্ষ্যারচর এলাকার প্রায় ৬২০ হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। কিন্তু তামাক চাষ নিয়ে কৃষি বিভাগের এই জরিপে স্থান পায়নি কৈয়ারবিল, বরইতলী, খুটাখালীসহ কয়েকটি ইউনিয়ন। তামাক চাষাবাদ নিরুৎসাহিতকরণে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করা বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উবিনীগ ও একলাবের মতে, চকরিয়ায় এ বছর প্রায় ২হাজার হেক্টর এলাকার জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। আর এসব তামাক মাঠ থেকে উত্তোলনের সময় ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষিতে চাষীরা তন্দুল বা তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ চুল্লী মেরামত ও প্রয়োজনীয় লাকড়ী বা জ¦ালানী কাঠ সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, প্রতিটি তামাক শুকানোর চুল্লীতে প্রতি ৪০হাজার কেজি তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কেজি জ¦ালানী কাঠের প্রয়োজন হয়। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন টোব্যাকো কোম্পানীগুলো প্রচার করে থাকেন যে, তামাক শোধনে বিকল্প জ¦ালানী হিসেবে বন্যার সময় নদীতে ভেসে আসা লাকড়ি, ধৈঞ্চার ডাটা, তুষ, তামাকের ডাটা ও বিভিন্ন ঝোপ-ঝাড়ের খড়কুড়ো ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু চাষীদের অভিমত, ভাল গ্রেডের তামাক পেতে হলে লাকড়ীর উনুনে প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে হবে। অন্যথায় ভাল তামাক সমুহ গ্রেড হারিয়ে ফেলে। নিম্ন গ্রেডের তামাকের দামও ‘এ’ গ্রেডের তামাকের চাইতে তুলনামুলক অনেক কম থাকে।

বমুবিলছড়ি ইউনিযনের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল কাদের ও সুরাজপুর মানিকপুরের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম জানান, বৃটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, আবুল খায়ের টোব্যাকো, নিউ এজ টোব্যাকোসহ দেশের নানা প্রান্তের খ্যাত-অখ্যাত সিগারেট কোম্পানীগুলো এখানে তামাক চাষের জন্য চাষীদের উদ্বুদ্ধ করে থাকে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাছিম হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘সরকারীভাবে তামাক আবাদে কোন বিধি-নিষেধ নেই। তবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে তামাক চাষের কুফল সম্পর্কে অবহিত করার কাজ অব্যাহত রয়েছে’।

পাঠকের মতামত: