ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

ইসপা একবছর আগে প্রকল্পের সমাপনী

চকরিয়ায় তিনবছরে ৬০৭৬৫ জন নারীপুরুষকে সুরক্ষাসেবা নিশ্চিত করেছে 

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ২০২১ সালের জুলাই থেকে মাঠপর্যায়ে লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা আইআরসি জিএফএফও সাপোর্টেড প্রজেক্টের সহযোগিতায় সেবামূলক সংগঠন “ইয়াং পাওয়ার ইন সোসাল এ্যাকশান” ইপসা। বৈদেশিক দাতা সংস্থার চুক্তি মোতাবেক ২০২৪ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত চকরিয়া উপজেলায় প্রকল্পটির কার্যক্রম চলমান থাকবে এমন কথা থাকলেও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাঅবস্থার কারণে চলতি ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে ইসপার এই প্রকল্পটি গুটিয়ে নিচ্ছেন দাতা সংস্থা।
এই অবস্থায় ইপসার চলমান এ প্রকল্পের অধীনে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পাঁচটি নারী ও কিশোরী বান্ধব কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় তিনবছর সময় চালু থাকা প্রকল্পের আওতায় অগ্রগতি নিয়ে আলোকপাত এবং উক্ত প্রকল্পের সমাপনি বিষয়ক অবহিতকরণ সভা গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অনুষ্ঠিত অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শোভন দত্ত।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইপসার প্রকল্প সমন্বয়কারী শমসের উদ্দিন মোস্তফা, আইআরসির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন টেকনিক্যাল ম্যানেজার সুলতানা রাজিয়া।

ইপসার চকরিয়া উপজেলা ম্যানেজার ফিরোজা বেগম ঝুমুর এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মাতামুহুরী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুর রহমান, বমুবিলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মনজুরুল কাদের, বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম জাহাঙ্গীর আলম, বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান, কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার, লক্ষ্যারচর ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব বুলেট, একলাব চকরিয়া উপজেলা ম্যানেজার মাহাবুবর রহমান, চকরিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিজবাউল হক।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থা সমুহের প্রতিনিধি, এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা দানকারী কর্মকর্তা, সাংবাদিক সুধীজন।

প্রকল্পের সমাপনী সেমিনারে ইপসা চকরিয়া উপজেলা ম্যানেজার ফিরোজা বেগম ঝুমু তিনবছরে প্রকল্প কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইপসা-আইআরসি প্রকল্পের অধীনে ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে চকরিয়া উপজেলার পাঁচটি নারী ও কিশোরী সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৬০০ জনকে কেইস মেনেজম্যান্ট সেবা দেওয়া হয়েছে । একইভাবে ৩৪ হাজার ৫০০ মানুষের মাঝে কোভিট ১৯ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা দুরিকরণে সচেতনতা বিষয়ক কাউন্সিলিং করা হয়েছে।

একইসময়ে চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পশ্চিম বড়ভেওলা, পুর্ববড় ভেওলা, বদরখালী, ঢেমুশিয়া, বিএমচর, কোনাখালী, কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, বমুবিলছড়ি, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নসহ মোট ১৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় উল্লেখিত সুরক্ষা সেবা নিশ্চিতে স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যক্রম গতিশীল করতে স্থানীয় রাজনৈতিক, পেশাজীবি সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সভাও করেছে।

ফিরোজা বেগম ঝুমুর বলেন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতনতা ও সুরক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চকরিয়ার এসব এলাকায় নারীদের সঙ্গে পুরুষদের সম্পৃক্ততায় মোট ১৮ হাজার ৬০০ জনকে বিভিন্নভাবে সচেতনতামুলক কার্যক্রম যুক্ত করে । ২০২১ সালের জুলাই থেকে গেল তিনবছর সময়ে ইপসা সুরক্ষা সেবাখাতে চকরিয়া উপজেলার মোট ৬০ হাজার ৭৬৫ জন উপকারভোগী নারীপুরুষকে সেবা দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি সচেনতা ও সুরক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলার নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যকর বিষয়ক মিটিং ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয়সভা করে কীভাবে উপকারভোগী মানুষের মাঝে সুরক্ষা সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব সেই কাজটি পরিচালনা করেছে ইসপা।

প্রকল্পের শেষ সেমিনারে প্রধান অতিথি চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শোভন দত্ত বলেন, শুরু থেকে ইপসা মাঠপর্যায়ে কাউন্সিলিং কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে সুরক্ষা সেবা নিশ্চিতে সহায়কের ভুমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তিতে ইপসা মানুষের কাছে সঠিক বার্তা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, দাতা সংস্থার অপারগতায় প্রকল্পের কার্যক্রম গুটিয়ে নিলেও গেল তিনবছরে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ও দিকনির্দেশনামুলক তথ্যগুলো সবাইকে অনুসরণ করতে হবে। তাতে উপকারভোগী পরিবার তথা জনসাধারণ উপকৃত হবে বলে আমরা আশা করি।

 

পাঠকের মতামত: