ঢাকা,রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিপাকে পরিবার

চকরিয়ায় জমি রক্ষার্থে আদালতে মামলা: ক্ষিপ্ত দখলবাজরা কবরস্থান প্রমাণে লাশ দাফন!

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নে বন্দোবস্তিমুলে মালিকানাধীন বাড়িভিটার জায়গা থেকে গাছ কেটে সাবাড় করে দেয়ার ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে। ওই মামলার তদন্ত কার্যক্রমকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য অভিযুক্ত আসামিপক্ষের লোকজন কৌশলে সদ্য মারা যাওয়া রশিদ আহমদ (৭৫) নামের একব্যক্তির মরদেহ দাফন করেছে বিরোধীয় অন্যের বাড়িভিটার জমিতে।
এদিকে সামাজিক কবরস্থানের পরিবর্তে অন্যের জমিতে লাশ দাফনের পর ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার সদস্যরা সমাজের সর্দারদের ইশারায় এ নিষ্টুর কাজটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের পুচ্ছালিয়াপাড়া এলাকায় ঘটেছে এ ঘটনা। গতকাল চকরিয়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মারা যাওয়া ব্যক্তি রশিদ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ হানান্ন। তিনি দাবি করেন, আমাদের এলাকার লোকজন মারা গেলে দাফনের জন্য সামাজিক ও মসজিদের আলাদা কবরস্থান আছে। এরই মধ্যে গত ৩ অক্টোবর আমার বাবা মারা গেলে আমিসহ পরিবার সদস্যরা শোকের কাতর ছিলাম। কেউ কেউ দাফন আয়োজনে ব্যস্ত ছিলাম। এ সুযোগে আমাদের সমাজের সর্দার জাফর আলম, সর্দার রেজাউল করিম ও চাচা নুর হোসেন মিলে লাশ দাফনের জন্য বাড়ির পাশে জনৈক আবুল শরীফ গংয়ের বন্তোবস্তির জমিতে কবর খনন করে ফেলে। পরে এদিন মাগরিবের নামাজের পর লাশ দাফনের সময় আমরা ঘটনাটি জানতে পারি।

অভিযোগকারী মোহাম্মদ হান্নান দাবি করেন, লাশ দাফনের আগমুর্হুতে অন্যের জমিতে আমার বাবাকে দাফন করা হচ্ছে বিষয়টি জানতে পারলেও তখন আমাদের করার কিছুই ছিলনা। মুলত সামাজিক ও মসজিদের কবরস্থানে আমার বাবাকে দাফন না করে কতিপয় মহলের ইশারায় এ নিষ্টুর কাজটি করেছেন সমাজের সর্দাররা। আমরা এ ঘটনায় প্রশাসনের কাছে বিচার চাই। আমরা মনে করি, অন্যের জমিতে বাবাকে দাফন করায় তাঁর আত্ম শান্তি পাবেনা।

অন্যের জমিতে লাশ দাফনের ঘটনাটির অনুসন্ধানে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের পুচ্ছালিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল শরীফ ১৯৮১-৮২ সালে বন্তোবস্তি মামলামুলে ৮৪০ নম্বর খতিয়ানের বিপরীতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে ৯০ শতক জমি বরাদ্দ পেয়েছেন। এরপর থেকে উলে­খিত জমি এবং ওয়ারিশী অংশের জমি মিলিয়ে বাড়িভিটায় বসতি স্থাপন করে আবুল শরীফের ছেলে হোসেন আহমদ, হাসান আহমদ, জয়নাল আবেদিন, কুতুব উদ্দিন এবং ওয়ারিশী অংশিদার লাতু মিয়ার ছেলে কামাল হোসেন, ওমর কাদের, নুরুল আমিন, আনোয়ার হোসেন ও মকছুদ আহমদের ছেলে জহিরুল ইসলাম, ছাদেকুর রহমান, পারভেজ রহমান ও সাইদুল ইসলামের পরিবার শান্তিপুর্ণভাবে বসবাস করে আসছেন।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলো সদস্যরা জানিয়েছেন, ১৯৮১-৮২ সাল থেকে তারা ভেওলা মানিকচর মৌজার বাড়িভিটায় শান্তিতে বসবাস করে আসলেও কয়েকমাস আগে হঠাৎ করে স্থানীয় একটি মহল কোনধরণের কাগজপত্র ছাড়াই পেশিশক্তির জোরে জেলা প্রশাসনের বন্দোবস্তির জমিতে অবৈধভাবে দখলচেষ্ঠা শুরু করেন।
এরই জেরে অভিযুক্ত মহলের লেলিয়ে দেওয়া ২০/২৫জনের লোকজন গত ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইতোমধ্যে দুইদফা হামলাও চালিয়েছে। এসময় তাঁরা বাড়িভিটার ৩০টি বিশাল আকৃতির অষ্টেলিয়া গাছ কেটে দুই লাখ টাকার ও ব্যাপক ভাংচুর চালিয়ে ৪০ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন করে। এ ঘটনায় বন্তোবস্তিমুলে জমি মালিক মৃত আবুল শরীফের ছেলে কুতুব উদ্দিন বাদি হয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা (নং ১৫৯৪/২২) রুজু করেছেন। মামলার এজাহারে স্থানীয় কামাল হোসেনের ছেলে রেজাউল করিম, মৃত ছৈয়দ নুরের ছেলে জাফর আলম, আবদু শুক্কুরের ছেলে মনিরকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আর্জিতে ঘটনার জন্য তিনজনকে দায়ী করা হয়েছে।

বাদিপক্ষের কৌশলী ও চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের আইনজীবি এডভোকেট আনোয়ারুল আলম বলেন, আদালতের বিচারক বাদির মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তপুর্বক প্রতিবেদন দিতে চকরিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। এখন বিষয়টি মাতামুহুরী পুলিশ ফাড়িতে তদন্তাধীন আছে।

মামলার বাদি কুতুব উদ্দিনসহ ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ, বাড়িভিটার গাছ কেটে ক্ষতিসাধনের ঘটনায় আমরা আদালতে মামলার আশ্রয় নিয়েছি। এখন মাতামুহুরী পুলিশ ফাড়িতে যখন বিষয়টির তদন্ত চলছে, ঠিক সেই মুর্হূতে অভিযুক্ত আসামিরা ঘটনার মোড় অন্যদিকে ফেরাতে এবং মামলার তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। এরই অংশহিসেবে তারা আমাদের জমিতে স্থানীয় একব্যক্তির মরদেহ দাফন করে দিয়েছে। যদিও দাফনের জন্য আমাদের সমাজে আলাদা কবরস্থান রয়েছে। এখন ঘটনাটি নিয়ে আমরা উদ্বেগ উৎকন্ঠায় আছি। একইভাবে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারও লাশটি অন্যের জমিতে দাফন হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। এ ঘটনার জন্য যারা জড়িত আমরা তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি প্রশাসনের কাছে।

পাঠকের মতামত: