ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় গিয়াসকে একক প্রার্থী ঘোষণার পর এলাকায় বিদ্রোহ

সাঈদীর পক্ষে সড়কে হাজার হাজার কলাগাছ রোপন করে প্রতিবাদ তৃণমূলের

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ::

আগামী ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে দলের উপজেলার সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর নাম ঘোষণার পর এলাকার মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। খোদ আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে দিন দিন ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।

এর প্রতিবাদ স্বরূপ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ উপজেলাজুড়ে তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ কলাগাছ রোপন করে। তাদের দাবি, তৃণমূলবান্ধব ও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকা ক্রীড়া সংগঠক ও শ্রমিক নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদীকেই তারা আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে চান।

এদিকে তৃণমূলের অভিযোগ, বন উজাড়ের মামলায় ৬ মাসের কারাণ্ডপ্রাপ্তসহ বহু অপকর্মের হোতা গিয়াস উদ্দিনের পরিবর্তে তৃণমূলের কর্মীবান্ধব, পরিচ্ছন্ন, তরুণ ও সর্বোপরি জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও শ্রমিকনেতা ফজলুল করিম সাঈদী বা পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটুকে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দল থেকে একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কিন্তু যখন রবিবার কেন্দ্রীয়ভাবে এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে গিয়াস উদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয় তখন থেকেই ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা উপজেলাজুড়ে প্রতিবাদস্বরূপ ফজলুল করিম সাঈদীর পক্ষে কলাগাছ রোপন শুরু করে।

এমনকি দুপুরে স্থানীয় একটি হোটেলে জরুরি বৈঠকে মিলিত হয় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, পৌরসভা আওয়ামী লীগ, উপজেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিকলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শওকত হোসেন।

সভায় বক্তব্য দেন চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম শহীদ, সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবলা দেবনাথ, পৌরসভা শ্রমিকলীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল ধলু, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরহান মাহমুদ রুবেল, মাতামুহুরী সাংগঠনিক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজবা উদ্দিন বেলালসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

জরুরি বৈঠকে তৃণমূলের এসব নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হিসেবে প্রায় ১৩ বছর এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রায় ৮ বছর ধরে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী দলের নাম ভাঙিয়ে বন উজাড় করে ইটভাটা স্থাপন, পাহাড় সাবাড় করে মাটি বিক্রিসহ নানা অপকর্ম করে শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। শুধুমাত্র নিজের পরিবার, চার ভাই ও শ্বশুর বাড়ির সদস্যদের কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়তে সহায়তা দিয়েছেন। বিনিময়ে দলকে বিক্রি করে প্রভাব বিস্তার করেছেন তারা। কিন্তু দলের কোনো কর্মসূচী পালনের সময় তৃণমূল গিয়াসের কাছ থেকে কোনো ধরণের সুযোগ-সুবিধা পায়নি। রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা দিনের পর দিন সময় দিয়েছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বছরের পর বছর জেলের ঘানি টেনেছেন তাদেরকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাই তৃণমূলের মতামত ছাড়াই গিয়াসকে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও তা আমরা মেনে নিতে পারছি না।

উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম শহীদ বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূলের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি। তাই যুবলীগের কোনো নেতাকর্মী গিয়াসের পক্ষে মাঠে কাজ করবে না। প্রয়োজনে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তাতে আমরা অনড় থাকবো।’

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শওকত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক বাবলা দেবনাথ বলেন, ‘দলের নাম ভাঙিয়ে অবৈধ অপকর্মের মাধ্যমে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হলেও গিয়াস উদ্দিন দলের জন্য কোনোদিন নিবেদিত ছিলেন না। দলীয় কর্মসূচীতে শুধুমাত্র বর্তমান এমপি জাফর আলমই যা সহায়তা করার করতেন। সুযোগ থাকলেও গিয়াস উদ্দিন একটাকাও দলের জন্য ব্যয় করেননি। উপরন্তু দলকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের জন্য বদনাম কুঁড়িয়েছেন গিয়াস। তাই তাকে আমরা কোনোভাবেই মানবো না। আমরা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকা জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার ফজলুল করিম সাঈদীর পক্ষে মাঠে কাজ করবো।’

পাঠকের মতামত: