নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ডিগ্রি কলেজে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগে সংঘটিত ঘটনার ভিডিও গতকাল সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় লোকজন।
আক্রান্ত মেয়েটির পরিবার সূত্র জানিয়েছে, লজ্জায় আত্মহননের পথ বেছে নিতে পারে–এই আশঙ্কায় ওই শিক্ষার্থীকে কঠোর নজরদারির মধ্যে রেখেছে তার পরিবার। তার সঙ্গে সবসময় পরিবারের কেউ না কেউ থাকছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, ডুলাহাজারা কলেজের এইচএসসিতে পড়ুয়া ওই শিক্ষার্থী কয়েকদিন আগে ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে সংঘবদ্ধ চক্র তাকে তুলে নিয়ে যায় গোপন আস্তানায়। সেখানে আটকে রেখে তাকে ধর্ষণ করে। পরে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে রাখে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা জানান, ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের উলুবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও উলুবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শওকত ওসমানের ছেলে শাহরিয়ার মো. হৃদয় (২২) কয়েকজন সহযোগী নিয়ে তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তা থেকে তুলে নেয়। এরপর স্থানীয় সাফারি পার্কের আশপাশে গোপন আস্তানার একটি কক্ষে আটকে রাখে। সেখানে গণধর্ষণ করে ও ভিডিওচিত্র ধারণ করে তারা।
ভিডিওচিত্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছেন এমন কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ধর্ষণকাণ্ডের ভিডিওচিত্র ধারণের সময় মেয়েটিকে বারবার হুমকি দিচ্ছিল শাহরিয়ার হৃদয়। হৃদয় বলছিল, এই ঘটনা কাউকে বললে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হবে। এই দেখ, ভিডিওতে সবকিছু উঠে গেছে। যখনই ডাক দেওয়া হবে তখনই এখানে হাজির হতে হবে। ঘটনার পর বিষয়টি বাড়িতে গিয়ে জানায় মেয়েটি। তখন পরিবারের সদস্যরা জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নেন।
অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ও ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রমজান আলী তাতে বাঁধ সাধেন। কারণ শাহরিয়ার মো. হৃদয় রমজান আলীর চাচাত ভাই।
এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ঘটনার পর মেয়ে বাড়িতে এসে মাকে সবকিছু খুলে বলে। তখনই মামলা করার উদ্যোগ নিলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছেন মেম্বার রমজান আলী। এই অবস্থায় মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। বাড়ি থেকে বের হলে কোথায় যাচ্ছি, কার সাথে কথা বলছি তা জানার জন্য পেছনে লোক লাগিয়ে রেখেছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে ডুলাহাজারা ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. রমজান আলীকে ফোন করা হয়। কিন্তু মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। শাহরিয়ার মো. হৃদয়ের বাবা মাস্টার শওকত ওসমানের বক্তব্য নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অভিযুক্তসহ তার পরিবারের সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছে। ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর বলেন, এই ধর্ষক–বখাটেচক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ইউনিয়নের মানুষ। এমনকি সাফারি পার্কের বাইরে পর্যটক–দর্শনার্থীরাও প্রতিনিয়ত নানা অঘটনের শিকার হচ্ছেন। এই অবস্থায় আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান জোরদার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবদুল জব্বার বলেন, কলেজ শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর পর ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশ মাঠে রয়েছে। এই জঘন্যতম ঘটনার আশ্রয়দাতা যে, তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীর বাবাকে বলা হয়েছে থানায় এজাহার দিতে। পাশাপাশি পুরো পরিবারের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: