নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ঃ ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’ শ্লোগানে মাদক, জঙ্গিবাদ, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, গুজবসহ সামাজিক নানা অপরাধ প্রতিরোধে কক্সবাজারের চকরিয়ায় আজ বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘কমিউনিটি পুলিশিং ও সুধী সমাবেশ’। এতে উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কমিউনিটি পুলিশের হাজারো নারী-পুরুষ ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে যোগ দেন। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃবৃন্দ, সরকারী-বেসরকারী দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মাদকের বিরুদ্ধে সংগ্রামে দুঃসাহসিক অগ্রযাত্রায় সফল নায়ক উপাধি দিয়ে অনুষ্ঠানে নতুন কমিটির পক্ষ থেকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের হাতে তুলে দেওয়া হয় সম্মাননা স্মারক।
চকরিয়া থানা ও উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সমাবেশ থেকে ঘোষণা এসেছে চকরিয়ায় এখন থেকে যারা মাদক ব্যবসা করবে, দখলবাজি করে রাতারাতি সম্পদের পাহাড় গড়বেন তাদের কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। যারা এসব অপরাধকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন তাদেরকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। যেভাবে জনগণের সহায়তায় কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফসহ বিভিন্ন উপজেলার মাদক কারবারি ও গডফাদারদের আসমান থেকে মাটিতে নামিয়ে আনা এবং সুরম্য অট্টালিকা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশের চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মো. মতিউল ইসলামের সভাপতিত্বে ও উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম লিটুর সঞ্চালনায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে থানা চত্বরে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম। প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ও মাদকের বিরুদ্ধে সংগ্রামে দুঃসাহসিক অগ্রযাত্রার সফল নায়ক এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান, ওসি মো. হাবিবুর রহমান, উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি আজিমুল হক আজিম, চকরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আকম গিয়াস উদ্দিন, সাংবাদিক এম আর মাহমুদ, অ্যাডভোকেট লুৎফুল কবির, দুপ্রকের সভাপতি মো. নোমান, ডুলাহাজারা সভাপতি আমির উদ্দিন বুলবুল প্রমূখ।
প্রধান বক্তা কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন মাদক কারবারিদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ইয়াবাসহ মাদক কারবারিরা যত বড় প্রভাবশালী বা হাজি-গাজীই হউন না কেন, আসমান থেকে মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে নামিয়ে আনা হবে। ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন, ইয়াবা কারবারে দেশের বড় গডফাদার সাইফুল করিমকেও কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। শত শত ইয়াবা কারবারি তাদের রাজপ্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অবৈধ টাকায় গড়া সুরম্য অট্টালিকা জনগণের সহায়তায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক প্রাসাদ এখন খাঁ খাঁ করছে। সেখানে মানুষ থাকছে না। আমরা যতদিন এখানে আছি, কাউকে কোনভাবেই অবৈধ অপকর্ম করতে দেওয়া হবে না।
কিশোর অপরাধ সম্পর্কে পুলিশ সুপার থানার ওসিকে নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘যেখানেই দলবদ্ধ কিশোরদের দেখবেন তাদেরকে সোজা গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে এসে অভিভাবকদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে প্রথমবারের মতো ক্ষমা করে ছেড়ে দেবেন। এর পরও যদি তাদের রাস্তা-ঘাটে, স্কুল-কলেজের সামনে দেখা যায় তাহলে অভিভাবকসহ ওই কিশোরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।’
কোন অপরাধীকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার না করার নির্দেশনা দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, এখন থেকে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্যরাই পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করবেন। থানায় কোন দালালকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া কোনভাবেই সহ্য করা হবে না। পুলিশ সুপার চকরিয়াবাসীর উদ্দেশ্যে অনুরোধ করে বলেন, আপনারা এমন কোন কাউকে বড় চেয়ারে বসাবেন না, যারা অপরাধ কর্মকা- ও অবৈধভাবে পন্থায় রাতারাতি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। তাদেরকে যদি ভুল করে বড় চেয়ারে বসান তাহলে অপরাধ কর্ম চলতেই থাকবে।
প্রধান অতিথি এমপি জাফর আলম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কোন মাদক কারবারি, দখলবাজ, সন্ত্রাসী, গুজব রটনাকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এজন্য পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে কক্সবাজারের পুলিশ সদস্যরা যথাযথা দায়িত্ব পালন করছে। আজকের এই কমিউনিটি পুলিশিং ও সুধী সমাবেশ প্রমাণ করে অপরাধ দমনে চকরিয়ার মানুষ সবসময় পুলিশকে সহায়তা দেবে। তাই বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ত্বরাণি¦ত করাসহ সুন্দর, শান্তিময় চকরিয়া-পেকুয়া গড়তে সকলে একযোগে কাজ করে যাবো আমরা।’
পাঠকের মতামত: