এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়ায় এরশাদ আলী (৩২) নামের এক যুবককে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার রাত আনুমানিক দশটার দিকে উপজেলা সরকারি হাসপাতাল মাঠের মসজিদের পাশে ঘটেছে এ ঘটনা। নিহত এরশাদ আলী কুষ্টিয়া জেলার মীরপুর থানা এলাকার সুতাইল গ্রামের শাফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি ওষুধ কোম্পানি হেল্থ কেয়ারের এসআর হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত রয়েছেন।
এ ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে আশিক বিল্লাহ সুমন (৩৪) নামের একজনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার পর আশিক বিল্লাহ ঘটনাস্থলে ফেলে যাওয়া মোটর সাইকেল নিতে এসে আটক হয়েছেন। গ্রেফতারকৃত আশিক বিল্লাহ একই ওষুধ কোম্পানি চকরিয়া ডিপোর এমআর। ঘাতক আশিক ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ছনধরা এলাকার আবদুল জলিলের ছেলে।
এদিকে ওষুধ কোম্পানি হেল্থ কেয়ার এর এসআর এরশাদ আলী খুনের ঘটনার ক্লু উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত ঘাতক আশিক বিল্লাহকে গ্রেফতার করা নিয়ে গতকাল রোববার ১৬ জুলাই বিকালে চকরিয়া থানার সম্মেলনকক্ষে প্রেস বিফ্রিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রেস বিফ্রিংয়ে বক্তব্য দেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাপিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ঘটনার দিন শনিবার ১৫ জুলাই বিকালে চকরিয়া উপজেলা সদরের আলরাজি হসপিটাল ফার্মেসীর নামে ১৯ হাজার ২০০ টাকার ওষুধের অর্ডার কেটে ওই ওষুধ কোম্পানির ডিপো থেকে এনে বাইরে বিক্রি করে দিয়েছেন এমআর আশিক বিল্লাহ সুমন। বিষয়টি ওষুধ কোম্পানির বাণিজ্যক নীতিমালা ভঙ্গ হয়েছে। তাই কোম্পানির বাজার নষ্ট হবার বিষয়টি কোম্পানির উর্ধবতন মহলকে জানাবেন বলে আশিক বিল্লাহকে হুমকি দেন এসআর এরশাদ আলী। সেই কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে এরশাদ আলীকে হত্যার পরিকল্পনা নেন ঘাতক আশিক বিল্লাহ। এরই জেরধরে শনিবার বিকালে একটি চুরি কিনে প্যান্টের পকেটে রাখে আশিক বিল্লাহ। পরে কৌশলে কাজের কথা বলে শনিবার সন্ধ্যার পরে কক্সবাজার থেকে এরশাদকে ঢেকে আনেন আশিক বিল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার থেকে শনিবার রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে এরশাদ আলী চকরিয়া পৌঁছেন। তাকে উপজেলা সরকারি হাসপাতাল মাঠে আসতে বলে ঘাতক আশিক। এসময় এরশাদ আলী সেখানে পৌঁছলে ঘাতক আশিক মোটর সাইকেলে উঠিয়ে এরশাদকে নিয়ে হাসপাতাল মাঠের পশ্চিমে মসজিদের পাশে যান। সেখানে নেমে দুইজন কোম্পানির ওষুধ বাইরে বিক্রি নিয়ে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন। এরই একপর্যায়ে প্যান্টের পকেটে থাকা ছুরি বের করে অর্তকিত এরশাদ আলীর গলায় চালিয়ে দেন ঘাতক আশিক।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, গলায় ছুরি লাগার পর প্রাণে বাঁচতে এরশাদ আলী ঘটনাস্থলে প্রায় ১৫ ফুট দুরে লাফিয়ে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এসময় ঘাতক আশিক পুনরায় সেখানে গিয়ে হাঁটু দিয়ে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দ্বিতীয় দফায় গলায় চুরি চালিয়ে এরশাদ আলীর মৃত্যু নিশ্চিত করে। গ্রেফতারের পর থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে ঘাতক আশিক বিল্লাহ।
প্রেস বিফ্রিংয়ে চকরিয়া থানার নবাগত ওসি জাবেদ মাহমুদ, থানার ওসি তদন্ত মো আবদুল জব্বার, অপারেশন অফিসার এসআই রাজীব চন্দ্র সরকার, এসআই কামরুল ইসলাম, এসআই জামাল চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, ওষুধ কোম্পানি হেল্থ কেয়ার এর এসআর এরশাদ আলী খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত একই কোম্পানির এমআর আশিক বিল্লাহ হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করেছেন। আমরা এ ঘটনার পেছনে অন্য কোন কারণ আছে কীনা এবং ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কীনা তা জানতে অধিকতর তদন্তের জন্য গ্রেফতারকৃত আশিক বিল্লাহ সুমনকে সোমবার আদালতে পাঠিয়ে রিমাণ্ড চাইবো। আসামি স্বেচ্ছায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিলে রিমান্ডের প্রয়োজন হবে না।
তিনি বলেন, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এব্যাপারে নিহতের পরিবার সদস্যরা কুষ্টিয়া থেকে আসলে এজাহার জমা দেওয়া হলে মামলা রুজু করার হবে।
চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মো আবদুল জব্বার বলেন, শনিবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে এলাকাটি ঘিরে রাখা হয়। রাত আনুমানিক একটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাপিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে কক্সবাজার থেকে সিআইডি পুলিশের ক্রাইম সিন টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়।
চকরিয়া থানার অপারেশন অফিসার এসআই রাজীব চন্দ্র সরকার বলেন, রাত আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে ঘাতক আশিক বিল্লাহকে গ্রেফতার করে থানায় নেওয়া হয়। পরে রাত আড়াইটার দিকে জিজ্ঞাসাবাদে আশিক বিল্লাহ খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তার জবানবন্দির ভিত্তিতে ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকা থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি, নগদ টাকা ও ভিকটিমের ব্যবহৃত অফিস ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: