ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় ইউপি নির্বাচনে হামলা-মামলার ভয়ে দিন পার করছেন স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা : অপহরণ ও গুমের আশঙ্কা

ওওওওচকরিয়া অফিস ::::

স্থানীয় নেতাকর্মীদের হামলা-মামলার চাপে আতঙ্কে দিন পার করছেন ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। অনেক প্রার্থী অপহরণ ও গুমের আশঙ্কা করছেন। এতে সামনে দলীয় লোকজনরে মধ্যে সংঘাত-সংর্ঘষের আশঙ্কা করছেন খোদ চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে বিদ্রোহী অনেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলেও চাপ আর আতঙ্ককে উপেক্ষা করেই বেশিরভাগ বিদ্রোহী নির্বাচনী মাঠে রয়ে গেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে বিদ্রোহীর সঙ্গে সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন তৃণমূল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, আগামী ২৩ এপ্রিল চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের ১২টি ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী ৭মে অনুষ্ঠিত হবে আরও ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ২৩ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ঘোষিত ইউনিয়ন গুলো হচ্ছে, কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, ফাশিয়াখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, হারবাং, বরইতলী, কৈয়ারবিল, চিরিঙ্গা, বমুবিলছড়ি, লক্ষ্যারচর ও সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদ। তাছাড়া ৭মে ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ গুলোর মধ্যে বদরখালী, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা, পূর্ববড়ভেওলা, কোনাখালী ও বিএমচর ইউনিয়ন। এরমধ্যে ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সম্পন্ন করতে সকল কার্যক্রম শেষ করেছে উপজেলা রির্টানিং অফিসার মো: সাখাওয়াত হোসেন। তিনি ওইসব ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন কার্যক্রম দেখভাল করার জন্য উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন বিভাগী কর্মকর্তা রির্টানিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। একইভাবে ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম দেখা শোনা করবেন সংশ্লিষ্ট রির্টানিং কর্মকর্তারা।

দুই দফা ১৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির দলীয় প্রার্থীরা নৌকা এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ওইসব ইউনিয়নে একাধিক স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। অবশ্য বিদ্রোহীদের সবাইকে কেন্দ্র ও তৃণমূল থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে। না হয় দল থেকে বহিষ্কারসহ কঠোর শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। উপজলোর ১৮টি ইউনিয়নে অন্তত ১৫ জন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছে ৫-৬জন।

স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা জানিয়েছেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকেই প্রত্যাহারের জন্য তারা স্থানীয় নেতাদের প্রতিনিয়ত চাপ ও হুমকির আশঙ্কা রয়েছেন। ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট থানা ও নির্বাচন কমিশন অফিসে সাধারণ ডায়েরি ও অভিযোগ দাখিল করেছেন অনেকে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের আশঙ্কা নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে ততই তাদের ওপর হামলা ও সংঘাতের ঘটনা বাড়তে পারে। চকরিয়া উপজেলার নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জানান, গত ৩১ মার্চ টৈটং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালীর নেতার ইন্ধনে ভোটের আগেরদিন বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়েছে। এতে তার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এজন্য যে কোন মুহুর্তে অপহরণ ও গুম হওয়ার আশঙ্কা করছি। তবে প্রার্থীদের অনেক বিষয় সরাসরি স্বীকার না করলেও দলীয় প্রার্থীর রোষানলে পড়তে পারেন এমন আশঙ্কায় তারা মুখ খুলতে রাজি নন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী কেএম ছালাহউদ্দিনকে নির্বাচন থেকে সরে দাড়াতে একজন প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন। নির্বাচনী কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন। সরে না দাড়ালে নির্বাচনের দিন কেন্দ্র দখল করে তার বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ারও হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ওই আওয়ামীলীগ নেতা। শান্তিপূর্নভাবে নির্বাচন হলে সেখানে কেএম ছালাহউদ্দিন বিপুল ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার কথা জানান স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মাওলানা ছৈয়দুল আমিন। তিনি জানান, সাধারণ মানুষ কেএম ছালাহউদ্দিনকে ভোট দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। সাধারণ ভোটাররা ভয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। কিন্তু বিদ্রোহী হওয়ার অপরাধে যে কোনো সময় হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন তার সমর্থকরা।

এদিকে বিএনপি সমর্থিত ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মাওলানা এহেছানুল করিম জানান, শনিবার সকাল ১০টার দিকে ধানের শীষের কয়েকজন কর্মী পোস্টার লাগাচ্ছিলেন। এসময় স্থানীয় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর ৮-১০জন সন্ত্রাসী মোটর সাইকেল যোগে অতর্কিত অবস্থায় গিয়ে প্রথমে পোস্টার গুলো ছিড়ে ফেলে, ওই দুই কর্মী হেলাল উদ্দিন (৩০) ও আবুল নছরকে মারধর করে। পরে স্থানীয়রা এদের উদ্ধার করে চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। অপরদিকে একই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংবাদিক মাঈনউদ্দিন হাসান শাহেদ (আনারস প্রতীক) অভিযোগ করে জানান, একইদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার কর্মীরা আনারস প্রতীকের পোস্টার লাগানোর সময় ৪শত পোস্টার কেড়ে নেয় ও ৪ কর্মীকে অমানবিক প্রহার করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। ওইসময় মারধরে আহত হন সোহেল (২৫), নুরুর আবছার (২৮), নাহিদ (৩০) ও ইউনুছ (২৭) একইভাবে সন্ত্রাসীরা বিকাল ৫টার দিকে তার প্রচার মাইক কেড়ে নেয় বলেও জানান তিনি। এবিষয়ে তিনি তাৎক্ষনিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং অফিসারের নিকট মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন।

পাঠকের মতামত: