কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার আঠার ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়নে তৃতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্টিত হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। অবশিষ্ট ছয়টি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে চর্তুথ ধাপে মে মাসে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ড উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের দলীয় একক প্রার্থীর নাম ঘোষনা করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, মনোনয়ন বোর্ডের ঘোষনা করা ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নে দলের ও তৃনমুলের সাধারণ মানুষের কাছে বেশি জনপ্রিয় এবং ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে এমন প্রার্থীর বদলে এখানে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় ও জনসমর্থন নেই এই রকম দুই প্রার্থীকে। তাদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে দলবাজির গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।
ভাগ্যবান আওয়ামীলীগের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে খ.ম আওরঙ্গজেব বুলেট ও খুটাখালী ইউনিয়নে বিএনপি নেতা বাহাদুর হক। তবে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সুপারিশে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাঠে নাম পাঠালেও রহস্যজনক কারনে মনোনয়ন দৌঁড়ে পেছনে পড়ে যান হেভিওয়েট দুই প্রার্থী। তাঁরা হলেন চকরিয়া উপজেলার আলোচিত যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদি ও যুদ্ধাকালীন কমান্ডার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর ছেলে লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জনপ্রিয় নেতা রেজাউল করিম সেলিম এবং খুটাখালী ইউনিয়নের জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক কক্সবাজার কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আলহাজ জয়নাল আবেদিন।
স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন, সময় থাকতে যাছাই বাছাই পুর্বক দুই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী পরিবর্তনে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ডকে। তা না হলে এ দুই ইউনিয়নে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা নৌকার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে র্ব্যথ হবে। এতে করে চরম ভরাডুবি হবে আওয়ামীলীগের।
অনুসন্ধানে উপজেলার দুই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা জানায়, বিশেষ মহলকে সুবিধা পাইয়ে দেয়ার মাধ্যমে বিএনপির থেকে রাতারাতি আওয়ামী লীগে প্রবেশ করা খুটাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি বাহাদুর হক, এলাকায় নানা কারনে জনসমর্থন ও ইমেজ সংকটে থাকা লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে খ.ম বুলেটকে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশাপশি এলাকার সাধারণ জনগনও হতাশ হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় জনগন প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ড উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে বেশির ভাগ ইউনিয়নে জনপ্রিয় নেতাদেরকে মনোনয়ন দিলেও খুটাখালী ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় নেতাদেরকে অবহেলা করেছেন। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগন অভিমত প্রকাশ করেছেন, সময় থাকতে দুই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন করা না হলে আগামী ২৩ এপ্রিল অনুষ্টিতব্য নির্বাচনে নিশ্চিত নৌকার বিজয় যাবে অন্যের ঘরে। এ জন্য আওয়ামীলীগকেই খেসারত দিতে হবে।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন চকরিয়ার আলোচিত যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির ছেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খ ম আওরঙ্গজেব বুলেট এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সাইকুল আহমেদ চৌধুরী। কিন্তু মনোনয়ন বোর্ড থেকে নাম ঘোষণা করা হয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খ ম আওরঙ্গজেব বুলেটকে। আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলেন যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি আগামী ২৩এপ্রিল অনুষ্টিতব্য নির্বাচনে বিজয়ী হবে কিনা তা নিয়ে যতেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে গণমানুষের কাছে এখন জনপ্রিয়তা তুঙ্গে রেজাউল করিম সেলিমের। এর একটি কারনও আছে, সেটি হলো তৃনমুল নেতাকর্মীদের ভোটে রেজাউল করিম সেলিম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সংগঠনকে বিকশিত করতে সব ধরণের উদ্যোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি এলাকার গণমানুষের সমর্থন ও ভালবাসা অর্জনে তিনি বেশ কিছু ইতিবাচক কাজ করেছেন। তারমধ্যে গতবছরের চারদফা বন্যার সময় ব্যক্তিগত তহবিলের উদ্যোগে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার সর্বস্থরের মানুষের পাশে দাঁিড়য়েছেন। অভাবগ্রস্থ পরিবারকে সাধ্য মতো আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। গরীব পরিবারের মেয়েকে নিজের টাকা খরচ করে বিয়ে দিয়েছেন। এসব কারনে এলাকার মানুষের মাঝে জনপ্রিয়তা পেয়েছে রেজাউল করিম সেলিম।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে মনোনয়ন প্রত্যাশী রেজাউল করিম সেলিম বলেন, তার বাবা আনোয়ার হোসেন বাঙালি ছিলেন একজন যুদ্ধাকালীন কমান্ডার। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেন। সারাজীবন ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি মারা যাওয়ার আগে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। বর্তমানে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্তাধীন। তিনি বলেন, কয়েকবছর আগেও লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের অবস্থা ছিল একেবারে নাজুক। তৃনমুলের নেতাকর্মীদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে নিজের অর্থায়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় স্থাপন করেছি। প্রতিনিয়ত এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে দলকে সু-সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু দেশ ও দলের জন্য আমার বাবা যেই টুকু অবদান রেখেছেন পক্ষান্তরে দল প্রতিদান হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দেয়নি।
সুত্রে জানা গেছে, গত ১৯ মার্চ দুপুরে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ড চকরিয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলের একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, বরইতলী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জিয়া, কাকারা ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত ওসমান, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আজিমুল হক আজিম, বমু বিলছড়ি ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিন, লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খ ম আওরঙ্গজেব বুলেট, হারবাং ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিরানুল ইসলাম মিরান, কৈয়ারবিল ইউনিয়নে কৈয়ারবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ চৌধুরী, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল হোসেন, খুটাখালী ইউনিয়নে বাহাদুর হক, সাহারবিল ইউনিয়নে মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিন বাবুল ও চিরিঙ্গা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো.সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৩ এপ্রিল অনুষ্টিত হবে চকরিয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। ২৭ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ২৯ ও ৩০ মার্চ। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৬ এপ্রিল। এরপর হবে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্ধ।
পাঠকের মতামত: