ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী-মাতারবাড়ি বন্দর সড়ক নির্মাণ শুরু হচ্ছে জুলাইয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর হাসেরদীঘি থেকে শুরু হয়ে সোজা পশ্চিমে ২৭ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দর সড়ক। দেশের প্রথম গভীর এই সমুদ্রবন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজতর করতেই এই সড়ক নির্মাণ করা হবে।

‘মাতারবাড়ি পোর্ট কানেকটিং সড়ক’ নামে অভিহিত এই সড়কটি মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। সড়কটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে ব্যয় হবে ৮ হাজার ৮২১ কোটি টাকা।

গত ১৭ জানুয়ারি একনেক সভায় সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু করতে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়। আগামী জুলাই মাসেই এই সংযোগ সড়কটির কাজ শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৭ কিলোমিটারজুড়েই এই সড়কটি চার লেন করার জন্য ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে সড়কের মাতারবাড়ি অংশে ১২শ মিটার হবে চার লেন প্রস্থের সড়ক। বাকি অংশ অর্থাৎ চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর হাসেরদীঘি পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে দুই লেনের। পুরো সড়কেই অনেকগুলো সেতু নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি কাজ চলমান থাকা রেললাইনও যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সেজন্য থাকবে তিনটি ওভারপাস।

চলতি বছরের জুলাই থেকে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২৬ সালে। অর্থাৎ মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর চালুর আগেই সংযোগ সড়ক নির্মাণ শেষ করতে চায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

প্রকল্প পরিচালক (সওজ) জাকির হোসেন বলেন, ২০২৬ সালে বন্দর চালুর আগেই আমরা সড়কটি নির্মাণ করতে চাই। এখন জমা পড়া দরপত্রের কারিগরি মূল্যায়ন চলছে। এরপর চলবে আর্থিক মূল্যায়ন। দুটোতেই যোগ্য দরদাতা নির্বাচনের পর ঠিকাদার নিয়োগ করে জুলাই মাসেই আমরা কাজ শুরু করতে পারব।

জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুততার সাথে। সেই বন্দর তৈরি হবে আগামী ২০২৬ সালে। বাংলাদেশে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) চাইছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আগেই মাতারবাড়ি থেকে সড়কপথে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করতে। সেজন্য আগেভাগেই পোর্ট কানেকটিং সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

সড়কটি নির্মাণে মাঠ পর্যায়ে জরিপ, নকশা তৈরি, প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রস্তুত করেছে জাপানি প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল কোম্পানি। ৪৬৬ কোটি টাকা ব্যয় শেষে ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই চলছে সগকটির নির্মাণ কাজের প্রস্তুতি।

জাপানি প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল কোম্পানির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণে বেশ কয়েকটি বড় সেতু নির্মাণ করতে হবে। এরমধ্যে ১০ কিলোমিটারই হবে সেতু। রেললাইনের কারণে যাতে সড়কপথে গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য তিনটি বড় ওভারপাস নির্মিত হবে। পুরো সড়কটি হবে দুই লেনের বা ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থ।

তবে গভীর সমুদ্রবন্দরের শুরুর দিকে সড়কটি ১২শ মিটার হবে চার লেনের। সড়কটির নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাপানের জাইকা দেবে ৬ হাজার ২শ কোটি টাকা এবং সরকার দেবে ২ হাজার ৬শ কোটি টাকার কিছু বেশি। জমি অধিগ্রহণের জন্য ৮৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। পুরো কাজটি শেষ করতে ৪২ মাস সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালে।

জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা অধ্যাপক মোস্তফা জামান খারেচ বলেন, এমনিতেই পর্যটকদের চাপ চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। গভীর সমুদ্রবন্দরের পণ্য পরিবহন যুক্ত হলে অনেক ভয়াবহ অবস্থা হবে। যা বিদ্যমান সড়ক দিয়ে কখনোই সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। ফলে পোর্ট কানেকটিং সড়কের পাশাপাশি এই মহাসড়ককে ছয় লেন বা এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত করার কাজ জরুরি ভিত্তিতে ২০২৫ সালের মধ্যেই শেষ করতে না পারলে সুফল মিলবে না।

 

পাঠকের মতামত: