ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং- লণ্ডভণ্ড কক্সবাজার সৈকত

জলোছ্বাসে প্লাবিত উপকূল, দেড় হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত আরও ৫ হাজার

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কক্সবাজার উপকূল। এতে সরকারি হিসাবে উপকূলীয় এলাকার প্রায় দেড় হাজার বাড়িঘর সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৫ হাজার ঘরবাড়ি। এছাড়া সামুদ্রিক জলোছ্বাসের তাণ্ডবে মেরিন ড্রাইভের একাংশসহ বিস্তীর্ণ সৈকতের বালিয়াড়ি এবং ঝাউবাগান বিলীন হয়ে গেছে সাগরে। তবে এতে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত প্রায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে কক্সবাজার উপকূলে আঁচড়ে পড়ে ৯১ সালের পর সর্বোচ্চ সামুদ্রিক জোয়ার। এতে জেলার ৭১ ইউনিয়নের মধ্যে সদর ইউনিয়ন খুরুশকুলসহ ৪৭টি ইউনিয়ন ও কক্সবাজার শহরসহ ৪ পৌরসভার দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। সামুদ্রিক জোয়ারের তোড়ে কক্সবাজারের পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও বেড়িবাঁধ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সামুদ্রিক জোয়ারের পানি ঢুকে মৎস্য ঘেরের কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষেত-খামারও।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) মো. জাহিদ ইকবাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলমান রয়েছে। প্রাথমিকভাবে জেলায় ৫ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক এবং ১৪ শত ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধ, ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। জেলার ২ লাখ মানুষ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত এলাকার মানুষের মাঝে খাদ্য, পানীয় জল ও ওষুধসহ অন্যান্য সেবা দেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিদ সাইফ আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে।

এদিকে সামুদ্রিক জোয়ারের তাণ্ডবে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়ন এলাকায় মেরিন ড্রাইভ ভেঙে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এতে মেরিন ড্রাইভে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, সিত্রাংয়ের প্রভাবে সামুদ্রিক জোয়ার স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতায় মেরিন ড্রাইভে আঁচড়ে পড়ে। এতে এ সড়কের দুটি অংশে ১০ থেকে ১৫ ফুট করে রাস্তা ভেঙে গেছে। তবে সোমবার রাত ১১ টার পর জোয়ারের পানি কমে কমে যায়। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ও রাতের জোয়ারের সময় সমুদ্র অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত লোকজন নিজ বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করে। অবশ্য দুর্গত মহেশখালী এলাকার অনেকেই এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

এদিকে সোমবার রাতের সামুদ্রিক জলোছ্বাসের সময় উপকূলজুড়ে আচঁড়ে পড়ে প্লাস্টিক বর্জ্যের বন্যা। এর মধ্যে ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের কাপ, সেন্ডেলসহ ন্যানো ও মাইক্রো প্লাস্টিকের হার বেশি ছিল বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের একদল বিজ্ঞানী গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের কলাতলী, দরিয়ানগর ও হিমছড়ি সৈকত পরিদর্শন করেন। এসময় প্লাস্টিক বর্জ্যের চেয়ে জৈব বর্জ্যের হার অনেক কম দেখা গেছে বলে জানান, প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর।

তিনি বলেন, আমাদের একদল বিজ্ঞানী মঙ্গলবার দিনভর সৈকত এলাকা পরিদর্শন ও বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করেছেন। বুধবারও (আজ) আমাদের বিজ্ঞানীরা সৈকতের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করবেন এবং ড্রোনের মাধ্যমে উপকূলের ভিডিও ফুটেজ ধারণ করবেন। যার মাধ্যমে সৈকতের ভাঙনসহ অন্যান্য কারণগুলো ব্যাখা করা সহজ হবে।

তিনি জানান, ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শহরের লাবণী, ডায়াবেটিক, কলাতলী ও সীগাল পয়েন্ট। এসব পয়েন্টে জিও ব্যাগ ছিঁড়ে বালিয়াড়ি একেবারে বিলীন হয়ে সাগরে মিশে গেছে। বিধ্বস্ত সৈকতের বেশিরভাগ জায়গায় পর্যটক বেড়ানোর অবস্থাও নেই।

পাঠকের মতামত: