ঢাকা,শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

৩৪০ জিওটিউব ও ৭ হাজার জিওব্যাগ মজুদ

ঘূর্ণিঝড় মোখা: অরক্ষিত বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবনের আশঙ্কা

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
কক্সবাজার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূণিঝড় ‘মোখা’। সম্ভাব্য বিপদ সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতেও চলছে প্রস্তুতি। কিন্তু উপকূলের ৩২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকায় প্লাবনের আশঙ্কা করছেন জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা।

বিভিন্ন গ্লোবাল মডেল বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল পলাশ বলছেন ‘ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র অগ্রভাগ ১৪মে সকাল ৬টার পর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত করার আশঙ্কা রয়েছে। এটি স্থলভাগে ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগে আঘাত করবে। এসময় জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।’

এদিকে আবহাওয়ার এমন পুর্বাভাসের পর উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দা ও জনপ্রতিধিরা জানান, স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০-১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে অরক্ষিত বাঁধ দিয়ে লোনা পানি প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

পানি উন্নয়ন উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, কক্সবাজারে ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৩২ কিলোমিটার অরক্ষিত। এর মধ্যে মহেশখালী ১৫ কিলোমিটার এবং কুতুবদিয়ায় ১৫ কিলোমিটার। তবে জনপ্রতিধিদের মতে, কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল, দক্ষিণ ধুরুং, মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা এবং পাশের মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পুরোটাই ঝুঁকিতে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় কুতুবদিয়ায় ২০০টি, টেকনাফে ৪০টি এবং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের জন্য ১০০টি জিওটিউব এবং ৭ হাজার জিওব্যাগ মজুদ আছে। কোনো এলাকায় ভাঙন অথবা পানি প্রবেশের উপক্রম হলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’

মহেশখালীর ধলঘাটার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, ‘ধলঘাটার পশ্চিমে আমতলী থেকে সরাইতলার ৩ কিলোমিটার, পূর্বে বটতলী ঘোনা ও বিএনপি ঘোনা সাইট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার মাটির বাঁধ ঝুকিতে। এছাড়া দক্ষিণে ভারত ঘোনায় বেজার অধিগ্রহণকৃত এলাকা আরো তিন কিলোমিটারে কোন বাঁধ নেই।’

কামরুল হাসান বলেন, ‘এখানে ২০-২৫ হাজার মানুষের বাস। বাঁধ সংস্কারের জন্য চার মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছিলো। কিন্তু তারা আশ্বস্ত করে প্লাবিত হবে না। এই বাঁধের কারণে আরেকটি ৯১ সালের পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।’

মাতারবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আবু হায়দার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে দুর্যোগ মোকাবেলায় কার্যক্রম শুরু করলেও পশ্চিমের বাঁধ খুব নড়বড়ে। বিশেষ করে; জেলেপাড়া, ষাইটপাড়া, খন্দারবিল, রাজঘাট এই এলাকাগুলো খুবই ঝুঁকিতে। যদিও বাঁধের নিচে সাগরে ব্লক ফেলেছে পাউবো।’

এই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল বলেন, ‘ কোনো কোনো অংশে জিওব্যাগ দিয়ে ক্ষতি এড়ানোর চেষ্টা করা হলেও ৯, ৭ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁধ লাগোয়া এলাকাগুলোতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলেই লোকালয়ে প্রবেশ করবে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।’

কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সিকদার বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্র ঠিকঠাক রাখলেও কাজিরপাড়া থেকে তাবলাচর বায়ুবিদ্যুৎ এলাকা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নেই। একটু বাতাস বইতেই পানি পশ্চিম দিক থেকে ঢুকে পূর্বে দিকে বের হবে। এখানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বাস। চাষীরা ধান ঘরে তুলেছে, কিন্তু সবজি ক্ষেতসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্য মতে, উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের হায়দারপাড়া, কাজিরপাড়া, কাহারপাড়া, সাইটপাড়া, কিরণপাড়া, পশ্চিম তাবালরচর, বড়ঘোপ ইউনিয়নের উত্তর বড়ঘোপ, কৈয়ারবিল সাইটপাড়া, উত্তর ধুরুং মিয়ারাকাটা, জুম্মাপাড়া এলাকা বেড়িবাঁধ ভাঙা। এসব এলাকায় সাগরের লোনাপানি ঢুকে তলিয়ে যাবে। বসতিসহ ফসল বিনষ্ট হবে।

পরিবেশ আন্দোলন বাপা কুতুবদিয়া উপজেলার সভাপতি এম. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বীপের চারপাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বাঁধ ভাঙা ও ঝুঁকিপূর্ণ। কিছু এলাকা বেড়িবাঁধ সাগরে বিলীন। পাশাপাশি অরক্ষিত বাঁধ লাগোয়া যারা বাস করে তাদের দ্রুত সরিয়ে আনার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড গোমাতলীতে পাঁচ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার করেছে। তবে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে পানি বাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছি।’

অপরদিকে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ ৯নং ওয়ার্ডের জালিয়াপাড়ার ১ কিলোমিটার বাঁধও ঝুঁকিতে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, ‘ঘূণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর পরে যে সমস্ত বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সবগুলোই সংস্কার করা হয়েছে। ধলঘাটার কোহেলিয়া নদী সংলগ্ন ১৭শ মিটার নতুন বাঁধ নির্মিত হয়েছে। মাতারবাড়ির পশ্চিমে ৪০ হাজার ব্লক সাগরে ফেলা হয়েছে। এখন কোনো অংশ খোলা নেই। আমাদের বাজেট অনুযায়ী সবগুলো সংস্কার করেছি।’

পাঠকের মতামত: