এম.এ আজিজ রাসেল ::
কক্সবাজার জেলায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্লাস্টিকের ডিম বা কৃত্রিম ডিম অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটটি গোপনে জেলার বিভিন্ন স্থানে কারখানা স্থাপন করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্লাস্টিকের ডিম সাপ্লাই করছে। এতে আতংক বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
জানা যায়, প্লাস্টিক বা কৃত্রিম ডিম নিয়ে জনমনে আগ্রহ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। পটিয়ায় বিপুল পরিমাণ কৃত্রিম ডিম উদ্ধার হওয়ার পর এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। উদ্ধার হওয়া কৃত্রিম ডিম গুলো রামু থেকে পাইকারী দরে কিনে নেয়া হয়েছে। রামু উপজেলার এসএইচ পোলট্রি অ্যান্ড ফিড দীর্ঘদিন ধরে গোপনে কারখানা বসিয়ে কৃত্রিম ডিম বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। রামু ছাড়াও জোয়ারিয়া নালা, খরুলিয়া, বাস-টার্মিনাল, লিংকরোড, চকরিয়া, ঈদগাও, খুটাখালী, খুরুস্কুল, পেকুয়া, উখিয়া ও টেকনাফে গোপনে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা কৃত্রিম ডিমের কারখানা স্থাপন করেছে। তার মধ্যে জোয়ারিয়া নালার শফির মালিকানাধিন অমি পোল্ট্রি ফিড এন্ড মেডিসিন সেন্টার, রামুর আব্দুল্লাহর মালিকানাধীন একটি পোল্ট্রি ফিড সেন্টার, খুরুস্কুলে সাদেকের মালিকানাধীন পোল্ট্রি ফিড সেন্টার, লিংক রোডের হোসেন এগ্রোভেট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম ডিম তৈরি করছে বলে জানা গেছে। তাদের আমদানি করা নকল ডিম দেশের বিভিন্ন জেলা-শহরে বিক্রি করা হচ্ছে। নকল ডিম জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক ও আইনগত অপরাধ জেনেও থেকে নেই ওই সিন্ডিকেটের দৌড়ঝাপ। এদিকে পটিয়ার ঘটনার পর ওই সিন্ডিকেটের মূল হোতারা আত্মগোপন করেছে। অনেকেই প্রশাসনের চোখে ধুলো দিতে সাধু সেজে শহরে নানা কর্মসূচী পালন করার পায়তারা করছে। পটিয়ায় প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি বিপুল পরিমাণ কৃত্রিম ডিম উদ্ধারের ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে। তারা হলেন, পটিয়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নজরুল ইসলামের পুত্র মোঃ আরমান (২৩), পেকুয়া উপজেলার আবুল কাশেমের পুত্র মোঃ বেলাল উদ্দীন (৩২) ও এছাড়া রামু উপজেলার বাসিন্দা মাওলানা নুরুল ইসলামের পুত্র নুরুল আবছার (৩০) কে আসামি করা হয়েছে। একই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত দুজন আরমান ও বেলালকে গত (রোববার) পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহিদুল ইসলামের আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে পটিয়ার পুরো উপজেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে এই মামলা আসামী পেকুয়ার বেলাল ও রামুর আবছারকে মামলা থেকে বাচাতে অপতৎপরতা শুরু করেছে তাদের সিন্ডিকেটের লোকজন। তাদের মধ্যে রামুর আবদুল্লাহ, জোয়ারিয়া নালার শফি ও খুরুস্কুলের সাদেক মোটা অংকের টাকা নিয়ে মিশনে নেমেছেন। যার অংশ হিসেবে ১ আগষ্ট মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের সামনে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের চোখে ধুলে দিতে মানববন্ধনের নাটক করেছে। এছাড়া টাকা দিয়ে তারা বিভিন্ন মহলকে মেনেজ করার পায়তারা করছে বলে জানা গেছে। তাই তারাসহ এই সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের ধরতে পারলেই নকল ডিম তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সুধী মহল।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানান, কক্সবাজারে নকল ডিমের কারখানার সন্ধান করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। সঠিক তথ্য পেলে এর সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া পটিয়ার ঘটনায় মামলার আসামীদের বিচার অবশ্যই আদালত করবে। ওই আসামীদের মামলা থেকে প্রত্যাহার করতে কোন মানববন্ধন কাজ হবে না।
উল্লেখ্য- পটিয়া যুগ্ম জেলা জজ আদালতের অধীনে বোয়ালখালী আদালতের বিচারক মো. মনিরুল ইসলাম গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পৌর সদরের কামাল বাজার এলাকার একটি দোকান থেকে ৬টি ডিম ক্রয় করেন। সাদা রঙের ডিমগুলো বাসায় নিয়ে তিনি তা দিয়ে নুডুলস বানাতে গেলে একপর্যায়ে ডিমগুলো ঘোলা হয়ে যায় এবং তা প্লাস্টিকের মতো গলে যায়। এতে বিচারকের সন্দেহ হলে পুলিশসহ বিচারক পুনরায় ডিমের দোকানে গিয়ে প্রায় দুই হাজার ডিম জব্দ করেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দোকান মালিক আরফাতের ছোট ভাই আরমানকে আটক করেছে। মোঃ আরফাতের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ডিমগুলো কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার এসএইচ পোলট্রি অ্যান্ড ফিড নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে পাইকারি কিনেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ওই প্রতিষ্ঠান থেকে পাইকারি ডিম কিনে পটিয়া কামাল বাজার এলাকার তার ডিমের দোকানে বিক্রি করে আসছিলেন। তবে ডিমে ভেজাল আছে কি না তিনি জানেন না বলে জানান। মূলতঃ প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি ডিমগুলো খেলে মানবদেহের লিভার, কিডনি নষ্টসহ মরণব্যাধি ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
পাঠকের মতামত: