ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

গণহত্যার স্পষ্ট আলামত, মিয়ানমারকে বিচারের মুখোমুখি করতে তৎপর জাতিসংঘ

বিদেশ ডেস্ক ::  ২০১৭ সালেই জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দল তাদের অনুসন্ধানে জানিয়েছিল, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘবদ্ধ ধর্ষণকে জাতিগত নিধনের অস্ত্র বানিয়েছে মিয়ানমার। এরপর ২০১৮ সালে ওই অনুসন্ধানী দল পাঁচটি আলামত হাজির করে জানায়, রোহিঙ্গাদের বিতাড়নে কাঠামোবদ্ধ যৌন নিপীড়নকে ব্যবহার করেছে সে দেশের সেনাবাহিনী। একে গণহত্যার আলামত আখ্যা দিয়েছিল তারা। এবার তার সঙ্গে আরও একটি ঘটনাকে যুক্ত করে সংস্থাটির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন দৃঢ়ভাবে বলছে, গণহত্যার উদ্দেশ্যেই সেখানে যৌন নিপীড়নকে ব্যবহার করা হয়েছে। তারা ইঙ্গিত দিয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে বিচারের আওতায় নিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই বছরের সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারের সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর মানবাধিকার হরণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা তদন্তে গঠিত জাতিসংঘের এক অনুসন্ধানী দল জানায়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নারীরা ধারাবাহিকভাবে সে দেশের সেনাবাহিনীর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ঘটনা তদন্তে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে গিয়ে সেইসব ভয়াবহ যৌন নিপীড়নেরা ঘটনা সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয় ওই তদন্ত দল।

২০১৮ সালের আগস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তদন্ত দলটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে পাঁচটি চিহ্ন উল্লেখ করেছিলো। ভাষা ব্যবহার, হত্যাযজ্ঞ চালানোর সময় ও পরে সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ, সামরিক কর্মকর্তার মন্তব্য নিয়েছিলেন তারা। এছাড়াও তদন্তকারীরা বৈষম্যমূলক নীতি ও পরিকল্পনা, ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরিকল্পিত কৌশল ও অভিযানের চরম বর্বরতার আলামত পেয়েছিলেন। এবারের প্রতিবেদনে ষষ্ঠ আলামত যুক্ত করেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন।

২০১৭ সালে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতার অংশ হিসেবে রোহিঙ্গা নারীদের ওপর যৌন নীপিড়ন চালানো হয়। একেই ষষ্ঠ আলামত হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা। প্রতিবেদনে বলা হয়,নারী ও কিশোরীদের কাঠামোবদ্ধ হত্যা ও ধর্ষণ, গর্ভবতী নারীদের ধর্ষণ, শিশুদের ওপর হামলা, জননাঙ্গে আঘাত, স্পর্শকাতর স্থানে হামলা ও তার প্রদর্শন করেছে। এছাড়াও নারীদের এমনভাবে আঘাত করা হয়েছে যেন তারা স্বামীদের সঙ্গে সহবাস করতে না পারে এবং সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে পড়ে। জাতিসংঘ জানায়, এই ষষ্ঠ আলামত থেকে স্পষ্ট হয়, গণহত্যা চালানোর উদ্দেশ্যেই রোহিঙ্গা বিরোধী অভিযান শুরু হয়েছিলো।

মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘের তদন্তকারীদের দেশে প্রবেশ করতে দেয়নি। তারা বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার শরণার্থী শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া ত্রাণ সংস্থা, গবেষণা সংস্থা, সরকারি সংগঠন ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গেও কথা বলেছেন জাতিসংঘ কর্মকর্তারা। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন জানায়, মিয়ানমরা সরকার গণহত্যা কনভেনশন অনুযায়ী দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শত শত রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই সংঘবদ্ধ ধর্ষণ। এই ৮২ শতাংশ ধর্ষণের জন্য সেনা সদস্যরা দায়ী।

দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনও সামরিক নেতা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় কোনও সাজা পায়নি এবং সরকার বারবারই এই দায় অস্বীকার করে আসছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের শীর্ষ দুই সামরিক কর্মকর্তা এখনও তাদের স্বপদে বহাল রয়েছেন। জাতিসংঘ মিশন থেকে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মিশন জানায়, সম্ভব হলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার করা হতে পারে।

তদন্তকারীরা বলেন, তারা অপরাধীদের ব্যাপারে নতুন তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং গোপন এই তালিকাটি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ মিশেল ব্ল্যাচেতের কাছে জমা দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে তাদের বিচারের জন্য আরেকটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

171

পাঠকের মতামত: