ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

‘ক্রসফায়ার’ আতংক মহেশখালীজুড়ে, ইয়াবা চালান ও সেবন অব্যাহত

নিজস্ব সংবাদদাতা, মহেশখালী ::

দেশজুড়ে ইয়াবাবসহ মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় মহেশখালী উপজেলাতে চলছে মহেশখালী থানার চৌকষ ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নেতৃত্বে একের পর এক মাদকবিরোধী অভিযান। ওসির নেতৃত্বে উপজেলার বিভিন্ন মাদকের আখড়ায় অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে মাদক উৎপাদনের ডিপো ও বিক্রির হাট। থানা পুলিশ উপজেলা জুড়ে প্রশংসিত হয়েছেন জনমনে।

আলোচিত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সন্দেভাজনদের দেখা মিলছে না। ইয়াবাবিরোধী বিশেষ অভিযানে মহেশখালীতে ১ জন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার পর এসব গডফাদাররা আত্মগোপনে চলে গেছে। সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের গডফাদার এক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের নাম প্রকাশিত হলে তাকে বাঁচাতে দৌড়ঝাপ শুরু করে দিয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল। তবে এখনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশিত হয়নি। ফলে অনেকেই গোপনে সটকে পড়েছে মহেশখালী থেকে। একই সাথে মহেশখালী থেকে অন্যত্র পালিয়ে গেছে সন্দেহভাজনরাও। ইয়াবা বিরোদী বিশেষ অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে এক র্শীষ ইয়াবা ও অস্ত্র ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার পর এরা আত্মগোপনে চলে গেছে। তবে কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল ইতোমধ্যে সাঁড়াশি অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছেন মহেশখালীতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা বলার পরেই সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ও র‌্যাব। মাদকবিরোধী এই অভিযানে স্বস্তি মিলছে জনমনে। প্রশংসা কুড়িয়েছেন অভিযান পরিচালনাকারীরা। আতংক সৃষ্টি হয়েছে মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীদের মধ্যে। গত ২৪ মে উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মুন্সির ডেইল পাহাড়তলী গ্রামে দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের টাকা ভাগভাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। বন্দুকযুদ্ধের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুঁড়ে এতে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পিছু হটে। পরে পুলিশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে মোস্তাক নামে ইয়াবা ব্যবসায়ীর লাশ ও চারটি বন্দুক ৭ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করে। নিহত মোস্তাক মুন্সিরডেইল গ্রামের আনোয়ার পাশার ছেলে। মোস্তাক নিহত হওয়ার পর থেকে পুরো মহেশখালী উপজেলাজুড়ে চলছে ‘ক্রসফায়ার’ আতংক। সরকারের এ উদ্দেশ্যকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘অভিযান আরও আগে শুরু করা প্রয়োজন ছিল’। আবারও ক্রসফায়ারের মধ্যেও অব্যাহত রয়েছে ইয়াবা চালান ও সেবন সমান তালে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে ছোট-বড় ইয়াবা চালান। মহেশখালীতে স্থলপথে ও সাগরপথে ইয়াবার চালান ঢুকে পড়ার ফলে ইয়াবাপাচার নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃংখলা

বাহিনীর লোকেরা রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছে। মাদক পাচার ও ব্যবসার পাশাপাশি মহেশখালীতে ওয়ার্ডে ও পাড়ায় পাড়ায় খুচরা ইয়াবা ব্যবসার বিস্তার লাভ করেছে। তা নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন মাসিক আইনশৃংখলা উন্নয়ন কমিটির সভায় প্রায়ই সিদ্ধান্ত নিলে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে এর প্রভাব পড়েছে থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের দুঃসাহসিক অভিযানে বলে সচেতন লোকজন জানিয়েছেন। বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মুন্সির ডেইল পাহাড়তলী গ্রামের মোস্তাক আহমদ নিহত হওয়ার পর থেকে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এলাকা ছাড়া হয়ে এখন সাগরে, পাহাড়েও পানের বরজে আশ্রয় নিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। আবার ক্রসফায়ার থেকে বাঁচতে অনেকে ইয়াবা ব্যবসার আড়ালে মুদির দোকান ও বিভিন্ন বেশে ব্যবসা খুলে বসেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ছাড়াও নব্য ইয়াবা ব্যবসায়ীরা গত ২ বছরে একমাত্র ইয়াবার বদৌলতে কালো টাকা ও সম্পদের মালিক বনে গেছেন। চুনোপুঁটিরা আটক হয়ে জেলহাজতে গেলেও রাঘব বোয়ালরা কিন্তু শুরু থেকে আজ পর্যন্ত অধরা থেকে এলাকা চষে বেড়াচ্ছে। এলাকায় এদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান অভিযান থাকলেও তাদেরকে চিহ্নিত করতে পারছে না আইন-শৃংখলা বাহিনী। ফলে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, উপজেলার ৮ ইউপির মধ্যে গোরকঘাটা পৌরসভা এলাকা, কালারমারছড়া, মাতারবাড়ী, ধলঘাট, বড় মহেশখালী, হোয়ানক ইউনিয়নের মাদকসেবন ও বিক্রি বেড়েছে। কালারমারছড়া ইউনিয়নের অফিস পাড়া, মিজ্জির পাড়া, উত্তর ঝাপুয়া, ইউনুছখালী,চালিয়াতলী গ্রামে চলছে ইয়াবা সেবন ও বিক্রি। একই কায়দায় মাতারবাড়ী পুরান বাজার, উত্তর ও দক্ষিন রাজঘাট, নতুন বাজার এলাকা, সিকদার পাড়া, মনহাজী পাড়া, সাইরডেইল ও বলির পাড়াও সৈকত পাড়া এলাকায় চলছে ইয়াবার হাট।
ধলঘাটার সুতুরিয়া, মুহুরী ঘোনা, সাইট পাড়ায় চলছে মাদক বিক্রি। বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মুন্সিরডেইল ও পশ্চিম মাহারা পাড়ায় চলছে ইয়াবা বিক্রি। হোয়ানক ইউনিয়নের বাজার এলাকা, ছনখেলা পাড়া, কালালিয়াকাটায় চলছে মাদকের বিকিকিনি।
মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না। তিনি আরোও বলেন, আইন-শৃংখলা রক্ষার পাশাপাশি ইয়াবা ও মাদক নির্মূলে পুলিশ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে’।

পাঠকের মতামত: