ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

শাখার নামে ১০৫ শতক জমিও কর্মকর্তাদের কব্জায়

কুতুবদিয়ায় গ্রাহকের পৌনে ২ কোটি টাকা নিয়ে উধাও এহ্সান সোসাইটির কর্মকর্তারা

এম.এ মান্নান, কুতুবদিয়া :: কুতুবদিয়ায় এহ্সান সোসাইটি নামের একটি ইসলামি এনজিও সংস্থার কর্মকর্তারা গ্রাহকের পৌণে ২ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা রয়েছে ৮ বছর ধরে। দুই হাজার গ্রাহকের জমা টাকায় জমি কেনার অজুহাত দেখিয়ে আস্তে আস্তে কেটে পড়ে সংস্থার কর্তা ব্যক্তিরা। অনেক তদবির করেও কারো সঠিক ঠিকানা মেলেনি। ঢাকার গুলশানের প্রগতি স্মরণীর বারিধারার প্রধান কার্যালয়ে তালা ঝুলছে সেই থেকে।
এহ্সান সোসাইটি ২০০৩ সালের দিকে উপজেলার ধুরুংবাজারে একটি অফিস নেয় । সুদমুক্ত ঋনদান,অধিক মুনাফা সহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ২০ জন মাঠকর্মী নিয়োগ দিয়ে মাসিক কিস্তির অর্থ জমা নিতে থাকে ডিপিএস একাউন্টের মাধ্যমে। মাঝে-মধ্যে ঋন দিয়ে সততা দেখিয়ে একটি শাখাতেই দরিদ্র ৭ শত সংখ্যালঘু সহ ৮ বছরে ১৯২৯ জন গ্রাহক তৈরি করে। মাঠ কর্মীদের অনেকেই কমিশনের আশায় মিথ্যা কথা বলে সদস্য বাড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রায় ২ হাজার গ্রাহকের অর্থ জমা ১ কোটি ৭৩ লক্ষ ৪৪ হাজার ১৬৫ টাকা। এর থেকে গ্রাহকদের ঋন দেয় ৫৯ লক্ষ ৩১ হাজার ৮৩৯ টাকা। তাদের তৎকালিন মো: ওছমান গণি নামের একজন ম্যানেজারের হিসেব অনুযায়ি ১৪ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা ঋন অনাদায়ি রয়েছে মাঠে।
তারা ৪৩ লক্ষ টাকার সম্পদ দেখালেও এই শাখার অধিনে কক্সবাজার খুরুস্কুল, পেকুয়া ও ধুরুংবাজারে কেনা জমির পরিমাণ ১০৫ শতক। যার তৎকালিন মূল্য সাড়ে ২৮ লক্ষ টাকা। এরমধ্যে পেকুয়ার জমিটি ম্যানেজার ওসমান গণি তার নিজের নামেই রেজিস্ট্রি করে নেন। ২০১৬ সালের দিকে প্রধান অফিস নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় লেখালেখি হলে সটকে পড়ে কর্তারা। জেলায় ৫/৬ টি শাখা বন্ধ করে চলে যায় কর্মকর্তারা। পরে ধুরুংবাজার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত অস্থায়ি ম্যানেজার অফিস ছেড়ে গ্রাহকদের ফাইল, জমির দলিল, আসবাবপত্র গোপনে সরিয়ে ফেলতে গেলে বাজারের গ্রাহকরা দক্ষিণ ধুরুং ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করলে তিনি জব্দ করেন ঐসব জিনিষ।

বাজারের ওই এনজিও এর গ্রাহক হোমিও চিকিৎসক আব্দুল হান্নান, সুনীল নাথ, বিধুবালা, মো: শওকত আলম প্রমূখ বলেন, ধুরুংবাজার শাখায় প্রায় ২ হাজার গ্রাহকের কোটি টাকা জমা নিয়ে সটকে পড়ে কর্মীরা। দীর্ঘ ৮ বছর পার হলেও তারা ডিপিএস বাবদ জমা ফেরত পাননি। এ শাখার অধিনে ১০৫ শতক জমির দলিল থাকলেও তা সংস্থার কর্তৃপক্ষের লিখিত রেজুলেশন বা বিক্রির অনুমিত না থাকায় তা বিক্রি করাও সম্ভব হচ্ছেনা।
দক্ষিণ ধুরুং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ছৈয়দ আহমদ চৌধুরী জানান, এহসান সোসাইটির গ্রাহকদের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। অফিস তালাবদ্ধ সহ সংস্থার কোন কর্মকর্তা কেউ নেই। কারো হদিস মেলেনি মোবাইলেও। ধুরুংবাজার শাখার অধিনে ক্রয়কৃত জমি বিক্রি করা গেলে গ্রাহকরা জমাকৃত অর্থের ৩০ ভাগ ফিরে পেতে পারে। তিনি এহ্সান সোসাইটির তহবিল ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৎকালিন মহাব্যবস্থাপক মুফতি জুনাইদ আলীর সন্ধান করে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত পেতে সরকারের সহযোগীতা কামনা করেন।

পাঠকের মতামত: