এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ২ জুন ॥
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া পানীয় জলের অভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে। সুপীয় পানির জন্য নর্বত্র বিরাজ করছে হাহাকার। গত ২১ মে ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় এই দ্বীপের মানুষের স্বাভাবিক জীবন। দিন দুপুরে চোখের সামনে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, মালামাল পানিতে ভেসে গেলেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় কান্না ছাড়া আর কোন পথ ছিল না ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর। নষ্ট হয়ে যায় অসংখ্য গভীর ও অগভীর নলকুপ। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ছাড়াও অধিকাংশ পরিবারের পুকুরে নোনা জল ঢুকে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে শতাধিক পুকুরে নোনা জলে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় এলাকার লোকজনের মাঝে বায়ু ও পানি বাহিত রোগ ডায়েরিয়া, শিশু নিউমোনিয়া,ভাইরাস জ্বরসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে।
কিছু কিছু এলাকায় গভীর আর অগভীর নলকূপ থাকায় কোন প্রকারে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ প্রাণে রক্ষা পাচ্ছে। নলকূপ নেই এসব এলাকার মানুষ মারাত্মক ভাবে পানীয় জলের সংকটে ভোগছে।
২৯ এপ্রিল স্মৃতি পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ ইয়াহিয়া খান কুতুবী বলেন, উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে সব চেয়ে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ পৌছেনি। সুপীয় পানি পাচ্ছে না এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে ইউনিয়নে প্রায় ৯’শ পরিবারকে নগদ টাকা ও চাল বিতরণ করেছি। জরুরী ভিত্তিতে উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে গভীর নলকূপ স্থাপন করার জন্য সংশ্লিষ্ট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের প্রতি দাবী জানান তিনি।
এব্যাপারে কুতুবদিয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালেহীন তানভীর গাজী জানান, দূর্যোাগে পড়া পুকুরগুলো স্ব-স্ব এলাকার ইউপির অর্থায়নে নিস্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আজম কলোনীর স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল ইসলাম (৭৫) জানান, গেল শতাব্দির ৬০ দশকের পর থেকে মিয়ারঘোনা, আজম কলোনী, নয়া কৈবত্য জেলে পাড়া, সাইট পাড়া, রেইজ্যাপাড়া, এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠে। তখন থেকেই এসব গ্রামে বসবাসরত মানুষ পুকুরের পানি পান করে আসছে। যুগের পর যুগ গ্রাম বাসিরা পানীয় জলের সংকট নিরসনের জন্য জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনের নিকট ধর্ণা দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি এলাকাবাসী।
কুতুবদিয়া উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোরশেদ আলম জানান, খাদ্যগুদাম এলাকায় গভীর অগভীর নলকূপ না থাকায় পানীয় জলের পিপাসা মিটাতে প্রতি কলসি খাবার পানি ১০ টাকায় ক্রয় করে পান করতে হচ্ছে। একই কথা জানান বনবিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এছাড়াও ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় শত শত শিক্ষার্থী পানীয় জলের সংকটে থাকলেও দেখার কেউ নেই বলে জানায় উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ। এধরনে সংকটময় মুহুর্ত পার করছেন পুরো কুতুবদিয়া দ্বীপের মানুষ।
পাঠকের মতামত: