ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

কাল ৫ জানুয়ারি ঘিরে কী হবে মাঠ দখলে রাখবে আওয়ামী লীগ, সংঘাতে জড়াবে না বিএনপি

রাজনৈতিক প্রতিবেদক ::

কাল ‘আলোa_100চিত’ ৫ জানুয়ারি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের তিন বছর পূর্তি। এ দিনে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী প্রধান দুই দলই রাজপথে মিছিল-সমাবেশের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দুই দল। ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ওইদিন ঢাকাসহ সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে বিজয়োৎসব পালন করবে। অন্যদিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে ওইদিন বিএনপি সারা দেশে ‘কালো পতাকা’ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে।

অবশ্য ৫ জানুয়ারি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ আদালতে হাজিরার দিন ধার্য থাকায় দুই দিন পর ৭ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এরই মধ্যে গণপূর্ত বিভাগ বিএনপিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, পুলিশ সমাবেশের অনুমতি দিলে তারা মাঠ ব্যবহার করতে দেবে। তবে গতকাল পর্যন্ত বিএনপি পুলিশের অনুমতি পায়নি বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট কলাম লেখক ও বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে পারে। এতে কারও বাধা দেওয়া উচিত নয়। সরকারি দলের কর্মসূচিতে যেমন বিরোধী দল বাধা দেয় না, ঠিক বিরোধী দলের কর্মসূচিতেও সরকারের বাধা দেওয়া উচিত নয়। ৫ জানুয়ারি দেশের প্রধান দুই দল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আমরা মনে করি, এসব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে। সংঘাত-সংঘর্ষ কাম্য নয়। ক্ষমতার সৎ ব্যবহার ভালো। কিন্তু অপব্যবহার করলে ক্ষমতাসীনদের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। এটা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থীও। ’ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ অধিকাংশ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। একতরফা ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করে। এর পর থেকে প্রতি বছর বিএনপি দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আর আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেয়। ওই সময় বেশ কয়েক দিন দেশ অচল হয়ে পড়ে। হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে সারা দেশে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। প্রায় তিন মাস পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে ২০১৬ সালে দিনটিকে ঘিরে উত্তেজনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত দুই দলই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে।

আওয়ামী লীগ : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিন আগামীকাল ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রাজধানীতে দুটি সমাবেশ ও জেলা-উপজেলায় সমাবেশ করবে দলটি। এ ছাড়া এমপিদের নেতৃত্বে ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় বিকাল সাড়ে ৩টায় একযোগে আনন্দ মিছিল, বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করার কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে যাতে বিরোধী জোট কোনো নাশকতা করতে না পারে সে লক্ষ্যে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া ওইদিন দেশব্যাপী আনন্দ মিছিলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল নারকীয় সহিংসতা ও মানুষ হত্যার ঘটনা ভিডিও প্রদর্শন, পোস্টার-লিফলেটের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ার ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সমাবেশ করবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এতে উপস্থিত থাকবেন। এজন্য কেন্দ্রীয় নেতারা সহযোগী সংগঠন, ঢাকা মহানগর ও বিভিন্ন থানার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়, বর্ধিত সভা করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নগর ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ অংশ নেন। এ ছাড়া বিকালে পল্টন কমিউনিটি সেন্টারে বিশেষ বর্ধিত সভা করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। কাউন্সিলর মোস্তবা জামান পপির পরিচালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সহসভাপতি আশরাফ তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন প্রমুখ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘৫ জানুয়ারি নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যেত। এ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্র রক্ষা করেছি। এ কারণেই বিএনপি আজ কথা বলতে পারছে। কর্মসূচি পালন করতে পারছে। ওইদিন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তারা ভুল করেছে। ’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি যেভাবে জ্বালাও-পোড়াও করেছে, যেভাবে মানুষ হত্যা করেছে; তাতে দেশের জনগণ আগামী দিনে তাদের এ ধরনের কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেবে না। ’ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিন রাজধানীতে জনস্রোত নামবে। বিশাল ও স্মরণকালের শোডাউন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

কর্মসূচি পালনে অনড় বিএনপি : ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনে অনড় বিএনপি। কাল দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কালো পতাকা মিছিল করার কর্মসূচি রয়েছে। ঢাকায়ও ৭ জানুয়ারি কর্মসূচি রেখেছে দলটি। কর্মসূচি পালনে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বিএনপির জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের কর্মসূচি পালনের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সবাইকে কালো পতাকা নিয়ে ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচি পালনের বার্তা পাঠানো হয় কেন্দ্র থেকে। কেন্দ্রীয়ভাবেও কর্মসূচি পালনে ঢাকা মহানগর বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনুমতি পেলে বড় ধরনের সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। দেশে ৫ ভাগ মানুষও ভোট কেন্দ্রে যায়নি। পুনরুদ্ধার হওয়া গণতন্ত্র ওইদিন হত্যা করা হয়। তাই এ দিনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। জানা যায়, রাষ্ট্রপতির সংলাপ শেষের আগে সংঘাতে জড়াতে চায় না বিএনপি। নির্বাচন কমিশন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ কার্যকর ও অর্থবহ হবে এমনটাই প্রত্যাশা দলটির। তা ছাড়া দল এখনো অগোছালো। মামলায় হাজার হাজার নেতা-কর্মী আসামি। দল গুছিয়ে পরে রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তাভাবনা তাদের। তবে নির্বাচন কমিশনে বিতর্কিত লোকের নিয়োগ হলে ওই ইস্যুতে রাজপথে নামবে বিএনপি। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ কর্মসূচি পালন করব। আমাদের কর্মসূচি হবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ। আশা করি, সরকার তাতে বাধা দেবে না। ভোটারবিহীন সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। দেশে আজ বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমরা সেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করছি। ’ সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির কর্মসূচিতে বিএনপি কোনো সংঘাতপূর্ণ কর্মকাণ্ডে জড়াবে না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। ৭ জানুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি না পেলে জোর করে কর্মসূচি পালন করার চিন্তাও নেই দলটির। প্রয়োজনে কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করতে পারে দলটি। সে ক্ষেত্রে সারা দেশে আরও এক দিন যোগ হতে পারে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী জানান, ‘বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। আমাদের কর্মসূচিও গণতান্ত্রিক। তাই ঢাকাসহ সারা দেশে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চাই। আশা করি, সরকার বাধা না দিয়ে কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা করবে।

পাঠকের মতামত: