ঢাকা,বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

করামতের ভাষা বিপত্তি

21-February-400x248আতিকুর রহমান মানিক :::

একুশে ফেব্রুয়ারীর আগের রাতে ঘুমানোর সময় মনে মনে একটা পরিকল্পনা খাড়া করেছিল কেরামত আলী। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বছরের অন্ততঃ একটা দিনে বিদেশী শব্দ পরিহার করে যথার্থ মাতৃভাষা চর্চা করবে সে। একুশের ভোরে ঘুম থেকে উঠে “বিছানা চা” দিতে বলে রীতিমত বউয়ের ধমক খেল বেচারা। বিছানা চা কি জিনিস বেচারী আসলে বুঝতে পারেনি, পরে বেড টি বলার পর চা এল। ফোনের রিংটোন শুনে বড় ছেলেকে ডেকে “ভ্রাম্যমান দুরকথন যন্ত্র” আনতে বললে ছেলে বলল এটা আবার কি জিনিস বাবা ? বুঝাতে না পেরে অবশেষে মোবাইল বলতে হল তাকে। মোবাইলে কিছুক্ষন কথা বলে মেজ ছেলেকে জিজ্ঞেস করল, “গত কয়েকদিন আগে দ্বি চক্রযানে চড়ে মহাবিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় পাশের বাসার ছকিনাকে কি বলেছিলি ? ছেলে অবাক হয়ে বলল, দ্বি চক্রযান, মহাবিদ্যালয় এসব আবার কি? অবশেষে সাইকেল ও কলেজ বলে বুঝাতে বুঝাতে তার অফিসের কলিগ মতলব আলী উঠানে এসে ডাক দিলে ছকিনা প্রসঙ্গ আপাতঃ সেখানেই শেষ। কেরামত বউকে বলল, একটা কেদারা ও চৌপায়া নিয়ে আস। কিছুক্ষন পর কেরামতের বউকে আস্ত একটা কোদাল ও চাপাতি নিয়ে আসতে দেখে ভীতু মতলব আলী পৈত্রিক প্রাণ নিয়ে দৌঁড়ে পালাল। হতভম্ব কেরামত কটমটিয়ে বউয়ের দিকে তাকাতে বউ বলল, তুমি না বললে কোদাল ও চাপাতি নিয়ে আসতে? কেরামত বলল, আরে তোমাকে বলছি কেদারা মানে চেয়ার ও চৌপায়া মানে টেবিল আনতে, মতলব আলীর সাথে পাওনা টাকার হিসাবটা করার জন্য বসব বলে। মন খারাপ করে কেরামত বাসায় ঢুকল। ছোট ছেলেকে বলল, “দুরদর্শন যন্ত্র” ছাড়, খবর দেখি। ছেলে হা করে তাকিয়ে রইল। পরে টেলিভিশন বলাতে ছেলে বুঝল। এভাবে সারাদিন আরও অনেক বিপত্তির শিকার হয়ে বেচারা কেরামতের অবস্হা কেরোসিন। সন্ধ্যায় বাসার উঠানে বসে মশার কামড় খেতে খেতে নিজকেই নিজে প্রশ্ন করল, দায়ী কে ? এমন সময় বউ-ছেলেরা এসে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে লাগল। সুস্হ মানুষ কেরামত আলী ডাক্তারের কাছে কেন যাবে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, সেই ডাক্তার না মানসিক ডাক্তারের কাছে !! এমন সময় শশুর বাড়ী থেকে ফোন এলে বউ কেঁদে কেঁদে বলল “হ্যালো বাবা, তোমরা তাড়াতাড়ি আস, তোমাদের জামাই পাগল হয়ে গেছে, সারাদিন শুধু আবোল তাবোল কথা বলছে!!!

পাঠকের মতামত: