ঢাকা,শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার-১ চকরিয়া-পেকুয়া আসনে বিশাল ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী জাফর আলম বিজয়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে দীর্ঘ ৪৫ বছর পর নৌকা প্রতিক নিয়ে জিতলো আলহাজ্ব জাফর আলম। তিনি প্রায় সোয়া ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের স্ত্রী ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক সাংসদ এ্যাডভোকেট হাসিনা আহমদকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বিএনপির দূর্গ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া চকরিয়া-পেকুয়ায় নৌকার বিজয় নিশান উড়ালেন।এর আগে ১৩৯ টি কেন্দ্রের মধ্যে একটি কেন্দ্র ছাড়া ১৩৮টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট প্রয়োগ শেষ হয়। শুধুমাত্র পেকুয়ার রাজাখালী মাতব্বর পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ হয়।

আজ রবিবার সকাল ১১টায় ওই সংঘর্ষে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দা’য়ের কোপে ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল ফারুক নিহত ও আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা-কর্মী আহত হয়।
নিহত আবদুল্লাহ রাজাখালী ইউনিয়নের উলুদিয়া পাড়ার নুরুল আবছারের ছেলে ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা।আহতরা হলেন- আবু তালেব, রবি আলম, রুহুল কাদের, ফয়সাল  ও হাসুমিয়া। আহতদের মধ্যে গুরুতর দুইজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্যদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকেই চকরিয়া-পেকুয়ার ১৩৯টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন ছিলো। কোন অভিযোগ উঠেনি কোন কেন্দ্রে। এমনকি অন্তত ৫০টি কেন্দ্রে বিএনপির পুলিং এজেন্টের কাছে জানতে চাইলে তারাও কোন অনিয়মের অভিযোগ করেননি প্রতিবেদকের কাছে।তবে, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পেকুয়ার রাজাখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডস্থ মাতব্বর পাড়া কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগ করে দু’শ গজ অদুরে গিয়ে অবস্থান করে আবদুল্লাহ আল ফারুক নামের এক ছাত্রলীগ নেতা। ওই সময় সেখানে অবস্থানরত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাকবিতান্ডা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।একপর্যায়ে বিএনপি’র নেতা-কর্মী ধারালো অস্ত্র ও লাঠি-সোটা নিয়ে হামলা শুরু করে। ওইসময় দা’য়ের কোপ ও লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত আবদুল্লাহ আল ফারুককে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। এতে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। এরপরও দমে থাকেননি নৌকার কর্মীরা। তারা নিজ নিজ এলাকার কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেন।এদিকে, রাত ৮টায় ১৩৯টি কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, নৌকার প্রার্থী জাফর আলম পেয়েছেন ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৬৬ ভোট  ও তার প্রতিদ্ধন্দ্বী ধানের শীষের প্রার্থী হাসিনা আহমেদ পেয়েছেন ৫৩ হাজার ৩৫৭ ভোট। এই হিসেবে নৌকার প্রার্থী জাফর আলম ২ লাখ ২১ হাজার ৬১৯ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন।এ প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে চকরিয়ায় ৯৯টি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী জাফর আলম পেয়েছেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৪৫২ ভোট ও ধানের শীষের প্রার্থী হাসিনা আহমেদ পেয়েছেন ২৭ হাজার ৯০৬ ভোট।পেকুয়া উপজেলার ৪০টি কেন্দ্রের মধ্যে নৌকার প্রার্থী জাফর আলম ৫৫ হাজার ৫১৪ ভোট ও ধানের শীষের প্রার্থী হাসিনা আহমেদ ২৫ হাজার ৪৪১ ভোট পেয়েছেন। নৌকার প্রার্থী জাফর আলমের বাড়ি চকরিয়ায়। অন্যদিকে হাসিনা আহমদের শ্বশুড়বাড়ি পেকুয়ায়।উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ডা.শামশুদ্দিন চৌধুরী নৌকার প্রতিক নিয়ে জিতেছিলেন। এরপর দীর্ঘ নয়টি জাতীয় সঙসদ নির্বাচনে নৌকার কোন প্রার্থী জিততে পারেননি।১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চার দফায় সালাহউদ্দিন আহমদ ও তার সহ-ধর্মীনি হাসিনা আহমেদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। এতে এই আসনটি হয়ে উঠে বিএনপি’র দূর্গ। দীর্ঘ ১০ বছর টানা মাঠে কাজ করে সেই দূর্গ ভেঙ্গে নৌকার কর্মী-সমর্থক বাড়িয়ে ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়নের যাত্রাকে সাধারণ মানুষের মনে জাগিয়ে তুলের জাফর আলম। তারই ফল আসে রবিবার অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে নৌকার বিজয়ের মাধ্যমে।

পাঠকের মতামত: