জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে :: ঢেউয়ে বিলীন হচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সম্পদ ঝাউবন। সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনকারী সবুজ বেষ্টনী ঝাউবন এখন হুমকির মুখে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় জোয়ারের পানির কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যায়। ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙছে বালিয়াড়ি। আর জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২-৭৩ সালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে ঝাউবন গড়ে তোলা হয়। এ সময় বালিয়াড়ির প্রায় ৫শ হেক্টর জায়গায় লাগানো হয় সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি ঝাউগাছ। পরে বাগানের আয়তন আরও বাড়ে। এই সবুজ বেষ্টনী বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি একে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকেও রক্ষা করে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে গড়ে তোলায় হয় লক্ষাধিক ঝাউবন। এই সবুজ বেষ্টনী সৈকতের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দূর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকেও রক্ষা করে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠোর উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় এবং ঢেউয়ের ধাক্কায় সৈকতের বালিয়াড়িতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে ঝাউবীথির গোড়ালি থেকে বালু সরে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ঝাউবনের। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগেও ঝাউবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রতি বৎসর বিলীন হচ্ছে কক্সবাজার সৈকতের ঝাউবন।
স্থানীয়রা জানান, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। বিশ্বের অন্যতম এই সমুদ্র সৈকত গত কয়েক বছরে ভাঙনের শিকার হয়েছে ঝাউগাছগুলো। ভাঙন অব্যাহত থাকায় একদিকে সমুদ্র সৈকতটি হারাচ্ছে সৌন্দর্য অন্যদিকে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ছে সৈকতের জীববৈচিত্রও। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের ঝাউবন।সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈকতের কুতুবদিয়া পাড়া থেকে কলাতলী পর্যন্ত হুমকির মুখে। উপড়ে গেছে শত শত ঝাউগাছ। এসব গাছে আগা কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রয়ে গেছে গোড়ালীগুলো। এখন অনেকটা নিশ্চি??হ্ন হয়ে গেছে পূর্বের গাছের সারিগুলো। ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা অনেক গাছের গোড়া থেকে মাঠি সরে গেছে। কিছু কিছু গাছ চিৎকাৎ হয়ে গেছে পড়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক জিও ব্যাগ দিয়ে রক্ষাবাঁধ দেওয়া হলেও অনেকটা পার হয়েই ঢুকে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জোয়ারের পানি।
কুতুবদিয়া পাড়ার স্থানীয়রা জানান, প্রতিইবৎসরই জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় ঝাউবন। বর্ষায় সময়ও হুমকির মুখে থাকে এসব ঝাউবীথি। জোয়ারের পানিতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ঝাউবনগুলো। সেইহারে নতুন বনায়ন হচ্ছে না। সৈকতের ঝাউবনগুলো রক্ষায় স্থায়ী কোন কিছু করা দরকার। যেটা দিয়ে ঝাউবনও রক্ষা পাবে এবং সৈকতের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে সাগরের উচ্চ জোয়ার ও ঢেউয়ের আঘাতে কক্সবাজার এর বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন দেয়া দেয়। ফলশ্রুতিতে জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ চলমান রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট পোল্ডারের প্রকৌশলীদের নিবিড় মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। ভাঙ্গন এলাকা ইতিমধ্যে সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে। সমুদ্র সৈকতের ভাঙ্গন রক্ষা করতে ইতিমধ্যে জিও ব্যাগ বসানো হয়েছে।
পাঠকের মতামত: