কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচ জন প্রার্থী। এ পাঁচ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদের মালিক আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা প্রতীক) মেয়র প্রার্থী, জেলা আওয়ামী লীগের সধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। তার বার্ষিক মোট আয় ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৪৪০ টাকা। সবচেয়ে কম সম্পদ আছে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী (ধানের শীষ প্রতীক) রফিকুল ইসলামের। তিনি বছরে মোট ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী (নারিকেল গাছ) ও জামায়াত নেতা সরওয়ার কামাল বছরে মোট আয় ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী (হাতপাখা প্রতীক) জাহেদুর রহমান বছরে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী (লাঙ্গল প্রতীক) মো: রুহুল আমিন বছরে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আয় করেন। গত ২৪ জুন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হলফনামায় প্রার্থীরা এই তথ্য উল্লেখ করেছেন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জুন পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: মোজাম্মেল হোসেনের কাছে পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থীরা নিজেদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা জমা দেন।
মেয়র প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষন করে জানা গেছে, পাঁচ মেয়র প্রার্থীরই পেশা হলো ব্যবসা। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাহেদুর রহমান ব্যবসার পাশাপাশি চাকুরী করেন। জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাহেদুর রহমানের কোন ঋণ নেই।
হলফনামা’র তথ্য অনুসারে, পূর্ব নতুন বাহারছড়া এয়ারপোর্ট রোডে বসবাস করা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুজিবুর রহমান বছরে কৃষিখাত থেকে ৩২ হাজার টাকা, বাড়ী ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৪০ টাকা, ব্যবসা থেকে ২ লাখ ১৩ হাজার টাকা ও মৎস্য খামার হতে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেন। হলফনামায় তিনি নিজের ব্যবসা/পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘জেনারেল মার্চেন্টাইস, তৈল ও পত্রিকা’। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। অতীতে ৫ মামলার আসামি হলেও সব মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। মুজিবুর রহমানের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৩ লাখ ৮০৯ টাকা, ১টি করে টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, এসি, ২টি ফ্যান, খাট ১টি, সোফা সেট ২টি, ডাইনিং টেবিল ১টি, চেয়ার ৮টি, ওয়ারড্রোব ২টি ও আলমিরা ১টি। স্ত্রীর রয়েছে ১৩ ভরি সোনা, ১টি করে টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, এসি, ৩টি ফ্যান, খাট ১টি, সোফা ১ সেট , ডাইনিং টেবিল ১টি, চেয়ার ৮টি, ওয়ারড্রোব ২টি ও আলমিরা ২টি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে কৃষি জমি ১ দশমিক ৫১ একর, অকৃষি জমি সাড়ে ৩৬ শতক, সেমি পাকা ঘরসহ ২০ শতক, পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত দ্বিতল বিশিষ্ট একটি বাড়ী, মৎস্য খামার ও পেট্রোল পাম্প। মুজিব তাঁর নির্বাচনী ব্যয়ের সম্ভাব্য আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন নিজ ব্যবসা হতে আয় আড়াই লাখ টাকা, ভাইয়ের কাছ থেকে ধার হিসেবে পাওয়া ৫০ হাজার টাকা ও স্বেচ্ছায় সন্তান থেকে পাওয়া এক লাখ টাকা।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, রফিকুল ইসলামের বার্ষিক মোট আয় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মধ্যম বাহারছড়ায় বসবাসরত রফিকুল ইসলাম নিজের ব্যবসা/পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘সরবরহকারী, কমিশন এজেন্ট ও ঠিকাদারী’। তিনি ‘স্বশিক্ষিত’। রফিকুল ইসলাম বর্তমানে তিনটি ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত। এর মধ্যে দ্রুত বিচার আইনে ২০১৩ সালে দায়ের করা একটি মামলা বর্তমানে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালত ও দ্রুত বিচার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ২০১৬ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা আরেকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে কক্সবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ। এছাড়াও ২০১৩ সালে দায়ের করা একটি জি.আর মামলা কক্সবাজার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে বিচারাধীন। এর আগে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলা ২০০২ সালে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ২০০৫ সালে একটি মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৫০ হাজার, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্টানে জমাকৃত এক লাখ ৩০ হাজার টাকা, দুটি গাড়ী, ২টি টিভি, ১টি ফ্রিজ, ৫ টি ফ্যান, ১টি কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। স্ত্রীর রয়েছে নগদ ২০ হাজার টাকা, ১০ ভরি সোনা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে অকৃষি জমি ৮ শতক ও যৌথ মালিকানায় একটি গৃহ। রফিকের ইসলামী ব্যাংকে ১০ লাখ টাকার একটি ঋণ রয়েছে। তিনি নির্বাচনী ব্যয়ের সম্ভাব্য আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন নিজের ব্যবসা থেকে সম্ভাব্য আয় দুই লাখ টাকা, ভাতিজার কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দুই লাখ টাকা।
মেয়র প্রার্থী সরওয়ার কামালের বার্ষিক মোট আয় ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তিনি কৃষিখাত ও ব্যবসা থেকে এই আয় করেন। উত্তর টেকপাড়ায় বসবাসরত সরওয়ার কামাল তার ব্যবসা/পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘এলপি গ্যাস, রড সিমেন্টের দোকান ও কৃষি জমি’। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ। বর্তমানে সরওয়ার কামাল দুইটি মামলায় অভিযুক্ত। এর মধ্যে ২০১৩ সালে দায়ের করা একটি জি.আর মামলা কক্সবাজার জ্যষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে বিচারের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। একই বছরে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা আরেকটি জি.আর মামলা রাষ্ট্রপক্ষের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা দুইটি মামলা থেকে তিনি বেকসুর খালাস ও দুইটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তিনটি মামলা খারিজ করেছে আদালত। সরওয়ারের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৪৫ হাজার ৩৭৫ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬২৫ টাকা, ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্র সামগ্রী। এছাড়া স্ত্রীর রয়েছে ১০ ভরি স্বর্ণালংকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে কৃষি জমি ১ দশমিক ১৯ একর, অকৃষি জমি ২০ শতক ও স্ত্রীর নামে ৩ শতক জায়গার উপর নির্মাণাধীন চারতলা বাড়ী। ট্রাস্ট ব্যাংক কক্সবাজার শাখায় তার চার লাখ টাকার ঋণ রয়েছে। সরওয়ার নির্বাচনী ব্যয়ের সম্ভাব্য আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন নিজের ব্যবসা থেকে সম্ভাব্য আয় চার লাখ টাকা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী, মোঃ জাহেদুর রহমানের বার্ষিক মোট আয় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তিনি ব্যবসা ও চাকুরী থেকে এই আয় করেন। মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়া বসবাসরত জাহেদুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা দাউরায়ে হাদীস শরীফ। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ১ লাখ ২০ হাজার বিবাহে উপহার প্রাপ্ত স্ত্রীর ১০ ভরি অংলকার। এছাড়া তিনি বিবাহের উপহার হিসাবে বক্স খাট ২টি, সোফা ২ সেট, আলনা ২টি, ওয়াল সো কেচ ১টি ও ২টি আলমিরা দেখিয়েছেন। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে দুটি বসত গৃহ আছে। তার কোন মামলা ও ঋণ নেই। তিনি নির্বাচনী ব্যয়ের সম্ভাব্য উৎস হিসাবে নির্বাচনী ব্যয়ের সম্ভাব্য আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন নিজের ব্যবসা ও চাকুরী থেকে সম্ভাব্য ৩০ হাজার টাকা, বোন ছাদেকা খানমের কাছ থেকে ধার বাবদ ৫০ হাজার এবং খালাত ভাইয়ের কাছ থেকে এক লাখ টাকা, আত্মীয়-স্বজন ব্যতিত অন্য তিন ব্যক্তির কাছ থেকে স্বেছাপ্রণোদিত দান হিসেবে এক লাখ ৫ হাজার টাকা।
জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী, রুহুল আমিন সিকদারের বার্ষিক মোট আয় ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। উত্তর রুমালিয়ারছড়ায় বসবাসরত রুহুল আমিন সিকদার নিজের পেশা/ব্যবসার স্থানে লিখেছেন ‘ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক আপনকন্ঠ’। তিনি দুইটি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একটি মামলা কক্সবাজার জ্যষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে আমলে নেওয়া একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। অপর মামলাটি সমন পর্যায়ে রয়েছে। এর আগে এশটি মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। তার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে নগদ দুই লাখ টাকা ও বিবাহ সূত্রে প্রাপ্ত স্ত্রীর ৪৫ ভরি অলংকার। ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে একটি টিভি, ফ্রিজ ও ওয়াশিং মেশিন। তিনি এইসব উপহার হিসাবে উল্লেখ করেছেন হলফনামায়। বিবাহের উপহার হিসাবে আসবাবপত্রের মধ্যে দেখিয়েছেন বক্স খাট ১টি, সোফা ১ সেট, ডাইনিং টেবিল ১টি, আলনা ১টি, ওয়াল সো কেচ ১টি, আলমিরা ২টি। তিনি পৈত্রিক বাড়ীতে বসবাস করেন। নির্বাচনী ব্যয়ের সম্ভাব্য আয়ের উৎস হিসাবে দেন নিজ ব্যবসা ও পেশাগত আয় দুই লাখ ৫ হাজার টাকা। তার কোন ঋণ নেই।
গত ১০ জুন কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনের তপসিল ঘোষনা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ২৪ জুন। ২৬ জুন মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়। এখন মেয়র পদে পাঁচজন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৭ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ৪ জুলাই প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর ২৫ জুলাই ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।
পাঠকের মতামত: