:: এম.আর মাহামুদ :: কক্সবাজারের নবগঠিত ঈদগাঁওসহ ৯টি উপজেলার উপকূলীয় এলাকার ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড একেবারে সফল নয়, এমন কথা বলা যাবেনা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা শতভাগ সফলতা দেখাতে সক্ষম হলেও আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতাও রয়েছে। বিশেষ করে গেল কয়েক বছর আগে থেকে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাতামুহুরী নদী বেষ্টিত একটি অংশ যেমন- কাকারা-সুরাজপুর-মানিকপুর-বমুবিলছড়ি-লক্ষ্যারচর-ফাঁসিয়াখালীর হাজিয়ান-বরইতলী-পেকুয়ার পুরো অংশ এখন নিয়ন্ত্রণ করছে বন্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাকি অংশ কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। পরিতাপের বিষয় চকরিয়া উপজেলার উপকূল হিসেবে খ্যাত বিএমচর, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা, বদরখালী, পূর্ব বড় ভেওলা ও শাহারবিল, এ ৭টি ইউনিয়ন সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। তৎমধ্যে পূর্ব বড় ভেওলা ও শাহারবিল ইউনিয়ন বিএমচর ও কোনাখালী অংশে ভাঙ্গন সৃষ্টি হলে আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু অপর ৫টি ইউনিয়ন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার নজির রয়েছে বেশুমার।
সম্প্রতি মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য কোনাখালী ইউনিয়নের কইন্যারকুম, মরংঘোনা ও কাইদ্যারদিয়া অংশে প্রায় ১ কোটি ৪১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রায় ৩২ হাজার জিও ব্যাগ ভর্তি বালির বস্তা ডাম্পিং ও প্লেসিংয়ের মাধ্যমে ভাঙ্গন রোধে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ প্রকল্প সমূহের কাজ শুরু করেছে মধ্য জুনে, সম্পন্ন হবে আগষ্ট মাসের মধ্যে। স্থানীয় অভিজ্ঞ জনগোষ্টির মতে এসব কাজ বর্ষা মৌসুমে শুরু করার পিছনে রয়েছে অনেক রহস্য। মাতামুহুরীর ভাঙ্গন রোধ কল্পে এই প্রকল্পের কাজ শুষ্ক মৌসুমে শুরু করা হলে যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হত। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে কি পুরুপুরি সম্ভব!
প্রতি বছর বর্ষা আসলেই পানি উন্নয়ন বোর্ড এই অংশে জিও ব্যাগ ভর্তি বালির বস্তা ডাম্পিং ও প্লেসিং এর কাজ শুরু করে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। কোনাখালীস্থ কাইদ্যার দিয়া এলাকার প্রবীণ এক ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলতে শুনা গেছে- পানি উন্নয়ন বোর্ড যথাসময়ে কাজ করলে বাঘগুজারা হয়ে বদরখালী সড়কটির এমন করুন অবস্থা কোনদিনই হতনা। যাক, তারপরও পানি উন্নয়ন বোর্ড অন্তত শুষ্ক মৌসুমে কাজ না করলেও বর্ষা মৌসুমে কিছু কাজ করে যাচ্ছে, তাও কম কি!
গতকাল শনিবার (২৪ জুলাই) বিকালে কাইদ্যারদিয়া অংশের অবস্থা দেখতে গিয়ে মনে হয়েছে প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে ওই এলাকায় জিও ব্যাগের বালির বস্তা টপকিয়ে উপকূলীয় এলাকায় পানি ঢুকে পড়বে। স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলম এম.এ দাবী করেছেন জরুরী ভিত্তিতে কোনাখালী ইউনিয়নের ৩টি অংশে জিও ব্যাগ ভর্তি বালির বস্তা ডাম্পিং ও প্লেসিং করা না হলে উপকূলের বেশ কটি ইউনিয়ন মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হত। তিনি দাবী করেছেন ওই এলাকার পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে টেকসই বেড়িবাধসহ ব্লক বসানো না হলে পুরোপুরি ভাঙ্গন রোধ করা দুরহ হয়ে পড়বে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বদরখালী শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী ইফতেখার নয়ন দাবী করেছেন- কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন প্রকল্পে বেচে যাওয়া অর্থ দিয়ে কোনাখালী ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত ৩টি অংশে জোড়া-তালি দিয়ে ভাঙ্গন ঠেকানোর কাজ করে যাচ্ছে। যা ঠিকাদারের মাধ্যমে করা হচ্ছে। তিনি আরো দাবী করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড শতবাগ কাজ স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করছে। কথার প্রসঙ্গে একটি গল্পে অবতারনা না করলে লেখাটির পরিপূর্ণতা আসেনা- “একজন বিজ্ঞ আইনজীবির কাছে গিয়েছিলেন একজন ঘটক, শিক্ষানবীস একজন আইনজীবির জন্য বিজ্ঞ আইনজীবির মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে, ঘটকের প্রস্তাব শুনে বিজ্ঞ আইনজীবি বললেন- ছেলেটিকে আমি চিনি, পাত্র হিসেবে ভাল, পারিবারিক ঐতিহ্যও রয়েছে। ছেলেটাকে সন্ধ্যার দিকে আমার চেম্বারে পাঠাবেন। ঘটক বিজ্ঞ আইনজীবির কথামত শিক্ষানবীস আইনজীবিকে পাঠালেন। ছেলেটিকে দেখে বিজ্ঞ আইনজীবি একটি মামলার ফাইল দিয়ে বললেন এই মামলাটি শেষ করতে তোমার কত মিছিল লাগবে বাবা, তখন শিক্ষানবীস আইনজীবি (হবু পাত্র) বলে বসলেন, স্যার আমি ৫ মিছিলে মামলাটি শেষ করতে পারবো। পরে বিজ্ঞ আইনজীবি ছেলেটিকে হালকা আপ্যায়ন করে বিদায় দিলেন। পরে ঘটককে বললেন ছেলেটি আমার খুব ভালো লেগেছে, আমার মেয়েকে পাত্রস্থ করতে পারলে আমি খুশি হব। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একটি, ওই ছেলেটিকে একটি মামলার ফাইল দিয়ে বলেছিলাম, মামলাটি শেষ করতে তার কত মিছিল লাগবে, তখল সে জবাব দিয়েছে, ৫ মিছিলে শেষ করতে পারবে। তাহলে আমার মেয়ের সংসার চালাবে কিভাবে। বিজ্ঞ আইনজীবির অভিমত অন্তত এই ছোট মামলাটি ২৪/২৫ মিছিল পর্যন্ত চালাতে না পারলে ছেলেটাকি সফল আইনজীবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে?”
গল্পটি বলার কারণ একটি, পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি একেবারে টেকসই কাজ সম্পন্ন করে, তাহলে প্রতি বছর বরাদ্দ নিয়ে কাজ করা কি আর সম্ভব হবে। অতএব আর কোন মন্তব্য করলাম না।
পাঠকের মতামত: