চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে কারাগারে নেয়া হচ্ছে ২৩ কোটি টাকা দূর্নীতি মামলার অন্যতম আসামী সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলামকে। এ সময় সংবাদকর্মীরা ছবি তুলতে গেলে লজ্জায় তিনি মুখ ঢাকতে চেষ্টা করেন। হায় লজ্জা! লুটপাটের সময় তুই কয় গেলি?
ইমাম খাইর, কক্সবাজার ::
মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ২৩ কোটি টাকা দুর্নীতির মামলায় এ পর্যন্ত ১১ আসামী গ্রেফতার হন। ওখানে দুইজন ছাড়া বাকীরা কারান্তরীন।
গত ৩ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার সাবেক উচ্চমান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, অ্যাডভোকেট নুর মোহাম্মদ সিকদার ও সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে দুদক টিম।
বৃহস্পতিবার (৩ আগষ্ট) দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আত্মসমর্পনের মাধ্যমে জামিন আবেদন করেন মাতারবাড়ী মাইজপাড়ার বাসিন্দা হাজি আশরাফ জামানের ছেলে জেলা পরিষদ সদস্য রুহুল আমিন, মহেশখালী মুহুরীঘোনার আফলাতুন সিকদারের ছেলে ধলঘাটা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চু, মাতারবাড়ী মাইজপাড়ার মো. রফিকের ছেলে আমিনুল ইসলাম, মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মুহিবুল ইসলাম ও হংস মিয়াজীপাড়ার মৃত শফিউল আলমের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। এরা সবাই ভূঁয়া নামে চেক গ্রহীতা হিসেবে অভিযুক্ত এবং দুদকের চার্জশীটভুক্ত আসামী। একই আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন দুই দিন আগে গ্রেফতার হওয়া সার্ভেয়ার এটিএম বাদশা মিয়া। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মীর শফিকুল আলম জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সার্ভেয়ার বাদশা মিয়া শরিয়তপুর জেলার ভেদেরগঞ্জের উত্তরচর কুমুরিয়া গ্রামের আবদুল জব্বার তালুকদারের ছেলে। তিনি বর্তমানে একই পদে চট্টগ্রামে কর্মরত।
এদিকে উচ্চআদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বৃহস্পতিবার আত্নসমর্পন করে জামিন চান কক্সবাজারের সাবেক সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম। আদালতের বিচারক মোঃ তৌফিক আজিজ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম বর্তমানে চট্টগ্রাম ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি কুমিল্লার দেবিদ্দার উপজেলার ছৈয়দপুর এলাকার মু. মমতাজ উদ্দিনের ছেলে। এর আগে ৩ এপ্রিল দুদক টিম তাকে আরেকবার গ্রেফতার করে। উচ্চআদালত থেকে জামিন নিলেও দুদকের আপিলে পরে বাতিল হয়।
আবুল কাশেম মজুমদার ও অ্যাডভোকেট নুর মোহাম্মদ সিকদার স্থায়ী জামিনে আছেন। বাকী আসামীরা কারান্তরীন।
দুদকের আইনজীবী সিরাজ উল্লাহ ও আবদুর রহিম জানান, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে চিংড়ি খাতের ক্ষতিপূরণে ভূঁয়া লোকজনের নামে ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় হাইকোর্ট নির্দেশ তাদের নিম্ন আদালতে আত্নসমর্পনের নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী আসামীরা আত্নসমর্পন করে জামিন প্রার্থনা করেন। বিচারক তাদের আবেদন নাঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়। স্পেশাল আদালতের এ মামলায় (মামলা নং- স্পেশাল ১২/২০১৭) এরা ছাড়াও সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিন ও সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ জাফর আলম কারাগারে রয়েছেন।
মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষতিপূরণের ২৩ কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগে সাবেক জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)সহ ৩৬ জনের নামে মামলা করেন কক্সবাজারের সাবেক ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান। মামলা নং- জিআর-১০৪০/২০১৪। ৩ জুলাই কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (নং-২১৯) দাখিল করেন দুদকে তদন্ত কর্মকর্তা ছৈয়দ আহমেদ রাসেল।মামলার নথি সুত্রে জানা গেছে, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির বিপরীতে ভুয়া মালিকানা তৈরি করে ক্ষতিপূরণের প্রায় ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযেগে কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সার্ভেয়ার-কানুনগোসহ ১৩ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ২৩ জন স্থানীয় বাসিন্দাসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে দুদক।
মহেশখালীর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় অধিগ্রহণ করা জমির বিপরীতে ২৩৭ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়। এর মাঝে ২৫টি অস্তিত্বহীন চিংড়ি ঘের দেখিয়ে ৪৬ কোটি ২৪ লাখ ৩ হাজার ৩২০ টাকা ক্ষতিপূরণ নিজেদের করায়ত্বে নেয় কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখার উচ্চমান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদারের নেতৃত্বে ৩৬ জনের একটি সিন্ডিকেট।
এ থেকে কৌশলে তারা ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা তুলে নেয়। বাকি টাকার জন্য ইস্যু করা হয়েছিল আরও পাঁচটি চেক। তবে অভিযোগ উঠার পর পাঁচটি চেকের আওতায় নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের বাকি টাকা আটকে দেয়া হয়।
সুত্র জানায়, কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।
এতে জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা জাইকা ২৮ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে ৭ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। বাকি তিন হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড যোগান দেবে।
পাঠকের মতামত: