ঢাকা,মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে সাত বোর্ডে রমরমা জুয়া, চলছে ১৫ পতিতালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::  কক্সবাজার শহরেও রমরমা চলে জুয়ার আসর। শহরজুড়ে প্রতিরাতে জুয়া উৎসব চললেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন তৎপরতা দেখা মিলে না। বিশেষ করে পুলিশ নানা অজুহাতে এসব এড়িয়ে চলেন। এ সুযোগে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে জুয়ার বোর্ডের মালিকেরা।
অন্যদিকে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে এক শ্রেণির ব্যক্তি শহরজুড়ে পতিতায়ল গড়ে তুলেছে। এরফলে দিনদিন বিপদগামী হচ্ছে তরুণ-তরুণীরা। অভিযোগ আছে, এসব পতিতালয় থেকে একটি মহল নিয়মিত মাসোহারা আদায় করে।
২২ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের ঝাউতলা এলাকার হোটেল সী-কুইনে অভিযান চালিয়ে একটি জুয়ার আসর সীলগালা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একটি ক্লাবের নাম দিয়ে জুয়ার বোর্ডটি চালাতেন কয়েকজন প্রভাবশালী। হোটেল সী-কুইনের মালিক জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা কবির আহমেদ।
সূত্রমতে, জুয়ার আসর এবং পতিতালয় নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এসব অবৈধ কর্মকা- কিছু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করারও সাহস পাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের লালদিঘীর পাড়ের জিয়া কমপ্লেক্সের ৪র্থ তলায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব নাম দিয়ে চলছে রমরমা জুয়ার আসর। নামে ক্রীড়া সংগঠন হলেও বাস্তবে খেলাধুলায় কোন অংশগ্রহণ নেই প্রতিষ্ঠানটির। রাতদিন চলে শুধু জুয়া আর মাদকের আসর। এই ক্লাবটি পরিচালনা করে কয়েকজন প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা।
জিয়া কমপ্লেক্সের পূর্ব পাশে ফলের দোকানের পিছনে জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি পরিচালনা করছে আরও একটি জুয়ার আসর। ওই জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন ধরে সাতকানিয়া বোর্ডিংয়ে এ আসরটি পরিচালনা করে আসলেও সম্প্রতি সেখান থেকে জুয়ার আসর সরিয়ে এনেছে ফলের দোকানের পিছনে।
ক্লাবের নাম দিয়ে হোটেল সী-কুইনের তৃতীয় তলায় একটি জুয়ার আসর নির্বিঘেœ চলে আসলেও তা ২২ সেপ্টম্বর রাতেই গুড়িয়ে দিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। হলিডে’র মোড়ে একটি হোটেলেও চলছে জুয়ার আসর। বাস টার্মিনাল ও খুরুস্কুল মন্ডল পাড়াতেও নির্বিঘ্নে চলছে আরও দু’টি জুয়ার আসর।
জমজমাট চলে হোটেল-মোটেল জোনে অবস্থিত দুটি ভ্রাম্যমাণ জুয়ার বোর্ড। এখানে সবচেয়ে বেশি ভিআইপিদের আনাগোনা থাকে। জুয়ার পাশাপাশি মাদকের আসরও বসে সেখানে।
জানা গেছে, প্রতিটি জুয়ার আসর চলে পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে। মাসোহারা নিয়ে পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে থাকায় নির্ভয়ে চলে বোর্ডগুলো। তবে সম্প্রতি সরকার এসব বিষয়ে হার্ডলাইনে থাকায় অনেক জুয়ার বোর্ডের মালিক গা ঢাকা দিয়েছে।
শহরের লালদিঘীর পাড়ের এক ব্যক্তি জানান, অধিকাংশ জুয়ার আসর শহরের প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় সাধারণ মানুষ বিব্রত হচ্ছেন। ২৪ ঘন্টা চলে এসব জুয়ার আসর। ঘরের মালিক বাড়তি ভাড়ায় জুয়া খেলা চালানোর জন্য এসব ঘর ভাড়া দিয়ে থাকে। যারা জুয়ার আসর চালাতে ঘর ভাড়া দেয় তাদেরকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। এছাড়া এসব জুয়ার আসরের নেপথ্যে কারা তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এদিকে জুয়ার আসর ছাড়াও হোটেল মোটেল জোনে ৮টি ও শহরে ৭টি মিনি পতিতালয় এলাকার পুরো পরিবেশ নষ্ট করছে। সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এলাকার একজন ব্যবসায়ী জানান, আমরা পতিতালয় গুলো নিয়ে অনেক সমস্যায় আছি।
হোটেল-মোটেল জোনের ৭টি মিনি পতিতালয়ের মধ্যে রয়েছে ঢাকার বাড়ি ও নিউ ঢাকার বাড়ি। এরমধ্যে একটি পরিচালনা করছে ঈদগাঁও এলাকার আবদুল জব্বার, আরেকটি পরিচালনা করছে একই এলাকার আসিফ। সবুজ হোটেল নতুন ও পুরাতন। এই দুইটি হোটেল পরিচালনা করছে স্থানীয় একজন প্রভাবশালী। তিনি শ্রমিক নেতা হিসাবে পরিচিত। এছাড়া হোটেল বেঙ্গলে চলছে অবৈধ কর্মকান্ড। এই হোটেলের সরওয়ার ইয়াবাসহ আটক হয়ে জেল হাজতে থাকলেও তার ছেলে জনি এই হোটেলটি পরিচালনা করছে। শহরের ঝাউতলায় দুইটি ও লালদিঘীর পাড়ে ৫টি হোটেল মিনি পতিতালয় হিসাবে চিহ্নিত। এসব হোটেলে অনৈতিক কর্মকান্ডে আনা হচ্ছে রোহিঙ্গা যুবতীদের।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের নেতা নাজিম উদ্দিন জানান, এসব কর্মকান্ডের ফল কক্সবাজারের লোকজনকে এক সময় ভোগ করতে হবে। প্রশাসনকে কঠোর নজরদারির মাধ্যমে জুয়ার আসর ও পতিতালয় স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। এসব কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের নাম প্রকাশ করা প্রয়োজন। সমাজের সকল স্তরের মানুষ জানুক কারা অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন জানান, কোন অপরাধী ছাড় পাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছে। এছাড়া সমাজ বিরোধী সকল কর্মকা- বন্ধ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

পাঠকের মতামত: