শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥
কক্সবাজারে সরকারি পাহাড় বিক্রি ও পাহাড় কেটে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের ঘটনা বন্ধে আকস্মিক অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সাথে কমিশনের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে গোপন সংবাদ আসে, স্থানীয় একটি চক্র এবং দখলদারদের মধ্যে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে কক্সবাজার শহরের লাইট হাউজস্থ ফাতের ঘোনা এলাকায় ৫ একর পাহাড় ধ্বংস হয়েছে।
এ অভিযোগ পাওয়ার পরপরই দুদকের মহা-পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরীর নির্দেশে দুটি শক্তিশালী টিম গঠন করে গতকাল দিনব্যাপী সাঁড়াশী অভিযান শুরু করা হয়। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদক চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক লুৎফুল কবীর চন্দন। অভিযানে ছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ বিভাগ, পুলিশ ও র্যাবের একটি য়ৌথ টিম।
দুদক চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক লুৎফুল কবীর চন্দন বলেন, গতকাল দিনব্যাপী শহরের লাইট হাউজের ফাতের ঘোনা পাহাড়ে অভিযান চালানো হয়েছে।
অভিযানে তথ্য পাওয়া গেছে, এ পাহাড়টি প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট দখলে নেওয়ার পর পর্যায়ক্রমে প্লট তৈরী করে কয়েক দফা হস্তান্তর করে লাখ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে। একই সাথে অবৈধ স্থাপনা তৈরীর কাজও চলছে। এতে গডফাদাররা বিপুল অর্থের মালিক বনে যান। এরমধ্যে মূল গডফাদার হিসেবে রয়েছে শহরের টেকপাড়ার মৃত নুরু সওদাগরের ছেলে আজাদ হাসান ও নওশাদ। তারা এসব সরকারি পাহাড় বিক্রির সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে। এতোমধ্যে ৫ একর পাহাড় সর্ম্পূণ কেটে ফেলায় জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
উপ-পরিচালক লুৎফুল কবীর চন্দন আরও বলেন, প্রথম দিনের অভিযানে সরকারি পাহাড় বিক্রি ও অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণে প্রাথমিক জড়িত সন্দহে বেশ কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের কয়েকটি টিমও অভিযান চালাচ্ছে সরকারি পাহাড় বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয়ের অন্যতম হোতা আজাদ হাসান ও নওশাদকে আটক করতে। এবিষয়ে দুদক আইনে মামলাও দায়ের করা হবে। পাশাপাশি অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার পিছনে কারা জড়িত দুদক এবিষয়ে তদন্তও করছে। তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে দুদক।
জানা গেছে, শহরের পূর্ব লাইটহাউজ পাড়ার ফাতের ঘোনার নুরু সওদাগরের ঘোনা এলাকায় গেল বছরের মে মাসের শুরুতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১৫/২০টি গাড়ির বহর নিয়ে প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী একযোগে পাহাড় কাটার একটি স্পট পরিদর্শন করেন। সেখানে জেলা প্রশাসক পাহাড় কাটার কয়েকটি স্পট ঘুরে স্থানীয়দের পাহাড় কাটা বন্ধ রাখতে নির্দেশের পাশাপাশি সচেতনতামুলক বক্তব্য রাখেন। সেখানে ঝুলিয়ে দেয়া হয় সতর্কীকরণ বানী সম্বিলিত লাল ব্যানার। কিন্তু মাত্র ৭ মাসের ব্যবধানে সেখানে কয়েকটি পাহাড়ের পঞ্চাশ শতাংশই কেটে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পরিদর্শন টিম ফিরে যাওয়ার পর পাহাড় কাটা আরও বেড়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানান।
শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বহর নিয়ে জেলা প্রশাসক পাহাড় কাটার স্থান ঘুরে যাওয়ার পর আর কোন কর্মকর্তাই কোন খবর নেননি। সর্বশেষ গতকাল এই পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে ও সরকারি জমি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মাঠে নামেন দুদক।
পাঠকের মতামত: