ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জেল ফেরত দাগি আসামিরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: পর্যটন শহর কক্সবাজারে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জেল ফেরত সন্ত্রাসী ও দাগি অপরাধীরা। এদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে পর্যটক ও পর্যটন ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ থেকে বাস টার্মিনাল হয়ে চন্দ্রিমা হাউজিং পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে দুর্ধর্ষ এ অপরাধী চক্র। স্থানীয়ভাবে এরা নুরাইয়া-সাফু বাহিনী নামে পরিচিত। এ বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য রোহিঙ্গা বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

মাদক কারবার থেকে শুরু করে ভূমিদস্যুতা, চাঁদাবাজি, জমি দখল, ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সবধরনের অপরাধের সঙ্গে এ বাহিনীর সদস্যরা জড়িত। যেখানে অপরাধ সেখানেই রয়েছে এই বাহিনীর হাত। বিশেষ করে বিভিন্ন বিরোধীয় জমি দখলে কন্টাক্টে ভাড়াটিয়া হিসেবে ব্যবহার হয় শহরের আলোচিত এ সন্ত্রাসী বাহিনী। বাহিনী প্রধান সাফু ও নুরাইয়া ইতিপূর্বে মাদকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। জামিনে এসে তারা ফের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সদর উপজেলা হয়ে বাস টার্মিনাল সহ দক্ষিণ ডিককুল, গয়মতলী, পূর্ব লারপাড়া, গরমপানির ছড়া, পশ্চিম লারপাড়া, মাস্টার বদিউর রহমানের ঘোনা, উত্তরণ এলাকা, জেল গেট, শামশু মাস্টারের ঘোনা, ইসলামাবাদ, ঘৃত পল্লী, বনরূপাপাড়া, কলাতলীর বখতিয়ার ঘোনা, আপন নিবাস হাউজিং এলাকা, চন্দ্রিমা হাউজিং ও কলাতলী এলাকা পর্যন্ত বিশাল পাহাড়ি এলাকা এখন এই বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। এরা এতই ক্ষমতাধর যে, প্রকাশ্যে কোনো অপরাধ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কেউই মুখ খুলতে সাহস পায় না।

অথচ এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতি, মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি সহ একাধিক মামলা রয়েছে। এ বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য বিভিন্ন অপরাধে ইতিপূর্বে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছে। কিন্তু কিছুদিন কারাবাসের পর জামিনে বেরিয়ে পুনরায় তারা জড়িয়ে পড়ে অপরাধ কর্মকাণ্ডে। দিনের পর দিন অপরাধ করেও রহস্যজনকভাবে এরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে, এসব অপরাধীর সঙ্গে থানা পুলিশের দালাল বা সোর্সদের রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক। সোর্সরা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে এদের রক্ষার জন্য তদবির করে এবং দখল করা জমি ও মাদকের টাকার ভাগ নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভয়ঙ্কর ও প্রভাবশালী নুরাইয়া ও সাফু বাহিনীতে রয়েছে ডজন খানেক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী যাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করে নুরাইয়া ও সাফু। এলাকায় এদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নাই। অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চোরাকারবারি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অন্যের জমি দখল করাই নুরাইয়া ও ও সাফু বাহিনীর প্রধান পেশা। একাধিক অস্ত্র ও ইয়াবা মামলার আসামি নুরুল ইসলাম প্রকাশ নুরাইয়া ওরফে নুরু ডাকাত সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের পাহাড়ঘেঁষা পশ্চিম লারপাড়ার নুর হোসাইনের ছেলে। আর সাইফুল ইসলাম প্রকাশ সাফুর বাড়ি ঝিলংজা ইউনিয়নের ইসলামাবাদ এলাকায়। তার পিতার নাম ছৈয়দ কাছিম। সেও একাধিক অস্ত্র ও ইয়াবা মামলার আসামি। নুরাইয়া-সাফু বাহিনীর প্রধান সহযোগী হিসেবে রয়েছে জালাল ও আমান উল্লাহ। তাদেরও রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। ঝিলংজা ২ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ ডিককুল এলাকার শামশুল হুদার ছেলে আমান উল্লাহ । তার বিরুদ্ধেও একাধিক অস্ত্র ও ইয়াবা মামলা রয়েছে। একই এলাকার আবদুল হাকিমের ছেলে জালাল আহমদ, বঙ্গোপসাগরে ১৪ মাঝি-মাল্লা হত্যা মামলার আসামি। জাতীয় পরিচয় পত্রে তার ঠিকানা পৌরসভার কলাতলী এলাকা হলেও সে বর্তমানে বসবাস করে আসছে ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককুল গ্রামে।

নুরাইয়া-সাফু বাহিনীর সহযোগী হিসেবে আরও যাদের নাম বেরিয়ে এসেছে তারা হলো কলাতলীর মো. নুর, জেল গেইটের আবুল কাশেম, ঝিলংজা ইসলামাবাদের জাফর, কাজল, মো. আলী, বাসটার্মিনাল পশ্চিম লারপাড়ার শফি আলম, রুবেল প্রকাশ কালা রুবেল, জায়রা, দক্ষিণ ডিককুলের জুবায়ের প্রমুখ। সমপ্রতি এ বাহিনী অসহায় মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকার জমি জোরপূর্বক জবরদখল করেছে। প্রথমে তারা চাঁদা দাবি করে চাঁদা না পেলে নোটারি ও ভুয়া কাগজ তৈরি করে সেই জমির দখল নেয়। এভাবে তারা ১ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ ডিককুল এর আলহাজ নুরুল ইসলাম এর কাছ থেকে ছয় শতক, আবদুল আলিম থেকে ছয় শতক, মৃত আবু তাহেরের পরিবার থেকে ছয় শতক, ঝিলংজা ইসলামাবাদ এলাকার মাস্টার হারুনের কাছ থেকে চার শতক, পশ্চিম লারপাড়ার এক প্রবাসী থেকে ১২ শতক, ইসলামাবাদ ঝিলংজা ১ নং ওয়ার্ডের এডভোকেট বাবুল কান্তি দে’র আট শতক, জেল গেইটের জনৈক নুরুল আলম থেকে আনুমানিক ৩৩ শতক, জনৈক অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি কর্মকর্তার কাছ থেকে কয়েক শতক জমি জবর দখল করে নেয়। ২০১০ সাল থেকে নুরাইয়া মূলত অপরাধ জগতে পা বাড়ায়। এ সময় থেকে তার নেতৃত্বে বিভিন্ন অপরাধকাণ্ড সংঘটিত হতে থাকে। এইসব অপরাধে বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকবার জেলও খাটে। তবে প্রতিবার জেল থেকে বের হয়ে সে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সর্বশেষ সাফু, আমান ও জালালকে সঙ্গে নিয়ে কয়েকটি বাহিনী গড়ে তোলে চালিয়ে যাচ্ছে জমি দখল, মাদক কারবার, অস্ত্র ব্যবসা, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড।

ভুক্তভোগীদের বক্তব্য: কুতুবদিয়ার বাসিন্দা আলহাজ নুরুল ইসলাম ২০১৪ সালে সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ঝিলংজার দক্ষিণ ডিককুল এলাকায় ৬ শতক জমি ক্রয় করেন রেকর্ডীয় মালিক গোলাম মাবুদের কাছ থেকে। এরপর ভোগদখলে থাকা অবস্থায় গেল রমজানে নুরাইয়া বাহিনী নুরুল ইসলামের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেয়ায় একটি ভুয়া স্ট্যাম্প তৈরি করে তার সেই জমি দখল করে নেন।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তৎপর পুলিশ। সব ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ। তিনি বলেন, অপরাধ করে কেউ রেহাই পাবে না।

পাঠকের মতামত: