অনলাইন ডেস্ক :: বিশেষ দায়িত্বে থাকা কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, ‘বিজয় দিবসের ছুটিতে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় সৈকতের ৬টি পয়েন্টে নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে। কালোবাজারির বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিন দিনের ছুটিতে পাঁচ লাখের বেশি পর্যটকের আগমন ঘটেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে।
এরই মধ্যে সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেলের সব কক্ষই অগ্রিম বুকিং হওয়ার খবর মিলেছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এসব বুকিংয়ের অন্তত ৩০ শতাংশ রুম বুকিং কালোবাজারি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানান তারা।
কালোবাজারি চক্রের সদস্যরা রুমগুলো ভাড়া দিতে পর্যটকদের কাছে অতিরিক্ত টাকা দাবি করছে। অগ্রিম বুকিং না দেয়ায় নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত টাকা গুনেই রুম ভাড়া নিচ্ছেন পর্যটকরা।
বিভিন্ন হোটেল-মোটেল সূত্রে জানা গেছে, কালোবাজারি চক্রটি এক মাস আগে থেকে এসব রুম বুক করে রাখে শুধু ১৬ ডিসেম্বরের জন্য। সেন্ট মার্টিনেও একই অবস্থা।
তারা দেড় হাজার টাকার রুম ভাড়া নিয়ে পরে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় ভাড়া দিচ্ছে। অনেক পর্যটকের এতো টাকা দেয়ার সামর্থ্য না থাকায় তারা গাড়িতেই রাত কাটাচ্ছেন।
সরেজমিনে শুক্রবার সকালে পর্যটক সেজে স্থানীয় সী-ওয়ার্ল্ড রিসোর্টে ‘গেলে রুম খালি নাই’ বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হোটেল থেকে বেরিয়ে আসতেই ছুটে আসে দালাল ও কালোবাজারি চক্র। তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে ওই হোটেলেই রুমের ব্যবস্থা করে দেবে বলে জানায়।
তারা প্রতি রাতের জন্য এক রুমের ভাড়া ৫ হাজার টাকা দাবি করে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।
এ সময় তাদের মধ্যে হেলাল নামে একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছরই বিভিন্ন দিবসের আগে আমরা অনেকগুলো রুম বুকিং দিয়ে রাখি। আমাদের হয়ে কাজ করেন রিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা।
‘তারা বাস থেকে পর্যটক নামার পর আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। এরপর আমরা তাদের রুমের জন্য তাগাদা দিই।’
বাস থেকে নামার পর থেকেই দালালদের খপ্পরে পড়তে হয় পর্যটকদের। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি আরও জানান, সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ঘিরে এ রকম শতাধিক দালাল ও কালোবাজারি রয়েছে। তারা একটু বেশি লাভের আসায় পর্যটকদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেয় এবং হয়রানি করে।
রাজশাহী থেকে আসা রইজ উদ্দিনের বৃহস্পতিবারের রাত কেটেছে পর্যটন গলফ মাঠের পাশের পার্কিংয়ে। অনলাইনে যাদের কাছে রুম বুকিং দিয়েছিলেন, কক্সবাজারে আসার পর তারা আর ফোন ধরেননি। ফলে বউ-বাচ্চা নিয়ে বাসেই থাকতে হয়েছে রাতে। ওই বাসে আসা বেশিরভাগ পর্যটকই রাতে সেখানে থেকেছেন বলে জানান রইজ উদ্দিন।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ‘করোনায় লকডাউনের পর হোটেল ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখে কিছুটা হাসি ফুটেছে। পর্যটকরা যেন নিরাপদে হোটেলগুলোতে অবস্থান করতে পারেন, সে জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’ তবে কালোবাজারির প্রশ্নে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটক ভিড় করেন কক্সবাজারে। কোনো পর্যটক যাতে অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
‘বাস থেকে নামার পর হোটেল-মোটেল জোনে প্রবেশ পর্যন্ত পর্যটকদের ওপর নজর রাখছে পুলিশের সদস্যরা। সাদা পোশাকের পাশাপাশি থাকছে গোয়েন্দা নজরদারিও। দালাল ও অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া রোধ করা নিয়েও আমরা কাজ করছি।’
বিশেষ দায়িত্বে থাকা কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, ‘বিজয় দিবসের ছুটিতে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সৈকতের ৬টি পয়েন্টে নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে। কালোবাজারির বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। নিউজ বাংলা
পাঠকের মতামত: