ঢাকা,সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি, জনদুর্ভোগের শেষ নেই

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার :: কক্সবাজার শহর ও পৌরসভার অলিগলির সড়ক, উপ-সড়কগুলোতে চলছে বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি। এসব সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলায় দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না। ফলে শহরের পথচারী ও বাসিন্দাদের কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে যান চলাচল। একটু বৃষ্টি হলেই জমছে কাদাপানি। খানাখন্দে গাড়ির চাকা আটকে ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্বাস্থ্যকর শহর নামে খ্যাত জেলায় এখন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। শুধু বর্ষা মৌসুম নয়, শুষ্ক মৌসুমেও শহরের প্রধান সড়ক, উপ-সড়কসহ অলিগলি সব রাস্তার অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। সড়কের সবখানে ভাঙা, গর্ত ও হাঁটু ও কাদাপানি। এসব পানি সড়কে জমে একাকার। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন পৌরবাসীসহ পর্যটকরা।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) পৌর শহরের প্রধান সড়ক উন্নয়নের নামে খোঁড়াখুঁড়ি করে ৩-৪ ফুট গভীর গর্ত করেছে। পাঁচ কিলোমিটারের পুরোনো সড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শহরের বাইরের ভারী যানবাহন এই সড়ক দিয়ে ঢুকতে পারে না। সড়কের বেহাল দশার কারণে মানুষের হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে গেছে।

শহরের হাসপাতাল সড়কের ব্যবসায়ী আবুল কাশেম নির্মাণাধীন সড়কের তিন ফুট গভীর গর্তে পড়ে পা ভেঙে তিন মাস ধরে শয্যাশায়ী। তিনি বলেন, সড়কের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে শহরবাসী অপরাধ করেছে, তাই যন্ত্রণা দেওয়া হচ্ছে। সড়কের কোথাও পা রাখার জায়গা নেই। এমন উন্নয়নকাজ কোথাও দেখিনি। আগে দেখেছি, সড়কের একপাশ খালি রেখে অন্যপাশে উন্নয়ন কাজ করা হতো। এখন দেখছি, পুরো সড়ক খুঁড়ে ফেলা হয়েছে।

একই কথা বলেছেন শহরের বাজারঘাটা এলাকার ব্যবসায়ী পারভেজ আলম। তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে শহরের প্রধান সড়কের সবকটি এলাকা খুঁড়ে ফেলেছে। কিন্তু খোঁড়ার পর মেরামত করা হয় না। যতটুকু কাজ করবে, ততটুক না খুঁড়ে পুরো সড়ক খুঁড়ে ফেলায় বেকায়দায় পড়েছে মানুষ। পুরো সড়কে দেখা দিয়েছে অচল অবস্থা।

এদিকে, গত দেড় বছর আগে থেকে পৌরসভা সড়ক নির্মাণের কাজ করছে। কিন্তু কাজই শেষ হচ্ছে না তাদের। একসঙ্গে শহরের ২৯টি সড়ক-উপ-সড়ক ভেঙে ড্রেনের কাজ শুরু করেছে তারা। দেড় বছরেও সব ড্রেনের কাজ শেষ করতে পারেনি। ফলে প্রত্যেক সড়ক-উপ-সড়ক অকেজো হয়ে গেছে। যানবাহন চলাচল অনুপযোগী।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল আলম বলেন, পৌরসভা দেড় বছর আগে ২৯টি সড়ক, উপ-সড়কের নির্মাণকাজ শুরু করে। ২৯টি সড়কের ৩২ কিলোমিটার কাজ এখনও শেষ হয়নি। এটি স্থানীয় সরকার বিভাগের মিউনিসিপ্যাল গভর্নরের সার্ভিসেস প্রকল্প (এমডিএসপি) ও ইউজিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই কাজের ব্যয় প্রকল্প ধরা হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে পৌর শহরে বড় ধরনের কোনও বাজেট কিংবা প্রকল্প নিয়ে সড়কের উন্নয়নকাজ করা হয়নি। স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছর ধরে পৌরবাসী সড়ক নিয়ে দুর্ভোগে ছিলেন। এখন পুরো শহরের সব সড়কের পরিকল্পিত উন্নয়নকাজ চলছে। সড়ক উন্নয়নকাজ করতে গিয়ে বর্তমানে কিছুটা দুর্ভোগ হচ্ছে পৌরবাসীর। এই কাজ আগামী ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, শহরের প্রধান সড়কটি অনেক পুরোনো। সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে। তাই শহরের প্রধান সড়কের জিরো পয়েন্ট হলিডে মোড় থেকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পর্যন্ত প্রশস্ত করে ফোরলেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। সড়কের উন্নয়র প্রকল্প হচ্ছে ২৯৪ কোটি ১৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, সড়ক উন্নয়নকাজ করতে গিয়ে সাময়িক চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু কাজ সম্পন্ন হলে যানজট নিরসনের পাশাপাশি পর্যটন শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।

গত ৯ জুন কক্সবাজারের হোটেল শৈবালে এক কর্মশালায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী কক্সবাজার শহরের সড়কের দুরবস্থা দেখে বলেছেন, পর্যটন শহরের রাস্তার এমন অবস্থা ভাবা যায় না। বিমান বন্দর থেকে যাওয়ার পথে সড়কের এমন করুণ দশা দেশের কোথাও নেই। এমন সড়ক দেখে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে যেন বিরূপ ধারণা না হয়, সে জন্য দ্রুত সড়ক উন্নয়ন করতে হবে। সুত্র: বাংলাট্রিবিউন

পাঠকের মতামত: