কক্সবাজার প্রতিনিধি :: বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া একটি ট্রলার থেকে গত রবিবার (২৩ এপ্রিল) ১০ জনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় ৬৪ জনকে আসামী করে আজ মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) কক্সবাজার সদর খানায় একটি মামলা করা হয়েছে এবং মামলার দুই আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নিহত ট্রলার মালিক সামশুল আলম প্রকাশ সামশু মাঝির স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, মামলার এজাহারে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
মামলার এজাহারভুক্ত ১ নম্বর আসামী মাতারবাড়ির এলাকার ট্রলার মালিক বাইট্টা কামাল ও ৪ নম্বর আসামী ট্রলার মাঝি করিম সিকদারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
তিনি জানান, আসামীদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে প্রেরণ করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া একটি ট্রলার থেকে গত রবিবার ১০ জনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার হয়। তাদের মধ্যে তিনজনের হাত-পা ছিল বাঁধা, আরেকজনের মাথা ছিল শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন। সাগরে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি অন্য একটি মাছ ধরার ট্রলারের জালে আটকা পড়ে।
পরে ওই ট্রলারটির জেলেরা ডুবো ট্রলারটিকে রশি দিয়ে টেনে গত রবিবার দুপুরে শহরের নাজিরারটেক সমুদ্র উপকূলে নিয়ে আসে। এসময় ট্রলারটিতে মরদেহ থাকার বিষয়টি দেখতে পেয়ে তারা পুলিশকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ট্রলার থেকে ১০ জনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলাপাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে সামশুল আলম (২৩), শাপলাপুর ইউনিয়নের মিটাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের ছেলে শওকত উল্লাহ (১৮), মুসা আলীর ছেলে ওসমান গনি (১৭), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (২৮), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪), শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান (৩৫) ও চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক জিয়া (২৫)।
তবে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জনের মরদেহ শনাক্ত করেছেন তাদের স্বজনরা। শনাক্ত ছয়জনের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ বাকী চারটি মরদেহের পরিচয় শনাক্তের জন্য ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করেছে।
তবে প্রাথমিকভাবে এ ৪ জনকে শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪) বলে স্বজনরা দাবি করেছেন।
হস্তান্তর হওয়া মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে সামশুল আলম প্রকাশ সামশু মাঝি, চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক, শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ, চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান, শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের মুসা আলীর ছেলে গণি ওসমান, একই ইউনিয়নের মোহাম্মদ হোসানের ছেলে নুরুল কবিরের মরদেহ নামাজে জানাজা শেষে স্ব স্ব এলাকায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
পাঠকের মতামত: