অনলাইন ডেস্ক :: কক্সবাজার জেলা সদরসহ আট উপজেলার ৩৪ রুটে লাইসেন্সবিহীন সাড়ে ৯ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলছে। এতে সরকার শুধু লাইসেন্স বাবদ রাজস্ব হারিয়েছে ১১ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। লাইসেন্স করা হলে এসব অটোরিকশা থেকে বাৎসরিক নবায়ন ফি ৬ কোটি ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা রাজস্ব পাওয়া যেত। ২০১৭ সাল হতে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (আরটিসি) কর্তৃক কক্সবাজারে সিএনজিচালিত অটোরিশারর লাইসেন্স দেয়া বন্ধ থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হলেও বসে নেই কোনো সিএনজি। আবেদন করে লাইসেন্স না পেলেও ট্রাফিক অফিস, সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ কিংবা কোনো গ্রুপকে ম্যানেজ করেই সড়কে-মহাসড়কে চলাচল অব্যাহত রেখেছে সিএনজিগুলো।
এতে নাম্বারহীন সিএনজি ব্যবহারে অপরাধ বাড়ছে বলে দাবি করেছেন বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। ফলে অনেক স্পর্শকাতর অপরাধের ক্লু উদঘাটনও মুখথুবড়ে পড়ে আছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। যদি লাইসেন্সই না দেয়া হয় তাহলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির (বিআরটিএ) কক্সবাজার সার্কেল অফিসের কার্যক্রম চালু রেখে কাজ কি? এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের।
কক্সবাজার বিআরটিএ অফিস সূত্র মতে, জেলা সদরসহ আটটি উপজেলার মহাসড়কসহ ৩৪টি অভ্যন্তরীণ রুটে বৈধ ও অবৈধ মিলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে প্রায় ১৬ হাজার । এর মাঝে ২০০০ সাল হতে ২০১৬ সালের শেষ সময় পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে ৬ হাজার ৪৭টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এসব অটোরিকশার মাঝে ফিটনেসহীন হয়েছে প্রায় দুই হাজার। আর অকেজো হয়ে আছে আরও দেড় হাজারের মতো। কিছু অটোরিকশার মেয়াদ শেষ হলেও বছরের পর বছর নবায়ন করছেন না মালিকরা। সবমিলিয়ে ২ হাজার ২০০ পর্যন্ত বৈধ অটোরিকশা বিআরটিএ অফিসের সঙ্গে যোগাযোগে থাকলেও সড়কে চলাচল রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার সিএনজি।
কক্সবাজার জেলা সিএনজি অটোরিকশা-অটোটেম্পু মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ ছিদ্দিক জানান, কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটা, ভোলাবাবুর পেট্রল পাম্প, লালদীঘিরপাড়, কোট বিল্ডিং, কলাতলির মোড় স্ট্যান্ড থেকে ১০টি অভ্যন্তরীণ রুটে সহস্রাধিক সিএনজি অটোরিকশা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াত করছে। এসব ছাড়াও রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, সদরের ঈদগাঁও, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় অভ্যন্তরীণ ২৪টি রুটে ১০ থেকে ১২ হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। প্রতি উপজেলার ইউনিয়নসমূহে পরিবেশবান্ধব দ্রুতগামী যান হিসেবে সিএনজি অটোরিকশার কদর বেশি। কারণ এসব সড়কে কোনো মিনিবাস চলাচলের সুযোগ নেই। সুতরাং চাহিদার কারণে নিত্যদিন নতুন সিএনজি রাস্তায় নামছে। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকায় অবৈধ উপায়ে চলাচল অব্যহত রাখতে হচ্ছে।
সূত্র মতে, কক্সবাজারের সিএনজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান উত্তরা মটরস, টিভিএস, র্যাংগস ও এনআই সিন্ডিকেট, কে ডি এম এন্টারপ্রাইজ, বাজাজ শোরুম, এম এস এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই ২০১৭ সাল হতে ২০১৯ সালের চলতি সময় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৯ হাজার সিএনজি অটোরিকশা বিক্রি হয়েছে। চট্টগ্রামের নিকটবর্তী পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলার শেষপ্রান্তে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শো-রুম হতে আনা হয়েছে আরও বেশ কিছু সিএনজি অটোরিকশা। শো-রুম থেকে আনার পর পরই সড়কে চলাচল শুরু করা হলেও এসব সিএনজি অটোরিকশার এখন পর্যন্ত লাইসেন্স করা হয়নি।
শো-রুম কর্তৃপক্ষের দাবি, অবৈধ হিসেবে চলাচলরত এসব সিএনজি অটোরিকশাগুলো রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা গেলে সরকার লাইসেন্স বাবদ রাজস্ব পেত প্রায় ১১ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর নবায়ন হিসেব করলে বিগত তিন বছরে আরও বাড়তি রাজস্ব আদায় হতো প্রায় ১৭ কোটি টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন সিএনজি অটোরিকশা মালিক এবং চালক জানিয়েছেন, যানজট সৃষ্টির অজুহাতে ২০১৭ সাল হতে আরটিসির নির্দেশনায় রেজিস্ট্রেশন দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে কক্সবাজার বিআরটিএ অফিস। রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকায় নতুন সিএনজিগুলো ‘কক্সবাজার-থ-১১-’ সিরিয়াল নাম্বার দিয়ে বাকিটা খালি রেখে চালানো হচ্ছে। সড়কে সমস্যা এড়াতে মাসিক ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকায় ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের টোকেন কিংবা উপজেলাভিত্তিক ‘অটোরিবশা মালিক-চালক সমিতি’ বা অন্য কোনো সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে বিনা বাধায় চলাচল করছে এসব সিএনজি অটোরিকশা। ফলে বিআরটিএ অফিসে যাওয়ার প্রয়োজনও মনে করছেন না তারা।
মহাসড়কগুলোতে রামু তুলাবাগান হাইওয়ে ক্রসিং থানা, কক্সবাজার শহর ট্রাফিক অফিস, ডুলাহাজারা মালুমঘাট হাইওয়ে ফাঁড়ি, চিরিংঙ্গা হাইওয়ে ফাঁড়ি হতে টোকেন সরবরাহ দেয়া হয়। উপজেলা ও ইউনিয়ন ভিত্তিক উপসড়কে সমিতির তদারকিতে চলাচল করে সিএনজিগুলো।
চালক ও মালিকদের মতে, পুলিশের মাসিক টোকেনটাই বড় লাইসেন্স। বৈধ লাইসেন্স থাকলেও বিভিন্ন সময় এটা-সেটা বলে যানবাহন ধারায় মামলা ও জরিমানা দিয়ে হয়রানি করা হয়। কিন্তু টোকেন থাকলে অপরাধ করলেও কোনো মাথা ব্যাথা থাকে না।
তবে চালক ও মালিকদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল চন্দ্র বণিক বলেন, অবৈধ সিএনজি অটোরিকশাসহ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। অবৈধ যানবাহন পেলেই যানবাহন নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারায় মামলা দিয়ে জরিমানা করা হয়। এতে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব পাচ্ছে।
বিআরটিএ কক্সবাজার সার্কেল অফিসের মোটরযান পরির্দশক আরিফুল ইসলাম টিপু বলেন, মহাসড়কে চলাচলের কোনো বৈধতা না থাকলেও পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লাইসেন্স নিয়ে সব সড়কে চলাচল করছে ইজিবাইক (টমটম)। কক্সবাজার পৌরসভা থেকে আড়াই হাজার লাইসেন্স নিয়ে অন্তত ৮ হাজার টমটম শহরে চলাচল করছে। অন্য সড়কে চলছে আরও কয়েক হাজার। এসবের কারণে কক্সবাজার পৌরশহরসহ মহাসড়কেও যানজটের মূল কারণ টমটমই। কিন্তু যানজটের অজুহাতে ২০১৭ সাল হতে পরিবেশবান্ধব সিএনজি অটোরিকমার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ ঘোষণা করেছে কক্সবাজার আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (সিবিআরটিসি)।
বিআরটিএ কক্সবাজার সার্কেলের সহকারী পরিচালক উথোয়াইনু চৌধুরী বলেন, লাইসেন্স না পেলেও সড়কে চলাচল থেকে বিরত নেই শো-রুম থেকে কেনা সিএনজি অটোরিকশাগুলো। অবৈধ হলেও যে কোনো ভাবে চলার চেয়ে বিআরটিএ’র লাইসেন্স দেয়া গেলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পাবে। নবায়নেও মিলবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। দেশের স্বার্থে রেজিস্ট্রেশন চালু করা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। জাগো নিউজ
পাঠকের মতামত: