ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে অতিবর্ষণে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকিও

নিজস্ব প্রতিবেদক ::  কক্সবাজারে গত সপ্তাহ থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মাঝে মাঝে ভারী বৃষ্টিও হচ্ছে বিভিন্ন উপজেলায়। এরই মধ্যে শনিবার উখিয়া ও টেকনাফে পাহাড় ধসে দুই রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছে আরও ৪ জন। নিহতরা হলো, টেকনাফের চাকমারকুল ক্যাম্পের নুরুল আলমের স্ত্রী নূর হাসিনা ও উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের রহিম উল্লাহ।

এছাড়া ভারী বর্ষণে রোববার (৬ জুন) দিবাগত রাতে খুরুশকুল পূর্ব হামজার ডেইল এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এ সময় নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শাহানু আক্তার আহত হয়। পাহাড়ধসের পাশাপাশি ঘরবাড়িও বিলীন হয়েছে অনেকের। অনেক জায়গায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে সড়ক যোগাযোগও।

এরপরও জেলার বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী অন্তত ২ লাখ মানুষকে সরিয়ে আনা যাচ্ছে না। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় থেকে সরে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কক্সবাজার পৌরসভায় দিন-রাত মাইকিং করে যাচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরে আনতে। কিন্তু এতে কেউ সাড়া দিচ্ছে না।

পরিবেশ সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার পৌরসভার অন্তত ১২টি পাহাড়ে বসবাস করছে আড়াই লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে আছে অন্তত ৪০ হাজার। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সরেজমিনে কক্সবাজার শহরতলীর ফাতেরঘোনা, বৈদ্যঘোনা, মোহাজেরপাড়া, লাইটহাউস, ঘোনারপাড়া, কলাতলীর উত্তর আদর্শগ্রাম, দক্ষিণ আদর্শগ্রাম, চন্দ্রিমার ঘোনা, বখতিয়ার ঘোনা, লারপাড়া, বাস টার্মিনাল এলাকার, বাদশাঘোনা, পাহাড়তলী ও খাজামঞ্জিল পাহাড়ে দেখা গেছে, পাহাড়ের খাদে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ বসতি। এসব পাহাড়ে বসবাস করছে মানুষ।

জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কার্যালয় সূত্র জানায়, পৌরসভার অভ্যন্তরে ১২টির বেশি পাহাড়ে ভূমিধসের ঝুঁকিতে আছে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। এসব পাহাড়ে ১২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি তৈরি করে বসতি করেছে দুই লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে অন্তত ৮০ হাজার মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, ‘মাইকিং কিংবা প্রচার-প্রচারণায় পাহাড়ধসের ক্ষতি পুরোপুরি ঠেকানো যাবে না। পাহাড়ের নিচে অবৈধ বসবাসকারীদের অনতিবিলম্বে কক্সবাজারের বৃহৎ স্বার্থে সরিয়ে নিতে হবে। উচ্ছেদ করতে হবে অবৈধ স্থাপনা। নতুন করে পাহাড়ের নিচে যাতে কেউ অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলতে না পারে, তা প্রশাসনের নজরদারিতে রাখতে হবে’।

পরিবেশবাদী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলস’র প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, গত ১০ বছরে একাধিক পাহাড়ধসের ঘটনায় ছয় সেনাসদস্যসহ অন্তত ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে কক্সবাজারে। সর্বশেষ শনিবার (৫ জুন) পাহাড় ধসে উখিয়া-টেকনাফে দুই রোহিঙ্গা নিহত হয়। ভারী বর্ষণে পাহাড়ের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরে ভূমিধসের ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন, পাহাড় কাটার কারণে পাহাড়ধসের ঝুঁকি বাড়ছে। আগে পাহাড় কাটা রোধ করতে হবে। তাহলে ধসের পরিমাণ কমে যাবে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদাসীনতা রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ভারী বর্ষণে ভূমিধসে প্রাণহানি ঘটতে পারে, তাই লোকজনকে পাহাড় ছাড়তে অনুরোধ জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। স্বেচ্ছায় তারা সরে না এলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, পাহাড় কাটার মাটি বৃষ্টির পানির সঙ্গে ভেসে এসে শহরের নালা-কালভার্ট ভরাট হচ্ছে। এতে বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হবে শহরের অলিগলি। মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।

এদিকে ভারী বৃষ্টিতে মহেশখালী উপজেলায়ও পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির লোকজনকে অন্যত্র সরে যেতে মাইকিং করে প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু পাহাড়ে বসবাসরত লোকজনের ভেতর এ নিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০০৭, ২০০৮ ও ২০১২ সালে ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে একই পরিবারের আটজনসহ ১২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। এরপরও ছোট মহেশখালী, শাপলাপুর, কালারমারছড়া ও হোয়ানক ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে।

পাঠকের মতামত: