ঢাকা,শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারের বাতিল প্লটে কী হবে?

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::  বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে ইজারা দেয়া কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল-মোটেল জোনের এক একর বিশিষ্ট ৫৭টি প্লট উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিলের পর এ প্লটে সরকারের নতুন পরিকল্পনা কী- তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফিরে পাওয়া প্লটগুলো পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক। তবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান সরকারের কোন পরিকল্পনার বিষয়ে অবহিত নন বলে জানান।
গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসন বাতিল প্লটগুলোর সামনে সাইনবোর্ড পুঁতে দিলেও এরমধ্যে বেশ কয়েকটি প্লটে মার্কেটসহ কয়েকশত স্থাপনা রয়েছে। সে স্থাপনাগুলোর দোকান, রেস্তোরাঁ, অফিস আগের লীজগ্রহীতার কর্তৃত্বে চালু রয়েছে। তবে বাতিল প্লটের অধিকাংশই খালি। সেখানে উল্লেখযোগ্য কোন স্থাপনা নেই। কেবল ডজন দেড়েক প্লটে পাইলিংসহ ভিত্তি দিয়েই শেষ। ফলে বাতিল হওয়া প্লট মালিকরা চূড়ান্ত আদালতের রায়ে হেরে যাওয়ায় চোখে এখন অন্ধকার দেখছেন। পাশপাশি যারা প্লট কেনার জন্য ইতোপূর্বে বায়নাবদ্ধ হয়েছেন, তারাও এখন মাথায় হাত দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের ব্যবসায়ী ভুলু সওদাগর জানান, বাতিল প্লটের অধিকাংশই হাতবদলের জন্য বায়নাবদ্ধ। একেকটি প্লট ২২ থেকে ২৫ কোটি টাকায় বিক্রির চুক্তিতে ৫ থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্রিম নিয়েছেন লীজ গ্রহীতারা। ফলে জমির কেনার বায়না করে অন্তত ৩০/৩৫ জন ব্যবসায়ী সর্বশান্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি। বাতিল একটি প্লটের লীজ গ্রহীতা নুরুল আবছার জানান, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তাদের প্লটগুলো বাতিল হয়ে গেলেও আদালত কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী যেসব প্লটে মার্কেটসহ স্থাপনা রয়েছে সেগুলোর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। প্লটগুলো যদি আবারও ইজারা দেয়া হয়, তাহলে আগের লীজগ্রহীতারাই অগ্রাধিকার পাবেন। এবিষয়ে আদালতের মোট ১২টি নির্দেশনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি দাবি করেন, মূলত: পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) আইনে প্লটগুলো বাতিল করা হলেও প্লটগুলোর অবস্থান ইসিএ এলাকায় নয়। এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশগত ছাড়পত্রও রয়েছে।
কঙবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, ফিরে পাওয়া প্লটগুলো সরকারি কাজে ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে। এবিষয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে বলে তিনি জানান।
তবে বাতিল প্লটে সরকারের কোন পরিকল্পনার বিষয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অবহিত নয় বলে জানান এর চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল(অব:) ফোরকান আহমদ।
গতরাতে তিনি বলেন, কক্সবাজার সাগরপাড়ের হোটেল-মোটেল জোনের বাতিল হওয়া প্লটে সরকারের কী পরিকল্পনা রয়েছে, তা আমার জানা নেই। বিষয়টি এখনও আমাকে অবহিত করা হয়নি।’ তবে সরকারের পরিকল্পনায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে যুক্ত করলে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী তিনি কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেবেন বলে জানান। বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে ইজারা দেয়া প্রায় ৭১টি প্লটের মধ্যে শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ৫৯টি প্লট বাতিলের সুপারিশ করে ২০০৯ সালের জুলাইয়ে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটি। এরই প্রেক্ষিতে ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বরের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোনের এসব প্লট বাতিল ঘোষণা করা হয়। এরপর জমি গুলোতে লাল পতাকা পুঁেত দিয়ে সরকারের দখলে আনা হয়। পরে এ বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ইজারা গ্রহীতারা। এরপর দীর্ঘ শুনানী শেষে হাইকোর্ট সেই রিট খারিজ করে দিলে ফের সুপ্রীম কোর্টের শরণাপন্ন হন ইজারাগ্রহীতারা। সেখানেও হেরে যাওয়ার পর সর্বশেষ রিভিউতেও ইজারাগ্রহীতারা হেরে যান। আদালতের রায় পর্যায়ক্রমে আসায় গত সপ্তাহে সর্বশেষ রায়ের ভিত্তিতে ৫৭টি প্লট সরকারের দখলে এনে সেখানে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নামে সাইনবোর্ড পুঁতে দেয়া হয়। মৌজা দাম অনুযায়ী প্লটগুলোর মূল্য ৫শত কোটি টাকা হলেও বর্তমান বাজার মূল্য তার তিনগুণ বা প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।

পাঠকের মতামত: