কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজারে ডেঙ্গুর অন্যতম প্রধান স্পট হলো রোহিঙ্গা শিবিরগুলো। সেখান থেকে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম-গঞ্জে ও জেলাব্যাপী। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে ৬৫ জন এবং নবগঠিত উপজেলা ঈদগাঁওয়ে ৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আগে গ্রামে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার অস্তিত্ব ছিল না। এখন আছে। এটা উদ্বেগজনক। অবশ্য স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, বৃষ্টি কমে যাওয়ায় বর্তমানে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ও জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
দেশে ডেঙ্গুর অন্যতম প্রধান স্পট হিসেবে পরিচিত কক্সবাজারে গত ১০ মাস ১২ দিনে ১৫ হাজার ৩৮০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে রোহিঙ্গা ১২ হাজার ৯৯৪ জন এবং স্থানীয় দুই হাজার ৩৮৬ জন রয়েছে। এ সময়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের। মৃতদের মধ্যে রোহিঙ্গা ৩৩ জন ও স্থানীয় পাঁচজন। গত জানুয়ারি থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত এসব তথ্য জানা গেছে, কক্সবাজারের সিভিল সার্জন অফিস ও রোহিঙ্গা শিবিরের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর অন্যতম প্রধান স্পট রোহিঙ্গা শিবিরগুলো থেকেই ডেঙ্গু ছড়িয়েছে জেলাব্যাপী। ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে। তখন রোহিঙ্গা শিবিরেই সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছিল। এ সময় আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যাও ছিল উদ্বেগজনক। তবে বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান এবং কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের সুপার ডা. মুমিনুর রহমান।
সিভিল সার্জন বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে সর্বত্র এবং রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দিয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। ’
জেলা সদর হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘জেলার একমাত্র উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে জেলা সদর হাসপাতালের সিটে দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন থাকত। সেই সংখ্যা বর্তমানে অর্ধেকের কমে নেমে এসেছে। বর্তমানে দৈনিক তিন-চারজন রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছে। ’
কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের সংক্রামক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাহান নাজির বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবির ছেড়ে এডিস মশা এখন ছড়িয়ে পড়েছে কক্সবাজারের গ্রাম-গঞ্জেও। আগে গ্রামে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশার অস্তিত্ব ছিল না। এখন পাওয়া যাচ্ছে। এটা উদ্বেজনক। ’ তিনি মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. মাহফুজুল হকের বরাত দিয়ে জানান, মহেশখালী উপজেলায় ৬৫ জন ও ঈদগাঁও উপজেলায় ৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।
ডা. শাহজাহান জানান, রোহিঙ্গা শিবিরের ঘনবসতিই মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ, বিশেষ করে শিবিরের ত্রিপলে জমে থাকা পানির কারণে সেখানে এডিস মশার প্রজনন বাড়ে বেশি। তবে বর্ষার শেষে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় বর্তমানে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. তোহা ভুঁইয়া বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দেখা দেওয়ায় নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। শিবিরগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা (সিআইসি) থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ও রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে গিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে। শিবিরের যেখানেই জমা পানি আছে, সেখানেই পরিষ্কার করা হয়েছে। ’ তিনি জানান, এ রকম সমন্বয় করে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েই ডেঙ্গু এখন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। কালের কণ্ঠ
পাঠকের মতামত: