ঢাকা,শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারের গোলদিয়ারচর ও চিলখালীর প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘের ও লবণ মাঠ, দুদকের অভিযান শুরু

বিশেষ প্রতিবেদক ::  কক্সবাজার উপকূলে বনভূমি দখল করে প্যারাবন কেটে চিংড়িঘের ও লবণ চাষ কারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। অভিযানের প্রথম দিন ২৬ আগস্ট জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং এলাকায় অভিযানে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান দুদকের একটি টিম। অভিযানের নেতৃত্ব দেন দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর ও উপসহকারী পরিচালক মোঃ রিয়াজুল আলম।

উপসহকারী পরিচালক মোঃ রিয়াজুল আলম জানান, স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বনবিভাগের সাথে নিয়ে দুদকের পক্ষ থেকে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানের সময় উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের মহিলা সদস্য ফরিজা বেগম এর নেতৃত্বে প্রায় ৪০ একর বনভূমি দখল করে প্যারাবন কেটে লবণ মাঠ তৈরি করার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুদকের এ কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকায় বনভূমি দখল করে প্যারাবন কেটে চিংড়িঘের কিংবা লবণ মাঠ তৈরি করা দখলদারদের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পাঠানো এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপকূলীয় এলাকা চকরিয়া উপজেলার ১১ মৌজার ৮ হাজার ৯০৯ দশমিক ৫০ একর জমি চিংড়ি চাষের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। আর অবৈধভাবে চিংড়ি চাষ হচ্ছে ৩ হাজার ১০১ দশমিক ৫৩ একর জমিতে।

গোলদিয়ারচর ও চিলখালীর চর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্যারাবনের বিপুল পরিমাণ গাছ কেটে বেশ কয়েকটি চিংড়িঘের তৈরি করা হয়েছে। ঘের পাহারার জন্য বসানো হয়েছে অন্তত ২০টি ঘর। জানা যায়, ৩০ জন সশস্ত্র লোক দিন-রাত পালাক্রমে পাহারায় থাকে।

কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, গত এক সপ্তাহে কয়েকশ শ্রমিক দুই লাখের বেশি বাইন ও কেওড়া গাছ কেটে ফেলেছেন। গাছগুলো চকরিয়ার বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হয়েছে। চকরিয়া ও কক্সবাজারের কয়েকজন প্রভাবশালী বন নিধনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ছোট গাছ থাকলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়ে বন পরিষ্কার করা হয়। পরে গাছের গোড়া উপড়ে ফেলা হয়। ফলে বনের চিহ্নও অবশিষ্ট থাকে না।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জব্বার (৪০) বলেন, আগে এ প্যারাবনে হরিণ, বানর, বাঁদুড়, সাপ, বকসহ নানা পাখির বিচরণ ছিল। প্যারাবনে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত এলাকার কয়েকশ পরিবার। কিন্তু ঘের মালিকদের কারণে এখন সবই বিলুপ্তির পথে।

তিনি বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েক হাজার একরের প্যারাবনের লক্ষাধিক বাইন ও কেওড়া গাছ কেটে নিলেও বন বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করছে। তারা একটি গাছও উদ্ধার করতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা গোলাম মর্তুজার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে বিভিন্ন ব্যস্ততার কথা বলে সংযোগ কেটে দেন।

স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রমিজ আহমেদ বলেন, চকরিয়ার গোলদিয়ার চর ও চিলখালীর চর এলাকায় পাঁচ লাখেরও বেশি বাইন ও কেওড়া গাছ ছিল। এরই মধ্যে দুই লাখের বেশি গাছ কেটে চিংড়িঘের করায় উপকূলের ১০ লাখ মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অথচ বন বিভাগের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

কক্সবাজার উপকূলীয় প্যারাবন কেটে গড়ে ওঠা চিংড়িঘের নিষিদ্ধ ও দখল করা জমি উদ্ধারের দাবি জানিয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার বনভূমি চিংড়ি চাষের জন্য লিজ না দিতে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনাও রয়েছে।

পাঠকের মতামত: