ফারুক আহমদ, উখিয়া ::
উখিয়ায় যে কোনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন নিয়ে দাতা সংস্থা/আই এনজিও এবং এনজিও সংস্থার ফটোসেশন মাধ্যমে দায়সারাভাবে পালনের অভিযোগ উঠেছে। আর দিবস পালনের বরাদ্দ কৃত মোটা অংকের টাকা লোপাট করছে সংস্কার কর্তা ব্যক্তিরা। এমন প্রতারণামূলক ঘটনায় নানাজনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
৯ মার্চ ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ দিবসটি পালনে ডজন খানেক ইউএন অর্গানাইজেশন, আইএনজিও এবং এনজিও সংস্থাসমূহ উখিয়া উপজেলা পরিষদে ভিড় জমায়।
সংস্থার দায়িত্বরত কর্তারা হাতে ব্যানার নিয়ে যথারীতি উপস্থিত হয়। এদিকে সকাল ১১ টায় উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী ও উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিকারু জামান চৌধুরীসহ সরকারি কর্মকর্তাগণ ও মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের কর্মকর্তা সহ অন্যান্যরা রেলীতে অংশ গ্রহন করার জন্য উপস্থিত হয়। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে রেলিটি শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে অসংখ্য এনজিও সংস্থা ব্যানার নিয়ে ফটোসেশন করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে একের পর এক ব্যানার সংযুক্ত করে ফটোসেশনের পালা শুরু হয়। একই অতিথি একই স্থান এবং একই অংশগ্রহণকারী। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন এনজিও সংস্থা ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে ছবি তোলার জন্য রীতিমত মহোৎসবে নামে।
ইউএনএইচসিআর, ইউ এস এইড, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, রিক, মুক্তি আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল, প্রত্যাশী, সুশীলন ওয়ার্ল্ড ভিশন, অষ্ট্রলিয়া এইড, ইউনিসেফ এসিএফ, বিজিএস, এনজিও ফোরামসহ অর্ধডজন এনজিও সংস্থাসমূহ ব্যানার নিয়ে ছবি তোলা বা ফটো সেশন শুরু করলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ অন্যান্যরা বিব্রত অবস্থায় সম্মুখীন হন। কারণ আই এনজিও এবং এনজিও সংস্থা গুলো কার আগে কে ছবি তুলবে একটি ব্যানারের উপর অপর ব্যানার লাগিয়ে ফটো সেশন করতে গিয়ে রীতিমতো তুলকালাম সৃষ্টি হয়।
এক পর্যায়ে প্রধান অতিথি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী হতাশ কণ্ঠে এনজিওদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা দিবস পালনে ফাঁকি দিচ্ছেন। এভাবে তো হয় না।
এদিকে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে প্রতিটি আইএনজিও এবং এনজিও সংস্থা সমূহ বিশ্ব নারী দিবস পালনে সভা-সেমিনার ও রেলি করার জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ নিয়েছেন। কিন্তু একটা ব্যানার লাগিয়ে একই অতিথি দিয়ে একই স্থানে ফটো সেশনের মাধ্যমে দিবস পালনের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করছে এমন অভিমত নাগরিক সমাজের।
রেলি ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করতে আসা স্কুল শিক্ষার্থী ও মহিলা সমিতির সদস্যরা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন অসংখ্য এনজিও সংস্থা মিলে একটি দিবস পালন করলো, কাউকে একটি গেঞ্জি বা একটি মাথার ক্যাপ দেয়নি। শুধু মাত্র কয়েকজন এনজিও সংস্থার কর্তাব্যক্তির গায়ে গেঞ্জি দেখা গেলেও অন্য কেউ পায়নি। অনেকে অভিযোগ করে বলেন, নামকরা এবং বাঘা বাঘা এনজিও সংস্থা ব্যানার নিয়ে যে ভাবে দিবস উদযাপনের জন্য উপজেলা চত্বরে উপস্থিত হয়েছে কেবল লোক দেখানো। কারণ তাদের যদি আন্তরিকতা বা সদিচ্ছা থাকলে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে এসব দিবস বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালন করা সম্ভব হতো। কিন্তু তা না করে কেন এক জায়গায় এভাবে মহড়া দিয়েছে। এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন দৃশ্য দেখে সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।
সুশীল সমাজের মতে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি দেখো ভালো করলে হয়তো এ ধরনের লোক দেখানো মাধ্যমে এনজিও সংস্থাগুলো দিবস পালনে সুযোগ পেত না। অনেকের প্রশ্ন একটা দিবস পালন করতে কয়টি আইএনজি এবং এনজিও সংস্থা সমূহের সহযোগিতা প্রয়োজন। তা নিয়ে দৃশ্যমান হওয়া উচিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় দিবসটি পালনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় যথারীতি অর্থ বরাদ্দ প্রদান করে থাকে। তাহলে এতসব এনজিও সংস্থা সমূহ কিভাবে সংযুক্ত হলো। আর যদি এনজিও সংস্থা অর্থ দিয়ে দিবস পালন করা হয়, তাহলে অসংখ্য এনজিও সংস্থা প্রয়োজন ছিল কিনা এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে।
এদিকে উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে ও প্রধান অতিথি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শিরিন ইসলাম তার বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এতে এনজিও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ বা নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করছে তা আমি আর কোন উপজেলায় দেখিনি।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এত এনজিও সংস্থা কাজ করার পরও কেন এখনো অত্র এলাকায় নারী নির্যাতন বাল্যবিবাহ বন্ধ হচ্ছে না। নারীর ক্ষমতায়ন হওয়ার কোন দৃশ্যমান নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি অনেক কর্মকর্তা জানান দিবস পালনে এনজিও সমূহকে ইউনিয়ন পর্যায়ে দায়িত্ব বন্টন দিলে বরাদ্দকৃত অর্থের তছরুপ কম হবে এবং তৃণমূল পর্যায়ে লোকজন দিবস সম্পর্কে অবহিত হবার সুযোগ পাবে।
গণমাধ্যম কর্মীরা জানান মূলত এনজিও সমূহ উপজেলা পর্যায়ে এসে ব্যানার টাঙ্গিয়ে ফটোসেশন করতে পারলেই তাদের বরাদ্দকৃত অর্থ জায়েজ করা সম্ভব। তাই আগামীতে ফটোসেশন এর পরিবর্তে ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে এনজিও সংস্থা গুলোকে দিবস পালন বা উদযাপন করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সদিচ্ছা কামনা করেছেন।
পাঠকের মতামত: