ঢাকা,শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

এনজিওদের উপর ক্ষোভ চরমে

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার ::  রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ষড়যন্ত্র এবং রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে উস্কানি দেয়ার কারণে ক্যাম্পে নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থা গুলোর (এনজিও) উপর স্থানীয়দের ক্ষোভ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ২২ আগস্ট এনজিওদের কারণে দ্বিতীয় দফা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভেস্তে যাওয়ার পর তা আরো বেড়েছে। সেই থেকে উখিয়া ও টেকনাফসহ পুরো কক্সবাজার মানুষের এনজিওদের চরম ক্ষুব্ধ হয়েছে। সাামজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানাভাবে এই ক্ষুব্ধতা প্রকাশ পাচ্ছে। সর্বশেষ রোহিঙ্গাদের মাঝে সরবরাহ করার জন্য মুক্তি কর্তৃক তৈরিকৃত বিপুল দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ক্ষুব্ধতার মাত্রা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

স্থানীয়দের ক্ষুব্ধতার তালিকায় শীর্ষ স্থানে রয়েছে জাতিসংঘভুক্ত ইউএনএইসসিআর। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত জাতিসংঘভুক্ত অন্যান্য সংস্থা, আন্তরাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর প্রতি উচ্চ পর্যায়ের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এই নিয়ে গত কয়েকদিন পুরো উখিয়া ও টেকনাফে উত্তাপ দেখা দিয়েছে।

২০১৬ সালে ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও মগদের নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। সব মিলে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় নিয়োজিত হয় জাতিসংঘভুক্ত ইউএনএইসসিআর, রেডক্রিসেন্ট, আইএমও, এমএসএফসহ দেশীসহ মিলে বিশ্বের প্রান্ত থেকে আসা কয়েক’শ এনজিও। এসব এনজিওগুলো জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর টাকা এনে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করেছে। তবে শুরু থেকেই অভিযোগ উঠে রোহিঙ্গা সেবায় যে অর্থ ব্যয় করা হয় তার চেয়ে বেশি অর্থ লোপাট করে এনজিওগুলো। রোহিঙ্গা দেখিয়ে দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা এনে লোপাট করে নিচ্ছে এনজিওগুলো।

অভিযোগ উঠে, এসব লোপাটযজ্ঞ অব্যাহত রাখতে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়াতে ইতিবাচক নয়। শুধু অভিযোগ নয়; এনজিওগুলোর নীতিবাচক ভূমিকায় সেটা দৃশ্যমান হয়ে উঠে। তারা সেই থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে জিইয়ে রাখতে উঠেপড়ে লাগে। এই জন্য স্বদেশে ফিরে যেতে রোহিঙ্গাদের নিরুৎসাহিত করে যাচ্ছে। এনজিওগুলোই রোহিঙ্গাদের মাঝে মিয়ানমারে ফিরে গেলে নির্যাতনের ভয় ঢুকিয়ে দেয়। অন্যদিকে বাংলাদেশে থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার প্রলোভন দেখায়। এতে শুরু থেকেই দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে রোহিঙ্গারা। মুখে ফিরে যাওয়ার কথা বললেও বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ শক্ত অবস্থানে তারা।

এদিকে বাংলাদেশের নানাভাবে চেষ্টা করে দু’দফায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলো। কিন্তু দু’বারই ভেস্তে যায়। রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে অনাগ্রহেই এই আশা জাগানিয়া প্রত্যাবাসন ভেস্তে যায়। এই ভেস্তে যাওয়ার পেছনে এনজিওরাই শতভাগ দায়ী- এমনিট দায়ী সর্বমহলের। প্রত্যাবাসন বিরোধীতা ও ভেস্তে যাওয়ার পেছনে এনজিওগুলো সরাসরি প্রপাগান্ডাও চালিয়েছে।

সচেতন মহল বলছেন, এনজিওদের আস্কারা ও প্রলোভন পেয়ে রোহিঙ্গারা নিজ দেশ ফিরে না যেতেই অনড় অবস্থান নিয়েছে। ক্রমান্বয়ে তাদের এই অবস্থান এখন শতভাগ পোক্ত হয়েছে। বর্তমানে তারা যে মনোভাব দেখাচ্ছে তাতেই তা স্পষ্ট। এর প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতের ইসরাইল-ফিলিস্তিন দশা হওয়ার আশঙ্কা এখন স্থানীয়দের মাঝে চরম ভাবে ভর করেছে। দিনে দিনে রোহিঙ্গারা যেভাবে হিংস্র হয়ে উঠছে তাতে এই শঙ্কাটা বেড়েই চলছে। এর সাথে এনজিওগুলোর প্রত্যাবসন বিরোধী প্রপাগান্ডায় শঙ্কাটা তীব্রতর করছে।

জানা গেছে, প্রত্যাবাসন ঠেকাতে এনজিওগুলো উঠেপড়ে লেগেছে। এই নিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের নিরুৎসাহিত করেই থেমে নেই। উল্টো রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিতে কর্মকান্ড শুরু করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের রোহিঙ্গা বিরোধীতাকে রোহিঙ্গাদের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে হিংস্র করে দেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ। এসব সন্ত্রাসীদের ভারি অস্ত্র যোগান দেয়ারও প্রমাণ মিলেছে। একই সাথে সাধারণ রোহিঙ্গাদেরও নানাভাবে প্রশিক্ষিত ও ‘কৌশলী’ অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। ‘কৌশলী’ অস্ত্র সরবরাহের একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফাঁস হয়ে গেছে। সোমবার রোহিঙ্গাদের সরবরাহের জন্য তৈরি করা বিপুল সংখ্যক দেশীয় অস্ত্র উখিয়া থেকে জব্দ করা হয়েছে। মুক্তি নামে একটি এনজিও ওই অস্ত্র সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে গোপনে এরকম আরো অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। সব মিলে স্থানীয়রা বর্তমানে বেশ আতঙ্কে রয়েছেন। বিশেষ করে উখিয়া ও টেকনাফের মানুষের এখন ‘পরানে পানি নেই’। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের রোহিঙ্গা বিরোধী অবস্থান প্রকট হচ্ছে এবং ঘৃণ্য ভূমিকার জন্য এনজিওগুলোর উপর ক্ষুব্ধতাও চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই চিত্র ফুটে উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে উখিয়া ও টেকনাফের মানুষ মহা বিপদের মুখে। রোহিঙ্গারা যেভাবে ভয়ংকর হয়ে উঠছে তাতে আতঙ্ক দিন দিন বেড়ে চলছে। রোহিঙ্গারা এই হিংস্র হওয়ার পেছনে এনজিওরাই ভূমিকা রেখে চলছে। সময় থাকতেই এনজিওদের লাগাম টানতে হবে। না হয় এমন সময় আসবে একদিন হয়তো আমাদেরকেই পালাতে হবে।’

পাঠকের মতামত: