ঢাকা,শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

এই মহেশখালী সেই মহেশখালী নয়

wwww::: তোফায়েল আহমদ :::

বদলে গেছে সেই মহেশখালী। অন্ততঃ গতকাল রবিবারের (২০ মার্চ ২০১৬) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বদলে যাবার চিত্রটি চোখে পড়েছে। নতুন পৌরসভা মহেশখালী। গতকাল পর্যন্ত মাত্র তিনবারের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বহন করছে পৌরসভাটি। পৌরসভার নির্বাচনের খবরা-খবর সরেজমিন সংগ্রহ করার জন্য গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত টানা ৭ ঘন্টা অবস্থান করেছিলাম সেই নির্বাচনী মাঠে। আমি অবাক হয়েছি, এই দীর্ঘ ৭ ঘন্টা ধরে এরকম নিরব নিস্তব্ধতা কি করে থাকেন দ্বীপের মানুষগুলো ? এ কারনেই বলছি বদলে গেছে।
সেই সকাল ১১ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পৌর এলাকার একে একে ৯টি ভোট কেন্দ্রে সরেজমিন পরিদর্শন করার সুযোগ হয়েছে। কথা হয়েছে অগণিত সংখ্যক দ্বীপের নারী-পুরুষ ভোটারের সাথে। কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. অনুপম সাহা, মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) সফিউল আলম শাকিল সহ আরো একদল সংবাদকর্মী সহকারে দেখা হয়েছে ভোট কেন্দ্রগুলো। নারী-পুরুষের দীর্ঘ ভোটের লাইন দেখেই বুঝতে কষ্ট হয়না-এসব ভোটারগন মনের আনন্দে এসেছেন ভোট কেন্দ্রে।
ঘোনারপাড়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে দেখলাম দীর্ঘ ভোটারের লাইন মাদ্রাসার মাঠ ছাড়িয়ে নেমেছে পানিশূন্য পুকুরের তলদেশে পর্যন্ত। আর সেই মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রটির একটি ঘটনাই কিনা পুরো দিনের চমৎকার একটি নির্বাচনে যেন কালিমা লাগিয়ে দিয়েছে। তাও বিকাল ৩টার পর কেন্দ্রটিতে কাল বৈশাখীর মত করে হানা দেয় দুই মেয়র প্রার্থীর সংঘর্ষেলিপ্ত মানুষগুলো। এরপরেও আরো কয়েকটি কেন্দ্রে ঘটেছে বিচ্ছিন্ন ঘটনাও। তারপরেও আমি ভুলতে পারছি না দ্বীপের মানুষগুলোর এমন করে বদলে যাবার চিত্রটি। কেননা যেখানে ভোট শুরুতেই ফুটাফুটিও শুরু হবার কথা। এমনকি অনেক উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, আশংকা এবং ভয়-ভীতি নিয়ে দ্বীপে গিয়েছিলাম নির্বাচন কভার করতে। কিন্তু দীর্ঘক্ষন ধরে সেই রকম কিছুই না দেখায় আমি জানতে চেয়েছিলাম- আসলে কি আমি মহেশখালী দ্বীপে এসেছি ?
আমার এরকম প্রশ্ন শুনে গোরকঘাটা বাজারের বাসিন্দা অশ্বীনী দেওয়ানজীর পুত্র অমল দেওয়ানজী (৬০) কিন্তু অবাক হননি। তিনি তখন গোরকঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তার সাথে ছিলেন দক্ষিন হিন্দু পাড়ার গুরুদাশ সহ অনেকেই। দুই জনই আমাকে বললেন-পরিবেশ শান্ত দেখে আমার অবাকের বিষয়টি তেমন অমুলক নয়। তবে দিনতো বদলেছে-এটাই ওনারা আমাকে জানান দিচ্ছেন। মানুষ এবার উন্নয়ন চায়। দ্বীপটাকে উন্নয়ন দিয়ে থরে থরে সাঁজাতে চায়। তারা দুইজনই বলেন-মহেশখালী দ্বীপে অনেক রক্ত ঝরেছে। অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে। হাজারে হাজারে রাউন্ড গুলি ফুটানো হয়েছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য।
অমল আর গুরুদাশের কথার রেষ টেনেই বলছি-এই মহেশখালীর অস্ত্রের ঝনঝনানিতে দ্বীপবাসীর ঘুম হারাম ছিল এক সময়। এই মহেশখালীর আরো কত নির্মম-নিষ্ঠুরতার ঘটনা রয়েছে সেটার ফিরিস্তি নাইবা দিলাম। কক্সবাজার জেলার স্বাধীনতার প্রথম শহীদ (শহীদ মোহাম্মদ শরীফ চেয়ারম্যান) এই দ্বীপের বাসিন্দা। তেমনি এই জেলায় একাত্তরের মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের যে একটি মামলা হয়েছে তাও মহেশখালী দ্বীপের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে। এটাও বলতে হয় যে-সেই মামলায় জড়িত পরিবারের উত্তরসুরিদের মধ্যেই গতকালের পৌরসভা নির্বাচনের লড়াইও অনুষ্টিত হয়েছে। তবুও শেষ কথায় আবারো বলি-দিন বদলের পালায় বদলেছে মহেশখালীর সাহসি মানুষগুলো। লেখক-তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজারের জেষ্ট্য সাংবাদিক এবং দৈনিক কালের কন্ঠের জেষ্ট্য প্রতিবেদক।

পাঠকের মতামত: