ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বনাম স্বামীকে ফেরানোর চ্যালেঞ্জ কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে জমে উঠেছে সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা ৮ প্রার্থীর মধ্যে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের জাফর আলম ও বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হাসিনা আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করায় দুই উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ভোট উৎসবের আমেজ। এই আসনে বাকি প্রার্থীর মধ্যে দু-একজন প্রচারণায় থাকলেও তাদের নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই ভোটারদের মাঝে। মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর দিকেই ভোটারদের নজর পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, কক্সবাজার-১ সংসদীয় আসনে নির্বাচনে মূলত তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যে। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপি প্রার্থী হাসিনা আহমেদ ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন। এ সময় তিনি স্বামী সালাহউদ্দিন আহমেদের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে তাকে দেশে ফেরত আনতে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্ত করতে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন।
প্রচারণার সময় হাসিনা আহমেদ ভোটারদের কাছে বলছেন, আপনারা আমার স্বামী সালাহউদ্দিনকে বেশি ভালবাসেন। আপনাদের ভালবাসার কারণেই তিনি বার বার এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর পরিবর্তে আমাকেও আপনারা বিপুল ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করেছেন। আপনারা জানেন, আমার স্বামীকে সরকার গুম করে রেখেছিলেন। পরবর্তীতে তাকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় ফেলে দিয়ে আসেন সরকারের লোকজন। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছেন। তাকে আপনাদের কাছে আসতে দিচ্ছে না বর্তমান সরকার। তাই আপনাদের প্রিয় সালাহউদ্দিনকে আপনাদের মাঝে ফিরে পেতে আবারো ধানের শীষ প্রতীকে আমাকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করুন। একইসঙ্গে মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও সরকার কারাবন্দি করে রেখেছে। তাই আপনাদের কাছে আকুল আবেদন আপনাদের একটি ভোটই মুক্তি দিতে পারে খালেদা জিয়াকে।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক চকরিয়া নিউজকে বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ তাদের অভিভাবক হিসেবে সালাহউদ্দিনকেই মনের মধ্যে প্রোথিত করে রেখেছেন। তাই যখনই সংসদ নির্বাচন হয়েছে তখনই সালাহউদ্দিনকে এমপি নির্বাচিত করেছেন। সালাহউদ্দিনের হাত দিয়েই চকরিয়া-পেকুয়ায় বেশি উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে চকরিয়ার মানুষ সালাহউদ্দিনের বেশি ভক্ত। এ কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সালাহউদ্দিনের পরিবর্তে তার সহধর্মিনী হাসিনা আহমেদকে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত করেছেন। এবারের নির্বাচনেও বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হাসিনা আহমেদকেই আবারো বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত করবেন।
অপরদিকে, আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট মনোনীত জাফর আলমও নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। জাফর আলম যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই জনসমাগম হচ্ছে। তিনি প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে নেমে পড়ছেন ভোটের প্রচারণায়। কনকনে শীতের মধ্যেও ভোটের মাঠে জাফরের পদচারণা থেমে নেই। প্রতিদিন তার ডাক শুনে ঘুম ভাঙছে অনেক পরিবারের। প্রচারণার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন ইউনিয়নে উদ্বোধন করছেন নির্বাচনী কার্যালয়। চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন সভা-সমাবেশ। সামনে যাকেই পাচ্ছেন তাকে জড়িয়ে নিচ্ছেন বুকে। নারীদের কাউকে মা, বোন বলে সম্বোধন করে একটি করে ভোট ভিক্ষা চাচ্ছেন।
প্রচারণার সময় মহাজোট প্রার্থী জাফর আলম ভোটারদের কাছে বলছেন, দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে আমরা আওয়ামী লীগের একজন এমপি পাইনি। চকরিয়ার মানুষের ভোটে বার বার বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় চকরিয়ার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাঘাটের দৃশ্যই বলে দিচ্ছে অতীতে এখানে কী কী উন্নয়ন হয়েছে। তাই উন্নয়নের স্বার্থে এবং চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ যাতে শান্তিতে এবং সহাবস্থানে বসবাস করতে পারে সেজন্য দলমত নির্বিশেষে নৌকায় ভোট দিন। এবার আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হলে চকরিয়া ও পেকুয়ার কোনো গ্রামই অবহেলিত থাকবে না। একটি রাস্তাও মাটির থাকবে না। উন্নয়ন কীভাবে করতে হয় তা আমি দেখিয়ে দেব, শুধু আপনারা আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে এমপি উপহার দিন।
চকরিয়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল হাকিম দুলাল চকরিয়া নিউজকে বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ায় এবার সুযোগ এসেছে দীর্ঘ ৪৫ বছরের পরাজয়ের গ্লানি মোচনে। সেজন্য এবার নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে এমপি উপহার দেওয়ার জন্য বৃহত্তর চকরিয়ার মানুষ উন্মুখ হয়ে রয়েছেন। এবার আমরা তেমন একজন দক্ষ প্রার্থীও পেয়েছি। তাই চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ এবার আর সেই ভুল করবে না বলে মনে করি।
চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম চকরিয়া নিউজকে বলেন, আমি পর পর তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। কিন্তু একবারের জন্যও আমরা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপি পাইনি।
যার কারণে যথাযথ উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল চকরিয়ার মানুষ। তাই এবার আর চকরিয়ার মানুষ সেই ভুল না করে উন্নয়নের স্বার্থে নৌকায় ভোট দেবে। সে জন্য আমরাও মাঠে কাজ করছি।

পাঠকের মতামত: