নিউজ ডেস্ক ::
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী কর্তৃক জাতিগত নিধন শুরুর পর হঠাৎ বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার আগমনে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকসাফে সৃষ্ট মানবিক সংকট এখন পরিবেশগত সংকটে রূপ নিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয়ের নামে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর এলাকার জীববৈচিত্র্য সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়েছে। পাহাড় কাটা ও স্থানীয় বন ও ঝোপঝাড় থেকে প্রতিদিন সংগ্রহ হচ্ছে ৭০০ টন জ্বালানি কাঠ।এভাবে ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ কক্সবাজারে বনভূমি সম্পূর্ণ উজাড় হয়ে যাবে।
জাতিসংঘের ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) একথা জানিয়েছে।
আইএসসিজির জ্বালানি ও পরিবেশ-বিষয়ক টেকনিক্যাল গ্রুপ (ইইটিডব্লিউজি) চলতি সপ্তাহে হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে কক্সবাজারের বনভূমি, জলাভূমি, কৃষি, প্রাণবৈচিত্র্যসহ পরিবেশ ও প্রতিবেশের নানা ক্ষয়ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে।
ইইটিডব্লিউজি বলেছে, রোহিঙ্গারা আসায় কক্সবাজারের লোকসংখ্যা বেড়ে আগের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। সেখানে স্থানীয় অধিবাসী ও শরণার্থী উভয় পক্ষই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং জীবিকার প্রশ্নে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছে। দেখা দিয়েছে পরিবেশগত বিপর্যয়। এখানে-সেখানে বিরাট সংখ্যক মানুষের মল ও আবর্জনা যথাযথভাবে নিষ্কাশন না হওয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ই-কলি ব্যাকটেরিয়া।
পুকুর ও নলকূপগুলোর ৮৬ শতাংশেই এ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়েছে। মলমূত্র মেশায় দূষিত হয়ে পড়েছে রোহিঙ্গা শিবিরের আশপাশের কৃষিজমিও। অনেক জমি এসব বর্জ্যের কারণেই উঁচু হয়ে গেছে। বিপর্যয় আরো বেড়েছে সেচের সংকটের কারণে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা বসতি, রাস্তাঘাট ও চলাফেরার কারণে স্থানীয় জলাধার ও জলাভূমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর; শুকিয়ে গেছে সেচের জন্য খনন করা খাল ও কূপ। ক্যাম্প ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে দুই হাজার হেক্টরের বেশি বনভূমি ও কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে।
জ্বালানির প্রয়োজনে প্রতিদিন উজাড় হচ্ছে চারটি ফুটবল মাঠের সমান পরিসরের বনভূমি। দ্রুত ও ব্যাপক হারে বন উজাড় হওয়ায় জমির জলমগ্নতা আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। এতে মাটির ক্ষয় ও ভূমিধসের পাশাপাশি বেড়েছে জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি।
এছাড়া রান্নার প্রয়োজনে ও বর্জ্য পোড়াতে এখানে-সেখানে আগুন জ্বালানোয় বায়ুদূষণ বাড়ছে নিয়মিত। ১ হাজার ৫০০ হেক্টর এলাকার জীববৈচিত্র্য সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়েছে। হাতি ও অন্যান্য বন্য প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ আবাসভূমিও ধ্বংস হয়ে গেছে। অত্যধিক শিকার ও ক্ষতিকর চর্চার কারণে স্থানীয় মত্স্যসম্পদও হ্রাস পেয়েছে।
পরিবেশ ও প্রতিবেশের এ বিপর্যয়ে কক্সবাজারে প্রাকৃতিক সম্পদ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকার ভিত্তি পুরোপুরি বিলুপ্ত হতে পারে বলে ইইটিডব্লিউজি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। বিষয়টি ঠেকাতে ত্বরিত পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছে গ্রুপটি। প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনর্নির্মাণের আগে জ্বালানি কাঠ নিয়ে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিযোগিতা নিরসনে বিকল্প জ্বালানি জোগানো জরুরি বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
ইইটিডব্লিউজি জানিয়েছে, আগামী ১২ মাসে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় মিলিয়ে মোট এক লাখ পরিবারে এলপিজি চুলা ও সিলিন্ডার বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাহায্য সংস্থাগুলোর একটি জোট এরই মধ্যে কাজটি শুরু করেছে। এছাড়া জ্বালানি কাঠের ওপর চাপ কমাতে উন্নত মানের চুলা, বায়োম্যাস ব্রিকেট ও বায়োগ্যাস বিতরণ করা হবে।
পাঠকের মতামত: