ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

উখিয়ার পথে পথে রোহিঙ্গাদের ত্রাণের মালামাল সামগ্রী

উখিয়া প্রতিনিধি ::

তীব্র শীতে অসহায় জীবনযাপন করছেন কক্সবাজারের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে উখিয়া ও টেকনাফের মানুষ চলমান শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে শীতবস্ত্র পেলেও স্থানীয়রা পাননি। তাদের অভিযোগ, স্থানীয়রা প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র পাচ্ছেন না অথচ রোহিঙ্গারা শীতবস্ত্রসহ অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
ত্রাণে পাওয়া কম্বল বিক্রিজানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন হাটবাজারে প্রতিদিন সন্ধ্যার আগেই রোহিঙ্গাদের কম্বলসহ নানা ত্রাণসামগ্রীর হাট বসছে। আর এগুলো কিনে নিচ্ছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। বিক্রি করছেন স্থানীয়দের কাছে। রোহিঙ্গাদের দাবি, রাখার জায়গা না থাকায় তারা ত্রাণ বিক্রি করে দিচ্ছেন।
তবে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম জানান, নতুন করে ত্রাণ পেতে তারা এমনটি করছে।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে বসবাসরত বাংলাদেশি দিনমজুর জাফর আলম, হেলাল উদ্দিন, বালুখালী এলাকার মফিজ উল্লাহ ও রুবেদা খাতুন অভিযোগ করেন, শীত আসার আগে থেকেই রোহিঙ্গা শীতবস্ত্র পেয়েছে এবং এখনও পাচ্ছে। তারা এত কম্বল পেয়েছে যে এখন তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। অথচ আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষ কম্বল পাচ্ছে না। টাকার অভাবে আমরা কম্বল কিনতেও পারছি না।
মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার পর রোহিঙ্গারা প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৭২ হাজার ৯০০ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এখনও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কম বেশি রোহিঙ্গা আসছে। প্রায় তিন হাজার একর বরাদ্দকৃত বনভূমির ওপর এসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আবাসনের পাশাপাশি খাদ্য, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সহায়তা দিচ্ছে সরকার। একইভাবে দেওয়া হচ্ছে শীতবস্ত্র। কিন্তু, অধিকাংশ রোহিঙ্গা এসব শীতবস্ত্র খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উখিয়ার মরিচ্যা বাজার, সোনারপাড়া বাজার, কোটবাজার, উখিয়া সদর, কুতুপালং বাজার, বালুখালী বাজার, থাইংখালী বাজার, পালংখালী বাজারসহ টেকনাফের বিভিন্ন হাটবাজারে রোহিঙ্গারা বিক্রি করছেন শীতবস্ত্র ও বিভিন্ন প্রকার ত্রাণ। খোলা বাজারে বিক্রি করা ত্রাণের মধ্যে রয়েছে ‘ইউএনএইচসিআর’ এর দেওয়া শীতের কম্বল ও ত্রিপল এবং বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া চাল, ডাল, তেল, চিনি, শিশুদের গুড়া দুধ, চিড়া, সাবানসহ নানা ত্রাণসামগ্রী।
ত্রাণে পাওয়া কম্বল বিক্রি করছে রোহিঙ্গারাউখিয়ার মরিচ্যা বাজারে কবির আহমদ নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী ‘ইউএনএইচসিআর’ এর লোগো সম্বলিত কম্বল বিক্রি করছিলেন। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে কিনে এনে বাজারে বিক্রি করছি।’
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রমিজা খাতুন ও আবুল কালাম জানান, পরিবারের সদস্য সংখ্যা খুবই কম। এত কম্বল দিয়ে কী করবো। তাই স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি। কিছু নগদ টাকা পাচ্ছি।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লালু মাঝি (রোহিঙ্গা সর্দার) জানান, পর্যাপ্ত শীতের কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। বেশি কম্বল পেয়ে রোহিঙ্গারা অন্যখানে বিক্রি করে দিচ্ছে।
তবে কুতুপালংয়ের মধুরছড়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নারী আবেদা খাতুন শীতের কাপড় পাননি বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘তিন ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে আমার পরিবার। স্বামী নেই। কিন্তু, আমি কোনও শীতের কম্বল পাইনি। ক্যাম্পের অন্যান্য পরিবার ৪-৫টি করে কম্বল পেলেও আমাকে দেওয়া হয়নি। আর যাদের বেশি দিয়েছে, তারা দুয়েকটি রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে। আমাদের ক্যাম্পে কেউ বেশি পেয়েছে, আবার কেউ একদমই পায়নি। তাই এই তীব্র শীতে আমি অসহায় হয়ে পড়েছি।’
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান বলেন, ‘আসলে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের বিপুল পরিমাণ ত্রাণ এবং শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু, এসব ত্রাণ ও কম্বল রোহিঙ্গারা অন্যত্র বিক্রি করছে বলে শুনেছি। খুব দ্রুত এসব রোহিঙ্গা ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা মাঠে নামবো।’
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘সরকার এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থা যেসব শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে এর অধিকাংশই খোলা বাজারে বিক্রি করে দিয়ে রোহিঙ্গারা এখন শীতে কাঁপছে, যাতে কোনও সাহায্যকারী সংস্থা গেলে পুনরায় কম্বল নিতে পারে। এসবের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে যাবো।’

পাঠকের মতামত: