রাসেল চৌধুরী :: উখিয়ায় বহুল প্রত্যাশিত চাকরি মেলা নিয়ে নতুন করে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। করণীয় ঠিক করতে জরুরী বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন ক্ষুব্ধ আন্দোলন কারীরা।
চাকরিতে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলনের পর চাকরি মেলা করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। বহু প্রতিক্ষার পর ডাকঢোল পিটিয়ে গতকাল চাকরি মেলার আয়োজন করা হলেও কাক্সিক্ষত কোন সুফল আসেনি। প্রত্যাশার সিকিভাগও পূরণ হয়নি শিক্ষিত বেকার যুবকদের। উল্টো চাকরি মেলার নামে স্থানীয়দের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। যদিও চাকরি মেলা সফল হয়েছে বলে দাবী করেছে জেলা প্রশাসন। মেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার জানান, মেলায় ৫ সহস্রাধিক চাকরি প্রার্থী অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছিল। সেখান থেকে ৩১৮ জনকে চাকরির জন্য মনোনীত করা হয়েছে। তিনি জানান, বাকীদেরও পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেয়া হবে। বৈরী আবহাওয়া সত্বেও চাকরি মেলা শতভাগ সফল হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এডিসি আশরাফুল আফসারের চোখে চাকরি মেলা শতভাগ সফল হলেও চাকরি মেলায় কোন সফলতা দেখছেন না চাকরি প্রত্যাশী শত শত শিক্ষিত ছেলেমেয়ে । বুকভরা আশা নিয়ে চাকরি মেলায় গিয়ে চরমভাবে আশাহত হয়েছেন শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের বড় একটি অংশ। তাদের দাবী, চাকরির নামে তাদের সাথে প্রহসন করা হয়েছে। মেলায় এ, বি, সি ক্যাটাগরির চাকরির জন্য স্থানীয়দের রাখা হয়নি। শুধুমাত্র ভোলান্টিয়ার লেভেলের কিছু ছেলেমেয়ে নেওয়া হয়েছে, যাদের বেতন ১৪/১৫ হাজার টাকার উপরে নয়। রেজিস্ট্রেশনকৃত ছেলেমেয়েদের মধ্যে অনেক যোগ্যতা স¤পূর্ণ চাকরি প্রার্থী রয়েছে, যারা রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যা¤েপ কর্মরত বিভিন্ন এনজিও এবং আইএনজিও-তে নিবার্হী পোষ্টে চাকরি করার মতো দক্ষ ও উপযুক্ত। অথচ প্রশাসনিক ও মর্যাদাপূর্ণ কোন পদে তাদের নেওয়া হয়নি।
অনার্স মাস্টার্স পাস একজন চাকরি প্রার্থী জানান, চাকরি মেলার নামে এটি একটি প্রহসন এবং লোক দেখানো আয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রম, কম বেতন, পছন্দ-অপছন্দসহ নানা কারণে যে সব পদের জন্য চাকরি করার লোক পাওয়া যায় না, মেলা করে সেসব পদে লোক নেওয়া হয়েছে।
অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি, উখিয়ার আহবায়ক শরীফ আজাদ জানান, আন্দোলনের মুখে চাকরি মেলা করতে বাধ্য হয়েছে, এটাই সফলতা। কিন্তু মেলা থেকে কাঙ্খিত ফলাফল আসেনি। তাদের প্রত্যাশারও পূরণ হয়নি। ভোলান্টিয়ার চাকরির জন্য তারা আন্দোলন করেননি জানিয়ে বলেন, উখিয়া-টেকনাফে শত শত যোগ্যতা সম্পূর্ণ দক্ষ ছেলেমেয়ে থাকলেও প্রশাসনিক লেভেলের একটি পদের জন্যও তাদের মনোনীত করা হয়নি। যা নিয়ে সবার মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
উখিয়া হাই স্কুল মাঠে গতকাল শনিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে চাকরি ও দক্ষতা উন্নয়ন মেলা। উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগস্ত এলাকার বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এনজিওতে চাকরি দেওয়ার জন্য এই চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসন আয়োজন করেছে এই চাকরি মেলার। মেলা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক এবং সরকারের অতিরিক্ত সচিব কে এম আবদুস সালাম। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, অতিরিক্ত রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার মোজাম্মেল হক, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ স¤পাদক মুজিবুর রহমান, রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত এনজিওদের সমন্বয় সংস্থা ইন্টারসেকটর কো অর্ডিনেটর গ্রæপ (আইএসসিজি) এর সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর মিস নিকোল এপটিং, উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী ও উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বক্তৃতা করেন।
জেলা প্রশাসক জানান, মেলায় রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত বিভিন্ন এনজিওতে ৩১৮ জন প্রার্থীর চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো তিন হাজার প্রার্থী এনজিওর চাকরির জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন। পরবর্তীতে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম ও কর্মশালায় দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আবেদনকারীদের নিকট থেকেও পর্যায়ক্রমে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
চাকুরি ও দক্ষতা উন্নয়ন মেলায় রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্য¤েপ কর্মরত বিভিন্ন আইএনজিও এবং এনজিওর ৭৩টি স্টল ছিল। এর আগে গত ৪ মে এই চাকুরি ও দক্ষতা উন্নয়ন মেলা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা পিছিয়ে যায়।
পাঠকের মতামত: