★ গুলশান আক্তার ★
সমুদ্র ঘেরা ও পাহাড়বেষ্টিত সীমান্তবর্তী উপজেলা উখিয়া যেখানে রয়েছে মাদকের ভয়াবহতা, মানবপাচার, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অসচেতনতা ও প্রায় ১২ লক্ষ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিক এর চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য -৪ অর্জনে সকলের জন্য ন্যায্যতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে অত্র উপজেলার ৭৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার পরিবার, সমাজ ও সর্বোপরি পৃথিবীতে ইতিবাচক পরিবর্তনের হাতিয়ার হলো শিক্ষা। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায়ও দক্ষ মানব সম্পদ গঠনে মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষার বিকল্প নেই। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং১৯৫৯ সালের শিশু অধিকার ঘোষণায় প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষার গত কয়েক বছরের সাফল্য দৃশ্যমান। শুরুটা হয়েছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। সদ্য স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য জাতির পিতার১৯৭২ সালের সোনার বাংলা গড়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই বাস্তবতায় জাতির জনক দক্ষ সম্পদ গড়ার জন্য গুরুত্ব আরোপ করেন। দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের জন্য হাজার ১৯৭২ সালের সমাজবাস্তবতায় আমাদের অর্থনৈতিকও সামাজিক পরিস্থিতি প্রভৃতি বিষয়কে তার শিক্ষা দর্শন ও শিক্ষা ভাবনা সংবিধানের নির্ধারণ করেন সংবিধানের অনুচ্ছেদ অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয়েছে রাষ্ট্রপতি ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্থান পর্যন্ত সব বালিকাকে ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা দানের জন্য গ্রহণ করেন। তৎকালীন সময়ে শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শনের প্রতিপালিত হয়।
এই ধারাবাহিকতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার ১৯৭৩সালের প্রায় 37 হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের ঘোষণা দেন এর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। জাতির পিতা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন এ দেশের সাধারণ মানুষের সন্তানকে শিক্ষিত করতে না পারলে এদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করা সম্ভব নয়। কিন্তু হাজার১৯৭৫ সালের 15 আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের হাতে জাতির পিতা সপরিবারে শাহাদাত বরণ করেন। যা মানুষের মৌলিক অধিকার ও সর্বোপরি প্রাথমিক শিক্ষার উপর আঘাত নেমে আসে। আবারো১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার প্রাথমিক শিক্ষায় আবারও প্রাণ সঞ্চার হয়।
২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে সাবর্জনীন প্রাথিমক শিক্ঢার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়।
2018 সালের মধ্যে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষা প্রবর্তনের অঙ্গীকার করা হয়েছে এবং সকলের জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে এরই ধারাবাহিকতায় 2013 সালে বর্তমান সরকার প্রায় ২৬হাজার বে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য-৪ অর্জনে বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে গেল।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে দেশে প্রায় এক লক্ষ 26 হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে যেখানে প্রায় দুই কোটি শিশু লেখাপড়া করছে।
প্রাথমিক শিক্ষা হল জীবন গড়ার ভিত্তি। বর্তমান সরকারের দূরদর্শী ও সহসী নেতৃত্বের ফলে গুণগত ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন এর ফলশ্রুতিতে 2015 সালের মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে।
সরকারের দূরদর্শী ও সময়োপযোগী নেতৃত্বের ফলে গুণগত ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমেই 2015 সালের মধ্যে শব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে এবং শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। দেশে সাক্ষরতার হার 75%। মেয়েদের ভর্তির হার 52 শতাংশ। নারী শিক্ষায় বাংলাদেশে এই উপমহাদেশে প্রথম স্থানে এগিয়ে আছে। নারীর ক্ষমতায়নে এবং শিক্ষায় বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে শিক্ষাখাতে।
শিক্ষার্থীদের কোভিটকালীন সময়ে শিখন ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে অনলাইন ক্লাস চালু করা হয়, অভিভাবকদের অনলাইন স ও অফলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে শিশুদের শিখন অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হয়।
কোভিট -১৯ পরবর্তী সময়ে শিখন ঘাটতি পূরণে সকল শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করে দুর্বল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের প্রতি সপ্তাহে শ্রেণীভিত্তিক মহা সমাবেশের মাধ্যমে শিখন ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের বাংলা পঠন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পাঠ্যবই ওগল্পের বই পড়ার মাধ্যমে যুক্তবর্ণ চিহ্নিতকরণ, কমিউনিটি ফোরাম গঠন করা হয় ফলে শিক্ষার্থীরা বাংলা বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হয়। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য ক্ষুদে ডাক্তার দল নিয়ে প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হাত ধোয়ার সুফল সম্পর্কে প্রতি ক্লাসে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাত ধোয়ার অভ্যাস গঠন করা হয়। প্রতিটি বিদ্যালয়ে hand-washing স্টেশন স্থাপন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সহ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে কোভিট -১৯পরবতী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। গরীব শিক্ষার্থীদের মাঝে উপকরন বিতরন এর মাধ্যমে তাদেরকে স্কুলমুখী করা হয়। এসব শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণকে স্থানীয় প্রশাসন ও এনজিও এর সহায়তায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ফলে ঝরে পড়া রোধ হচ্ছে। পিতা-মাতাকে শিশু সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা প্রদানের মাধ্যমে শিশুর বিকাশে সহায়তা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।
ফলে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীতে শিশুর ভর্তি ও শিখন দক্ষতা লক্ষণীয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের বাগান ও কৃষি কাজের দক্ষতা অর্জনের জন্য ক্ষুদে কৃষিবিদ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা নিজের বাড়িতেও স্কুলে বাগান ও সবজি চাষ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। ইতিমধ্যে উপজেলার বিদ্যালয়গুলিতে ও শিক্ষার্থীদের বাড়ীতপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।মেয়ে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় আগ্রহী করার জন্য বিরতির সময় প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রতি ক্লাসে দল গঠন করে বিভিন্ন ধরনের খেলার আয়োজন করা হয়েছে। যা একজন শিক্ষক দ্বারা মনিটরিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ফলে মেয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহী হয়েছে।এতে ঝরে পড়া রোধ হচ্ছে।
এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা পরিবারের সকল সদস্যগণ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে যা সত্যিই অভাবনীয়।
সরকারের দূরদর্শী ও সময়োপযোগী নেতৃত্বের ফলে গুণগত ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমেই 2015 সালের মধ্যে শব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে এবং শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। দেশে সাক্ষরতার হার 75%। মেয়েদের ভর্তির হার 52 শতাংশ। নারী শিক্ষায় বাংলাদেশে এই উপমহাদেশে প্রথম স্থানে এগিয়ে আছে। নারীর ক্ষমতায়নে এবং শিক্ষায় বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে শিক্ষাখাতে। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে গুণগত ও মানসম্মত সার্বজনীন।
জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে গুণগত মান সম্মত সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলা অগ্রযাত্রায় কাজ করে চলেছে। বলতে গেলে প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য ও 29 টি প্রান্তিক যোগ্যতা কথা মাথায় রেখে আবর্তিত হয় উপজেলা শিক্ষা পরিবারের সকল কার্যক্রম।
সকল শিশুর শারীরিক ও মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক ও আবেগিক বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্মবোধে বিজ্ঞানমনস্কতা, সৃজনশীলতা ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করা প্রাথমিক শিক্ষার সাথে জড়িত সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সবার নৈতিক দায়িত্ব।
লেখক
গুলশান আক্তার
উপজেলা শিক্ষা অফিসার
উখিয়া,কক্সবাজার।
পাঠকের মতামত: