নিজস্ব প্রতিবেদক :: কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ হাই স্কুল পয়েণ্টে ঈদগাঁও ( ফুলেশ্বরী) নদীর বেড়িবাঁধ’সহ নদীর জলভাগের অভ্যন্তরে আরো অন্তত ৫ফুট জায়গা দখল করে সিরাজুল হক নামের এক ব্যক্তি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাড়ি নির্মাণ করছেন বলে জানা গেছে।
গত কয়েক মাস পুর্বে বেড়িবাঁধ দখল করে বাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে সচেতন মহলের ব্যাপক আপত্তির মুখে ৬ এপ্রিল ২০২১ তারিখ সদর উপজেলা এসিল্যান্ড দখলকৃত নদীর অংশের উপর নির্মিত স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে ওই স্থানে কোন প্রকার স্থাপনা না করার নিষেধাজ্ঞা জারি করে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয় হয়।
কয়েকদিন চুপ থেকে ওই নদীখেকো দীর্ঘলকডাউনের সুযোগে কিছুদিন না যেতেই বেপরোয়া হয়ে ওই ব্যাক্তি সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফের স্থাপনা নির্মাণ শুরু করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর উপর স্থাপিত বেঁড়িবাধের চারদিকেব টিনের বেড়া দিয়ে ওই স্থানটি ঘিরে ফেলা হয়েছে। চলমান লকডাউনের সুযোগে ইতমধ্যেই পাইলিং,পিলার ঢালাই, বেসমেণ্ট ও দেয়ালতৈরীর কাজ সম্পন্ন করেছেন।
ঈদগাঁও নদীর( উত্তরপাড়) ঈদগাহ হাই স্কুল পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মিত বেড়িবাঁধের উপর থেকে নদীর জলভাগের অভ্যন্তরে ৪-৫ ফুট পর্যন্ত নদী দখল করে অভিযুক্ত ব্যক্তি সিরাজুল হক।
তবে বন্যা থেকে তার বসতবাড়ি রক্ষার জন্য তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি নিয়ে গাইডওয়াল নির্মাণ করছেন দাবি করছেন অভিযুক্ত সিরাজ মাস্টার।
কিন্তু নদী অভ্যন্তরে কেন এ প্রশ্নের জবাবে জনাব সিরাজুল হক বলেন, নদীভাঙ্গনের ফলে তার বসতবাড়ি কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেই কারণে নদীর জলভাগের অভ্যন্তরের সিকস্তি অংশ উদ্ধারের চেষ্টা করছেন তিনি।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন হাইড্রোলজিকাল ইঞ্জিনিয়ার জানান, ঈদগাঁও নদীর উত্তরপাড়ে ঈদগাহ হাই স্কুল পয়েন্টের বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়ীবাঁধের অভ্যন্তরে সীমানাপ্রাচীর করা হলে বর্ষামৌসুমে পাহাড়ী ঢলে ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে ওই অংশটি। এর ফলে নদীভাঙ্গনের ঝুঁকিতে পড়বে ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ হাই স্কুল”সহ পূরো ঈদগাহবাজারের বেশিরভাগ অংশ।
জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম জানান,
ঈদগাহ হাই স্কুলকে ক্রমাগত নদীভাঙ্গনে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা করতে ২০০৭ সালে আমার উদ্যোগে এবং এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মেজর জেনারেল হামিদুল হকের সার্বিক সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ৭৪ লক্ষ্য টাকা ব্যয় করে ব্লক বসিয়ে প্রায় ৫শ ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি নির্মাণ করে। সেখানে এই বেড়িবাঁধ দখল চরম লজ্জার এবং নীতিহীনতার পরিচয় বলে তিনি ধিক্কার জানান।
বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩, ২১ এর (১) ধারায় বলা হয়েছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের স্থায়িত্ব রক্ষার স্বার্থে উহার উপর বা উহার পার্শ্বঢালে কোন ব্যক্তি, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত, কোন প্রকার ঘরবাড়ি, স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণ করিতে পারিবেন না।
এই ধারা লংঘনে ৫ বছর কারাদণ্ড এবং দশ হাজারে টাকার জরিমানা আদায়ের দণ্ড থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দিন দিন এই নদী খালগুলি দূর্বৃত্তের দখল ও দূষণের শিকার হয়ে অস্তিত্বসংকটের মুখে পড়ছে ক্রমাগত।
ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাতের কাছে এই বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ দখল করে সীমানপ্রাচীর নির্মাণ বিষয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বেড়িবাঁধ দখলের এখতিয়ার কারো নেই এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়িবাঁধের কোন অংশ কাউকে ব্যবহার বা দখলের অনুমতি দেয়নি বা দিতে পারেনা। তিনি ঈদগাহ নদীর বেড়িবাঁধ দখলরোধে দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
পাঠকের মতামত: