আনোয়ার হোছাইন. ঈদগাঁও :: কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার অসংখ্য গ্রাম আর রাস্তা ঘাট দুই দিনের অব্যাহত ভারি বৃষ্টি আর উজান থেকে নামা পাহাড়ি দলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানির তোড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে রাস্তা ঘাট।ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো জনগোষ্ঠী।ইতিমধ্যে সরকারি বেসরকারি সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্থ পরিদর্শন করলেও কার্যত এখনো উল্লেখ করার মতো কোন সহযোগিতা কপালে জুটেনি ক্ষতিগ্রস্থদের। সোমবার (২৬ জুলাই) দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বৃষ্টি বিগত দুই দিনেও বন্ধ হয়নি।যার কারণে একদিকে ভারি বৃষ্টির পানি, অপরদিকে উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলের পানি ঈদগাঁও নদীর বেড়িবাঁধ উপচিয়ে ২৭ জুলাই ভোর রাত থেকে লোকালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করে সকাল হতেই ঈদগাঁও উপজেলার প্রধান কেন্দ্রস্থল ঐতিহ্যবাহী ঈদগাঁও বাজার পানিতে নিমজ্জিত হয়।বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পুরো বাজারসহ আশপাশের অসংখ্য গ্রাম।ভাঙ্গন শুরু হয় ঈদগাঁও নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে। ব্যাপক ক্ষতি এড়াতে স্থানীয়রা দিনভর বৃষ্টির মধ্যে ভাঙ্গনরোধের চেষ্টা করতে থাকে। বিগত দুই দিনের বর্ষণ আর ঢলের পানিতে উপজেলাধীন ইউনিয়ন ঈদগাঁও, পোকখালী, ইসলামপুর,ইসলামাবাদ ও জালালাবাদের প্রায় অর্ধশত গ্রাম কম বেশি প্লাবিত হয়েছে। পানিতে নিমজ্জিত হাজারো ঘরবাড়ি। লন্ডভন্ড হয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক ও রাস্তা। ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং জনপ্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করলেও ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যে উল্লেখ করামত কেউ এগিয়ে আসেনি।বরং সবাই শুধু আশ্বাসের বুলি উড়িয়ে ছবি ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিগুলোর আপলোড দিয়ে নিজেকে জনগণের পাশে দাড়িয়েছে বলে নিজের ঢোল নিজে পেটাতে বেশি ব্যাস্ত দেখা যাচ্ছে এসব ফেসবুক সর্বস্বান্ত জনদরদিদের।এর চেয়ে এলাকার কিছু বিত্তবান লোক ও সামাজিক সংগঠন তাদের সাধ্যের মধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে ক্ষতিগ্রস্থরা জানান।টাবা বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় লোকালয়ে প্রবেশ করা পানি এখনো কমে যাওয়ার লক্ষণ চোখে পড়ছেনা।বরং পানি বৃদ্ধি পেয়ে আরো নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এমন কি আজ বুধবার সকালে ঈদগাঁও ইউনিয়নের পাল পাড়ার গরুর হালদা নামক গ্রামীণ রাস্তার ছোট খালে মাছ ধরতে গিয়ে তিন যুবক নিখোঁজ হয়েছে। রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত দমকল কর্মীরা উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঈদগাঁও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও ঘটনাস্থল এলাকার নিকটতম বাসিন্দা সাংবাদিক বিআর হাশেমী বদরু। তবে নিখোঁজ তিন যুবক ঈদগাঁও ইউনিয়নের মধ্যম শিয়া পাাড়ার শাহজাহান প্রকাশ শাইয়ার দুই স্ত্রীর তিন সন্তান বলে প্রাথমিক ভাবে জেনেছেন। তিনি আরো জানান, ঈদগাঁও উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্তিতির চরম অবনতি হচ্ছে। ২৮ জুলাই সকালে ঈদগাঁও উপজেলার সাথে রামু উপজেলার ঈদগড় এবং পার্বত্য নাইক্যংছড়ি উপজেলার বাইশারির সাথে যোগাযোগের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী সড়কের পাহাড়ি জনদের পানের ছড়া নামক সড়কের অংশ ঈদগাঁও নদীর দলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পুর্ন ভেঙ্গে পড়েছে। সড়কের দু,পাশে সকাল থেকে আটকা পড়ে আছে পণ্যবাহী গাড়ি ও পাহাড়ি কাঁচা সবজি- ফলমুল বাহি যান। চরম দুর্ভোগে পড়েছে উক্ত সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী লাখো জনগোষ্ঠী।ঈদগড় সাংবাদিক কামাল শিশির জানান, ঈদগাঁও উপজেলা ও ঈদগাঁও বাজারের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উভয় পাশে যাত্রীবাহী ও পন্যবাহী যানবাহন আটকা পড়েছে।
সবজি বিক্রেতা আবদুল কাইউম জুয়েল জানান, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ঈদগড় বাইশারীর পাহাড়ী এলাকায় উৎপাদিত সবজি ঈদগাঁও বাজারে সরবরাহ করা যাচ্ছেনা।
কলার আড়তদার হামিদ সিকদার বলেন, ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বিকল্প পথে বাইশারী-গর্জনিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু হয়ে কলা পরিবহন করতে হবে। এর ফলে কয়েকগুন বেশী পরিবহন খরচ পড়বে।
ঈদগাঁও-সড়কের সিএনজি বেবিট্যাক্সি চালক পিন্টু বলেন, গত কয়েকবছর ধরে খরস্রোতা ঈদগাঁও নদীর মূল স্রোতধারা সড়কের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ভাঙ্গন প্রতিরোধ অথবা নদী শাসনের কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেল।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা বলেন, এ সড়কটা পার্বত্য চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের আওতাধীন।
খোঁজ খবর নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্হা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কঠোর লকডাউনের কর্মহীন এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতির আশংকা করছে স্থানীয়রা।কারণ ইতিপূর্বে ঈদগড়ে একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও পরে তা প্রত্যাহার করার পর থেকে ঐ জনপদের মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করছে।কারণ দূর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় প্রতিনিয়ত ডাকাতি এবং অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় হল এ জনপদের নিত্তনৈমিত্তিক চিত্র। একদিকে লকডাউনে চারদিকে খাদ্য বস্ত্রের হাহাকার আর বন্যা, অন্য দিকে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ফাঁড়ি প্রত্যাহার,যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন সবকিছু বিবেচনা করে অপরাধী চক্রে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠার সমূহ আশংকা বিরাজ করছে। এ জনপদের বাসিন্দাদের একটাই আকুতি দেশজুড়ে অপহরণ ও ডাকাতি জোন হিসেবে খ্যাত অত্র এলাকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় অতি দ্রুত সড়কটি বিকল্পপন্থায় অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও চালু করার ব্যবস্থা নিক সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। নয়ত অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পৌছার কোন বিকল্প আর রাস্তা নেই। এ সড়ক ও জনপদে ডাকাতি ও অপহরণ করতে গিয়ে পুলিশ,গায়কসহ ডজনাধিক মানুষ ডাকাত ও অপহরণ চক্রের হাতে নির্মম খুনের শিকার হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী নিরাপত্তার স্বার্থে প্রত্যাহারকৃত পুলিশ ফাঁড়ি পুনঃস্থাপনের কিংবা তা তদন্ত কেন্দ্রে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছেন।
পাঠকের মতামত: