ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

আলীকদমে বিয়ে রাতেই যুবকের মৃত্যু, পরিবারের দাবী পরিকল্পিত খুন

 মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ::

 

আলীকদমে বিয়ে রাতেই শশুড় বাড়িতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত

মো. আবদুছ শুক্কুর (২৮) বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আকবর আহাম্মদ পাড়ার খোরশেদ আলমের ছেলে। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের

৪নং ওয়ার্ড দানু সর্দ্দার পাড়ার মৃত মো. হোসেনের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

নিহতের বাবা খোরশেদ আলম প্রতিবেদককে জানান, ২৬ জুন মঙ্গলবার আনুমানিক রাত ৯টায় মেয়ের বাড়ি থেকে তার ছেলে মো. আবদুছ শুক্কুর কে ফোন করে ডাকা হয়। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আমাদের ওয়ার্ড মেম্বার জাকের হোসেন আমার বেয়াই মো. সেলিম কে ফোনে জানান দানু সর্দ্দার পাড়ার মৃত মো. হোসেনের মেয়ে মরিয়ম বেগমের (২৫) বাড়িতে গেলে মেয়ের পরিবারের লোকজন শুক্কুর কে আটক করেছে। তারা জোর পূর্বক মেয়েকে বিবাহ করতে শুক্কুরকে চাপ দেয়। ছেলে বিয়েতে রাজি না হলে মামলার করার হুমকি দেয়া হয়। ২৭ জুন বুধবার সকালে ২ লক্ষ টাকা দেনমোহরে শুক্কুর ও মরিয়মের মধ্যে বিবাহ সম্পন্ন হয়। মরিয়ম আগে বিবাহিত ছিল। তার সেই সংসারে মাসুম বিল্লাহ (৭) ও মাসুমুর রশিদ (৪) নামে দুই ছেলে রয়েছে। ২৮ জুন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমরা জানতে পারি শশুড় বাড়িতে মেয়ের রুমে ফাঁস লাগিয়ে ছেলে আত্মহত্যা করেছে। আমরা দৌড়ে আলীকদম হাসপাতালে গিয়ে শুক্কুরের লাশ দেখতে পাই। আমার ছেলে আত্মহত্যা করেনি, তাকে মরিয়ম সহ তার সঙ্গীয় লোকজন মেরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।

শুক্কুরের বাড়ির এলাকা আকবর আহাম্মদ পাড়ার সর্দ্দার মো. রফিক বলেন, ছেলেটি অত্যান্ত ন¤্র ভদ্র ছিল। সে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। ম্যারিজ সিগারেট কোম্পানীতে সেল্সম্যানের চাকরি করত শুক্কুর।

শুক্কুরের ছোট ভাই মো. ইউনুচ (২৪) বলেন, ২৭ জুন বুধবার সকালে বিয়ের পরে আমার ভাই বাড়িতে আসতে চাইলে মেয়ের পরিবার তাকে আসতে দেয়নি। বুধবার রাতে আমার তালত ভাই রিদোয়ান বন্ধু ২/৩ জনকে নিয়ে শুক্কুরের সাথে দেখা করতে গেলে মেয়ের বাড়ির লোকজন তাদের সাক্ষাৎ করতে দেয়নি। হাসপাতালে প্রাথমিক সুরহাতাল রিপোট তৈরি করার সময় শুক্কুরের অঙ্গ অন্ডকোষে আঘাতের চিহ্ন ও ফুলা ছিল।

চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাকের হোসেন বলেন, মঙ্গলবার রাত ১১টা ১৩ মিনিটে আলীকদম বাসস্টেশন পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াবুল মাস্টার ফোনে জানায় মরিয়মের বাড়িতে শুক্কুরকে আটক করা হয়েছে। আমি ফোনে শুক্কুর ও সেখানের ওয়ার্ড মেম্বার আবু সালামের সাথে কথা বলি। তাকে মারধর না করে সামাজিকভাবে বা আইনীভাবে বিষয়টি মিমাংসা করতে অনুরোধ করি। বৃহস্পতিবার সকালে জানতে পারি মেয়ের বাড়িতে ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে মরিয়ম বেগম (২৫) প্রতিবেদককে বলেন, বুধবার বিবাহের পরে রাতে আমাদের বাসর হয়। ভোর রাত ৪টার দিকে শুক্কুর আমাকে ঘুম থেকে ডেকে দেয় পরিস্কার হওয়ার জন্য। সে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উঠে গোসল করে। ৮টার দিকে বাবুদের স্কুলে দিয়ে আসতে বলে। ডায়রিয়া হওয়ায় সকাল থেকে ৪ বার টয়লেটে যায় শুক্কুর। সাড়ে ৮টার দিকে আমাকে ৩০ টাকা দিয়ে ওষুদ আনতে বলে। আমি আলীকদম হাসপাতালের সামনের কামালের ফার্মেসি হতে ওষুদ কিনে আনি। এসে দেখি ঘরের দরজা বন্ধ। তাড়াতাড়ি দা নিয়ে টিনের বেড়া কাটি। দেখি সে ঘরের ছালের গাছের সাথে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছে। আমি একাই দ্রুত তাকে ফাঁস থেকে নামাই এবং পাশের লোকজনের সহায়তায় টমটমে করে হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।

এই ঘটনাটি ছেলের পরিবার পরিকল্পিত খুন বলে দাবী করেছে। তারা আরো দাবী করেন, আমাদের ছেলেকে খুন করে তার শশুড় বাড়ির লোকজন আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। এই বিষয়ে আলীকদম থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মামলা নং- ০৪, তারিখঃ ২৮ জুন ২০১৮ইং।

অপমৃত্যু মামলার তদন্ত অফিসার আলীকদম থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. আজমগীর বলেন, খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে লাশের প্রাথমিক সুরহাতাল রিপোর্ট শেষে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করি। ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ছেলে বাড়ির এলাকায় তাকে দাফন করা হয়।

পাঠকের মতামত: