ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনে এমপি জাফর আলম

আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার সেই ক্ষমতা জেলা আওয়ামীলীগের নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরীর উপর হামলার অভিযোগে শুক্রবার কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভায় চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার-১) আসনের সাংসদ আলহাজ জাফর আলমকে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে দুইদিন আগে চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটুকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মুলত চকরিয়ার আওয়ামী রাজনীতির দুই নেতাকে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের আওয়ামী রাজনীতি। বিশেষ করে এমপি জাফর আলমকে অব্যাহতি দেয়ার প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলা সদর ছাড়াও বিভিন্নস্থানে দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক এবং জনসাধারণ বিক্ষোভ করেছে।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কর্মকান্ডে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আজ ১১ জুন বিকালে চকরিয়া উপজেলা পেকুয়া উপজেলা মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা এবং চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের যৌথ আয়োজনে চকরিয়া শহরের থানা রাস্তার মাথাস্থ সিস্টেম কমপ্লেক্সে প্রতিবাদ সমাবেশে ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক আবু মুছার সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি চেয়ারম্যান আলহাজ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহাবুদ্দিন মাহমুদ, পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাংগীর আলম, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন হক জেসি চৌধুরী, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক আবু হেনা মোস্তাফা কামাল, সদস্য সচিব আবুল কাশেম, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি মো.ওয়ালিদ মিল্টন, সহসভাপতি বাবু তপন কান্তি দাশ। সমাবেশে চকরিয়া উপজেলা পেকুয়া উপজেলা মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা এবং চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও দলের হাজারো নেতাকর্মী এবং সমর্থক উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে শেষে এমপি জাফর আলমের নেতৃত্বে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া পৌরশহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিকাল পাঁচটার দিকে সিস্টেম কমপ্লেক্সেস্থ বঙ্গবন্ধু কর্ণারে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাংসদ জাফর আলম। ওইসময় সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ অনুরাগ তুলে ধরে বক্তব্য দেন চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাংগীর আলম, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন হক জেসি চৌধুরী, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক আবু হেনা মোস্তাফা কামাল, সদস্য সচিব আবুল কাশেম, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চেয়ারম্যান শওকত ওসমান, নজরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক আবু মুছা, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি মো.ওয়ালিদ মিল্টন, সহসভাপতি বাবু তপন কান্তি দাশ, হারবাংয়ের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান, কোনাখালীর চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার, কৈয়ারবিলের চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেন, টইটং ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, রাজাখালীর চেয়ারম্যান সৈয়দ নুর, চিরিঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জামাল হোসেন চৌধুরী, পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান সোহেল, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগ নেতা লায়ন আলমগীর চৌধুরী প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ জাফর আলম বলেছেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র পদ থেকে প্রার্থী মনোনয়নে তালিকা তৈরীতে তাঁরা লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছে। তাদের মুল কাজ হলো টাকার বিনিময়ে আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সংগঠন থেকে বিতাড়িত করা।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে ছিলাম। নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করেছি। আওয়ামীলীগের রাজনীতি চকরিয়া-পেকুয়ার মাটিতে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। দলের দুর্দিনে আমরাই ছিলাম। কিন্তু তুচ্ছ একটি ঘটনার জেরে নাটক সাজিয়ে জেলা আওয়ামীলীগ আমাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি লিটুকে অব্যাহতি দিয়েছি। তাদের এইধরণের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। চকরিয়া পেকুয়া মাতামুহুরী উপজেলা ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগ এবং দলীয় নেতাকর্মীদের দাবি, এইধরণের সিদ্বান্ত বাতিল করে অবিলম্বে জেলা আওয়ামীলীগকে ক্ষমা চাইতে হবে।

এমপি জাফর আলম অভিযোগ তুলে বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান অতীতে শুধু মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে তা নয়, তিনি সরকারি টাকা আত্মসাতেও জড়িত। কক্সবাজার পৌরসভার নামে পানি শোধানাগার প্রকল্প নির্মাণের নামে সরকারি টাকা আত্মসাত করেছেন। পরে ওই প্রকল্পটি দুর্নীতির ঘটনা ধরা পড়ায় বাতিল করা হয়েছে। তিনি কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগকে ব্যবহার করে লুটপাট আর বাণিজ্যে মেতে উঠেছে।

আর জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিজের এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে পরাজিত হয়ে জামানত হারিয়ে ছিলেন। ওইসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে নির্বাচনী খরচ চালাতে আর্থিক অনুদান দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি ওই টাকায় মার্কেট করেছেন। আর তিনি আওয়ামীলীগ সভাপতি দেশরত্ম শেখ হাসিনার অনুকম্পায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে দলের নিবেদিতপ্রাণ ত্যাগী নেতাকর্মীদের অব্যাহতি দেয়ার নামে আওয়ামীলীগে বিভেদ বিভাজন সৃষ্টি করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামীলীগের উদ্দেশ্যে এমপি জাফর আলম বলেন, আমাকে আওয়ামীলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার ক্ষমতা শুধুমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। কারণ আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আর্দশে শেখ হাসিনার পরীক্ষিত সৈনিক। তাই বলবো, আমাকে অব্যাহতি দেয়ার সেই ক্ষমতা জেলা আওয়ামীলীগের নেই। আমি জেলা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মেয়াদ উর্ত্তীণ কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে বিনীত আবেদন জানাই। এইজন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে আমি ৬দফা দাবি লিখিত আকারে উপস্থাপন করেছি। আশাকরি কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে সুষ্ঠ ও ন্যায় বিচার পাবো।

 

পাঠকের মতামত: