মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং টুনের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী (ফাইল ছবি)
বাংলাট্রিবিউন:
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রাখাইনে সহিংসতা শুরু হওয়ার প্রায় একমাস পর রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার। বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং টুনের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর বৈঠকে মিয়ানমার এ প্রস্তাব দেয়।
এখানে উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে সহিংসতা শুরু হলে মিয়ানমার তিন মাস সময় নিয়েছিল দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবার জন্য। সেবার জানুয়ারি মাসে মিয়ানমার সরকার ‘কেউ টিন’ নামে এক বিশেষ দূতকে কোনও ম্যান্ডেট ছাড়াই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য ঢাকায় পাঠায়।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ থেকে একটি সূত্র জানায়, নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করতে বলা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পাঁচ দফা তার ভাষণে উল্লেখ করেছেন তার ওপর ভিত্তি করে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।
বৈঠকে মিয়ানমারের উপদেষ্টা জানান, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে বসতে চায়।
থেমে নেই মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ঢল (ছবি: ফোকাস বাংলা)সরকারের আরেকটি সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে বসতে রাজি হয়েছে কিন্তু এটি চাপ লঘু করার কৌশল। যেটি এর আগে মিয়ানমার প্রয়োগ করেছে। অক্টোবর পরবর্তী সহিংসতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা বাংলাদেশের সঙ্গে বসতে তিন মাস সময় নিয়েছিলো এবং এমন একজনকে পাঠিয়েছিলো যার কোনও ম্যান্ডেট ছিল না।’
কিন্তু একই ধরনের সহিংস ঘটনা ডিসেম্বরে চীন সীমান্তে হওয়ার দুই দিনের মধ্যে দুইপক্ষের সামরিক বাহিনীর জেনারেল পর্যায়ে বৈঠক হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চাই এবং এজন্য আমরা অবশ্যই বসবো কিন্তু আমরা তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও সজাগ থাকবো।’
এখানে উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করে গত মে মাসে মিয়ানমার সরকারকে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু তারা এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। এর আগেও বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গারা ফেরত গেছে এবং ওই পরিকল্পনায় সচিব বা অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের বৈঠকের কথা বলা আছে যারা পুরোনো পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে নাকি নতুন কোনও উপায় বের করা হবে সেটি নিয়েও আলোচনা করবে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। যুক্তরাজ্য প্রথম থেকেই এ বিষয়ে সোচ্চার ছিল এবং তাদের দেওয়া নোটিশের কারণে দুইবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা বিষয়টি আলোচনা হয়।
বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধান কিভাবে করা যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা করেন এবং ঢাকা এ বিষয়ে লন্ডনের সহায়তা চায়।
জাতিসংঘে রোহিঙ্গা আলোচনা
প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে একাধিক বহুপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে।
এর মধ্যে আছে জাতিসংঘের মহাসচিব এ্যান্টনিও গুটেরেস, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের মধ্যাহ্ন আলোচনা, ওআইসি কনট্যাক্ট গ্রুপের বৈঠক, ইউএনএইচসিআর, আইওএম ও ডব্লিউএফপি’র প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক উল্লেখযোগ্য।
সরকারের একজন কর্মকর্তা জানান, ইউএনএইচসিআর, আইওএম ও ডব্লিউএফপি’র প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে তারা বাংলাদেশে আসার আগ্রহের কথা জানালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়। একই সঙ্গে তাদের অনুরোধ জানানো হয় তারা যেন মিয়ানমারও সফর করে।
তিনি বলেন, ‘ইউএনএইচসিআর এর প্রধান ফিলিপো গ্রান্ডি আগামীকাল শনিবার তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন।’
পাঠকের মতামত: